হোমিওপ্যাথিতে ক্যানসার চিকিৎসার কলাকৌশলঃ
Cancer treatment strategy in homeopathy:
আপনি যদি ক্যানসার আক্রান্ত হন, তবে ভয়ের কোন কারণ নাই। ক্যানসার নয় বরং ভয় পেতে হবে অপ-চিকিৎসাকে। কারণ অপ-চিকিৎসা আপনাকে শারীরিকভাবেও মারবে আর অর্থনৈতিকভাবেও মারবে। এলোপ্যাথিক ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা আপনাকে অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশান ইত্যাদি করার পর দু’বছর পরে যখন আপনি মরতে বসবেন, তখন তারা বলবে, “আল্লাহ্র রহমতে আমরা আপনার আয়ু দুই বছর বাড়াতে পেরেছি”। আসলে তাদের চিকিৎসা গ্রহন না করলেও বরং আপনি আরো দশ বছর বাচঁতেন। এক্ষেত্রে বলা যায়, তারা আপনার আয়ু বরঞ্চ আট বছর কমিয়েছে !!
দুইবার নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী লিনাস পওলিঙ (Linus Pauling, Ph.D) এর মতে, প্রতিদিন বেশী বেশী করে ভিটামিন সি (লেবুর রস) খান (অবশ্যই চিনি-লবন ছাড়া), বছর খানেক পরে দেখবেন আপনার ক্যানসার হ্যারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমেরিকায় গবেষণারত আরেকজন ভারতীয় বিজ্ঞানী (Dr. Batmanghelidj) আবিষ্কার করেছেন যে, কেবল বেশী বেশী পানি খাওয়ার মাধ্যমেই যে-কোন ক্যানসার নির্মূল করা যায়। সাথে তেল-চর্বি-ঘি-মাংস জাতীয় খাবার বর্জনকরুন এবং শাক-সবজি-ফল-মূল জাতীয় খাবার বেশী বেশী করে খান।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাবারের পরিমাণ যথেষ্ট কমাতে হবে। ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে। বেশী বেশী খাওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি করাই হলো ক্যানসারের একটি বড় কারণ। বর্তমানে এই দুই বিজ্ঞানীর কথা মতো কাজ করে পৃথিবীতে অগণিত মানুষ ক্যানসার মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করছেন।
ক্যানসার নির্মূলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক শান্তি বজায় রাখতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘদিন যাবত মানসিক অশান্তিতে ভোগার কারণেই মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং কেবলমাত্র মনের জোরেই মানুষ ক্যানসারমুক্ত হতে পারে। এজন্য মনকে লোভ-লালসা-হিংসা-অহংকার-ভয়-দুঃশ্চিন্তা ইত্যাদি ঝামেলা থেকে মুক্ত করে শিশুদের মতো সরল পবিত্র করুন। আপনার মনকে শান্তিতে রাখার জন্য যিনি মনকে সৃষ্টি করেছেন সারাক্ষণ সেই আল্লাহ্কে স্মরণ করার কাজে নিয়োজিত রাখুন। এখনকার অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মতে, ডায়াবেটিসের চাইতে বরং ক্যানসার নিরাময় করা অনেক সহজ। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ক্যানসার হলো লাইফস্টাইল সংক্রান্ত রোগ।
আর এই কারণেই ক্যানসার থেকে মুক্তি চাইলে আপনাকে লাইফস্টাইল বদলাতে হবে। অন্যথায় শুধু ঔষধ খেয়ে অপারেশন রেডিয়েশন করে ক্যানসার থেকে মুক্তির আশা কম। অতীতে যদি শয়তানী পথে চলে থাকেন, তবে এখন আল্লাহ্র পথে চলে আসুন। অতীতে আপনার মন-মানসিকতা যেমন ছিল, বর্তমানে তাকে একশভাগ পাল্টে ফেলুন। লোভ-হিংসা-অহংকার-ভয়-হতাশা ইত্যাদি মন থেকে দূর করে সেখানে ভালবাসা দিয়ে মনকে ভরে রাখুন। আল্লাহ্কে ভালবাসুন, আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)-কে ভালবাসুন, মানবজাতিকে ভালবাসুন, ফুলকে ভালবাসুন, শিশুদের ভালবাসুন, জীবনকে ভালবাসুন। জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করুন, আশাবাদী হউন, হতাশামুক্ত থাকুন। অতীতে যে ধরনের খাবার খেয়েছেন, বর্তমানে তার বিপরীত ধরনের খাবার খান। অতীতে ভাত-তরকারি-মাছ-গোশত বেশী খেতেন, এখন তার বদলে শাক-সবজি-ফল-মূল বেশী খান। সে-সব খাবার আগুনে পুড়িয়ে রান্না করা ছাড়া খাওয়া যায়, সেগুলো বেশী বেশী খান (যেমন - ফল-ফ্রুট)। কারণ আগুনের তাপে খাবারের ভালভাল দরকারী উপাদানগুলি সব নষ্ট হয়ে যায়। মোটাকথা আপনার নিজেকে যতটা সম্ভব বদলে ফেলুন। সে যাক, হোমিওপ্যাথিতে ক্যানসারের চিকিৎসার ব্যাপারে এই রকম ছোট লেখায় যথাযথ আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই আমাকে সংক্ষেপেই আলোচনা সারতে হবে। মোট কথা, আপনাকে ক্যানসারের চিকিৎসা করলে চলবে না, বরং করতে হবে ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা। সহজ কথায় হোমিওপ্যাথির মূলনীতি “রোগ নয় বরং রোগীর চিকিৎসা কর” অনুযায়ী আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। আসল কথা হলো রোগীর যে ক্যানসার আছে তা আপনাকে ভুলে যেতে হবে। তাহলে আপনি কি করবেন ? হ্যাঁ, ক্যানসার ছাড়া রোগীর আর যত সমস্যা আছে, আপনি সেগুলো বিদায় করার চেষ্টা করবেন। যখন সেগুলো একে একে সব বিদায় হবে, তখন আপনি অবাক হয়ে দেখবেন যে ক্যানসারও বিদায় নিয়েছে !! হোমিওপ্যাথিতে এমন কোন যাদুকরী ঔষধ নাই যে, মাত্র একটা ঔষধেই ক্যানসার সেরে যাবে। আপনাকে লক্ষণ অনুযায়ী আগে-পরে অনেক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। কারণ ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হাঁপানী, যক্ষা প্রভৃতি জটিল রোগের পেছনে অনেক কারণ থাকে এবং সে-সব কারণসমূহ একটা একটা করে দূর করতে আপনাকে একাধিক ঔষধের সাহায্য নিতে হবে। মনে করুন, আপনার ক্যানসার রোগীটি দুর্বল তাহলে তার দুর্বলতা দূর করার ঔষধ দিন, তারপর যদি দেখেন সে বাতের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে তাহলে লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ দিয়ে বাতের চিকিৎসা করুন।
যদি দেখেন সে বদহজমে আক্রান্ত হয়েছে তখন বদহজম দূর করুন, যদি দেখেন সে কোষ্টকাঠিন্য, তার কোষ্টকাঠিন্য দূর করুন, যদি দেখেন সে মেদভূড়িতে আক্রান্ত তবে এমনভাবে ঔষধ নির্বাচন করুন যাতে তার অন্যান্য সমস্যাও ভালো হয় এবং ওজনও কমে আসে। যদি জানতে পারেন যে রোগী অতীতে এক বা একাধিক টিকা নিয়েছে তবে থুজা ঔষধটি অন্যান্য ঔষধের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েক মাত্রা খাওয়ান। যদি জানতে পারেন যে, রোগীর বংশে অর্থাৎ ফ্যামিলিতে ক্যানসার রোগী আছে বা ছিল, তাহলে কারসিনোসিনাম (Carcinosinum) ঔষধটি কয়েক মাত্রা খাওয়ান। যদি দেখেন তার শরীরের কোথাও থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাহলে প্রথমে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করুন, যদি জানতে পারেন যে মানসিক কষ্ট বা বিষন্নতার কারণে রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে, তবে তাকে ইগ্নেশিয়া বা নেট্রাম মিউর (Natrum muriaticum) ঔষধগুলো কিছুদিন খাওয়ান। যদি জানতে পারেন যে শারীরিক আঘাত পাওয়ার কারণে রোগী টিউমার বা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে, তবে তাকে কিছুদিন আর্নিকা (Arnica montana) অথবা আর্টিকা (Urtica urens) ঔষধগুলো খাওয়ান। যদি দেখেন রোগী বমি করতেছে তখন বমি দূর করুন, যদি দেখেন সে গ্যাসট্রিক আলসারে ভুগছে তাহলে গ্যাসট্রিক আলসার দূর করুন, যদি জানতে পারেন রোগী মাদকাসক্ত তাহলে প্রথমে তার মাদকাসক্তি দূর করুন, যদি বুঝতে পারেন যে রোগীর শারীরিক-মানসিক গঠন জন্মগত ভাবে ক্যালকেরিয়া (Calcarea carbonica), ফসফরাস (Phosphorus), সালফার (Sulphur) ইত্যাদি ঔষধের মত, তাহলে তাকে কয়েক মাত্রা ক্যালকেরিয়া, ফসফরাস বা সালফার খাওয়ান। যদি জানতে পারেন যে, রোগী অতীতে গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল তাহলে তাকে কয়েক মাত্রা মেডোরিনাম খাওয়ান। যদি জানতে পারেন যে, রোগী অতীতে সিফিলিসে আক্রান্ত হয়েছিল তাহলে তাকে কয়েক মাত্রা সিফিলিনাম খাওয়ান। যদি জানতে পারেন যে, রোগী অতীতে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিল তাহলে তাকে কয়েক মাত্রা ব্যাসিলিনাম খাওয়ান। যদি দেখেন রোগীর উচ্চ রক্তচাপ তাহলে উচ্চ রক্তচাপ দূর করার চেষ্টা করুন, যদি দেখেন রোগীর হাঁপানি আছে তাহলে হাঁপানি দূর করুন, যদি দেখেন সে হৃদরোগে আক্রান্ত তাহলে তার হৃদরোগ আগে দূর করুন, যদি দেখেন সে কিডনী রোগী তাহলে প্রথমে তার কিডনী রোগ দূর করুন, যদি দেখেন সে মানসিক রোগী তাহলে তার মানসিক রোগের চিকিৎসা করুন । এইভাবে দুই-তিন বছর চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সকল সমস্যা দূর করার পর আপনি আশ্চর্য হয়ে দেখবেন যে রোগীর টিউমার-ক্যানসারও আশ্চর্যজনক ভাবে হাওয়া হয়ে গেছে ! অথচ আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আপনি ক্যানসারের কোন চিকিৎসাই করেন নাই !!!
হ্যাঁ, আমাদের শরীর নিজেই হলো আসল ডাক্তার। হোমিওপ্যাথের কাজ হলো শরীরের অসুবিধাগুলো দূর করার মাধ্যমে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কাজে শক্তি যোগান দেওয়া। অপারেশন এবং এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবনের ফলে ক্যানসার রোগীদের তাড়াতাড়ি মৃত্যুর কারণ হলো এসবের মাধ্যমে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে, ফলে ক্যানসারে মৃত্যুর আগেই রোগী হার্ট ফেল করে মারা যায়। তাছাড়া শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে ক্যানসার আবার ফিরে আসে এবং দ্রুত গতিতে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে হোমিওপ্যাথিক ঔষধে ক্যানসার সহজে সেরে যাওয়ার মূল কারণ হলো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীর শরীরকে দুর্বল করে না। এজন্য একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যে, রোগীর শরীর যেন কিছুতেই দুর্বল না হয়। যখনই দেখবেন যে, একটি ঔষধে রোগীর শরীর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, সাথে সাথেই সেটি বন্ধ করে এমন একটি ঔষধ দিবেন যাতে রোগীর শক্তি - এনার্জি ফিরে আসে। হোমিওপ্যাথিতে ক্যানসারের চিকিৎসায় সফলতা পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ লেভেলের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। অন্ততপক্ষে প্রধান প্রধান একশত হোমিওপ্যাথিক ঔষধের একশান-রিয়েকশান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে।
#Dr.Badrul's
MD NASIR UDDIN
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Habibullah Mullah
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?