মিসরীয় সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। নগর সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিসরীয় লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। প্রথম দিকে তারা ছবি একে মনের ভাব প্রকাশ করত। এই লিখন পদ্ধতি চিত্রলিপি বা হায়ারোগ্লিপিক লিপি নামে পরিচিত ছিল। হায়ারোগ্লিফ শব্দের অর্থ পবিত্র খোদাইকৃত লিপি। মিসরে এসে গ্রিকরা এই লিপির সঙ্গে পরিচিত হয়। হায়ারোগ্লিফিক লিপির প্রচলন ঠিক কবে থেকে তা নিয়ে ভাষাবিদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। অনেক ভাষাবিদের মতে, ফারাও রাজা মেনেসের রাজত্বকালে এই লিপির সূচনা হয়। তাঁদের ভাষ্য, হায়ারোগ্লিফের শুরু সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত লিখন পদ্ধতির পরপরই, আনুমানিক ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। হায়ারোগ্লিফে লেখার পদ্ধতি ছিল যথেষ্ট জটিল। ফলে এটা আসলে সাধারণ মানুষের ভাষা হয়ে ওঠেনি। এ লিখন পদ্ধতিতে ভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০০ প্রতীক ছিল। ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল এ লিপিতে। ছিল না কোনো স্বরবর্ণ কিংবা বিরতিচিহ্ন। এই লিপি লেখা হতো ওপর থেকে নিচে, বাঁ থেকে ডানে বা ডান থেকে বাঁয়ে। আবার কোনো কোনো সময় ডান থেকে শুরু হয়ে পরের লাইনে আবার বাঁ থেকে। আসলে অঙ্কিত মানুষ বা পশু-পাখির মুখ যেদিকে ফেরানো থাকত, সেদিকটা সে লাইনের শুরু বলে ধরে নেওয়া হতো। একই প্রতীক দিয়ে হায়ারোগ্লিফে তিন ধরনের ভাব প্রকাশ করা যেত। প্রতীকে যে প্রাণী বা বস্তুর ছবি থাকত, অনেক সময় হয়তো সরাসরি সেটাই বোঝাত। কখনো বোঝাত সেই প্রতীকের উচ্চারণ। আবার অন্য একটি প্রতীক কী অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই ব্যাখ্যার জন্যও এটি ব্যবহৃত হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জটিল ও কারুকার্যময় এই লিপি বিবর্তিত হতে থাকে। তাতে প্রতীকগুলো সরল আর সহজে লেখার উপযোগী হয়। তখন সেটি নতুন এক লিখন পদ্ধতিতে পরিণত হয়। যাকে বলা হতো যাজকীয় লিপি বা হায়েরাটিক লিপি। একসময় এই লিপিও পরিবর্তিত হয়ে আরেকটি ডেমোটিক লিপিতে পরিণত হয়। তা হাতে লেখা লিপির আদলে চলে আসে। তাই এটি লেখা যায় আগের চেয়ে সহজে ও দ্রুত।
Procurar
popularne posty





