বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে নিয়ে যে কয়টা মিথ্যাচার গুজব প্রচলিত আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গুজব হলো " রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ' মূর্খের দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়? এরা তো চাষাভুষা! " শুধু তাই না, তিনি ইংরেজদের পরামর্শ ও দিয়েছিলেন যাতে পূর্ববঙ্গে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না গড়া হয়!
আরো যেসব গুজব ছড়িয়ে আছে তা হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিতালয়ে নিয়মিত যেতেন, উনার চরিত্র ছিলো কলুষিত, তার পিতা এবং প্রপিতামহরা প্রজাদের খুব অত্যাচার করতেন ব্লা ব্লা ব্লা! -- এইগুলো যে অপপ্রচার তা বুঝতে বেশি বেগ পাওয়ার কথা না অবশ্য, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিলেন তা অনেক শিক্ষিত সুধী ও খাচ্ছে দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না।
আসুন দেখি এর সত্যতা কতটুকু!
তার আগে বলে রাখি, এই বিষয়ে পুরোপুরি জানতে চাইলে জানতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং তৎকালীন ভারতবর্ষের তথা বঙ্গের রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং রবীন্দ্রনাথের সে সব বিষয়ে অবদান সম্পর্কে!
শুরু করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে--
১৯০৫ সালের অক্টোবর ১৬ বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন ‘পূর্ব বাংলা’ ও ‘আসাম’ প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার সবচেয়ে উন্নতি ঘটে। কিন্তু ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বঙ্গে শিক্ষার যে জোয়ার এসেছিল, তাতে অচিরেই ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর। ১৮৫৭ সালে ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং 'দ্য অ্যাক্ট অফ ইনকরপোরেশন' পাশ করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল কোলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে থেকেই ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ইউরোপিয় মডেলে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯টি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় নয়টি। তবে সেটাই পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ।
১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন। ১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫ টি সাবকমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রুপরেখা স্থির করে। ভারত সচিব ১৯১৩ সালে নাথান কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন দেন।
কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিশনের উপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু, ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহঅধ্যক্ষ ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ন স্বাধীনতা দাবি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা শহরের কলেজ গুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটরুপে গন্য করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অওতাভুক্ত এলাকায় গন্য করার কথাও বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তেরটি সুপারিশ করেছিল, এবং কিছু রদবদল সহ তা ১৯২০ সালের ভারতীয় আইন সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি. জে. হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবের কার্যক্রম শুরু করে।
এই বার আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যেসব প্রতিবন্ধকতা আসে এবং যারা বিরোধিতা করে সেগুলো নিয়েঃ
ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাশবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কি মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন? শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তার আত্মস্মৃতিতে স্যার আশুতোষের বিরোধের কারন হিসেবে লিখেছিলেন, " ১৯১৯ সালের নতুন আইন অনুসারে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র শিক্ষকদের বেতন কমানোর নির্দেশ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্ঠার সময় রিজার্ভ ফান্ডে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ছিল। বাংলা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত সরকারি ভবন বাবদ সেগুলো কেটে নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবছর মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ফলে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতে হয়। আর তাই তিনি চেয়েছিলেন সে বৈষম্য যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে! "
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ নানাপ্রকার প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্দ্যেগের হাল ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন।
এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে।
কারা বিরোধিতা করেছিলেন?
কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ' নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন-
এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।
দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে।
পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারী বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি।
তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
অর্থাৎ উপরের ঘটনা প্রবাহ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবেন কোথাও রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করা বা পূর্ববঙ্গের মানুষ নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করার বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা ও নেই! উলটো পশ্চিম বঙ্গের কিছু মুসলিমদের বিরোধিতা করার ও প্রমাণ পাওয়া যায়!
তার উপর রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতাই করতেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের মাথায় ( ১৯২৬ সালে) উনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করা হতো না!
এবং ১৯৩৬ সালে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি দেয়া হতো না!
তারপর ও কিছু ঐতিহাসিকের এই সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরছি
সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "শ্রেণীস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"।
আবার যারা রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি বলেছেন তাঁরা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন " কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না। ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলাতযাত্রার কথা ছিল। তাঁর সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তাঁর মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়।
আবার সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন,
" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণীর মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাঁদের সাথে বিশেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক,আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও।এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোন স্পষ্ট তথ্য বা দালিলিক প্রমাণ নেই"।
শুধু তাই না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে যেভাবে ইংরেজ দের দোসর হিসেবে প্রচার করা হয়, সেখানে ও আছে প্রচুর মিথ্যাচার!
অন্তত জানা ইতিহাস থেকেই তা তুলে ধরছিঃ
রবীন্দ্রনাথ তার জীবনস্মৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন, " তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ বাংলাভাষাভাষীদের কাছ থেকে ইংরেজীতে চিঠি পেলে ফেরত পাঠিয়ে দিতেন না পড়ে।
তাদের বাড়ীতে বৃটিশের অনুরাগীদের সমাদর ছিল না। তার মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সরকারী চাকুরী করলেও ইংরেজিয়ানায় ভাসেন নি।
রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে সকলের সাথে রাস্তায় নেমেছিলেন। সে সময়ে তার রচিত গানগুলি সবই ছিল দেশপ্রেম ও বিদ্রোহের গান এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেগুলিই আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছিল।
১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের পর তিনি নাইট উপাধি বর্জন করেন। ইংরেজের সাথে কোনদিন রবীন্দ্রনাথের সখ্য ছিল না। রবীন্দ্রনাথের খ্যাতির কারণে তাকে বৃটিশ খাতির করতে বাধ্য হত।
সুতরাং উপরের সব তথ্য উপাত্ত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বুঝা যায় সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা বা অনুমান থেকেই রবীন্দ্রনাথ কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধী বা বাংলাদেশ বিরোধী ট্যাগ দেয়া হয় সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে!
এর আরেকটা কারন হচ্ছে পাকিস্তান পন্থী উগ্রবাদী বাংলাদেশ স্বাধীনতা বিরোধী প্রজন্ম! কারণ এরা কখনোই মানতে পারে না রবীন্দ্রনাথের লেখা " আমার সোনার বাংলা ' -- জাতীয় সঙ্গীত!
আর তাই তারা উচ্চশিক্ষিত মানুষ দের বিভ্রান্ত করতে ইতিহাস বিকৃতির আশ্রয় নেয় আর কম শিক্ষিত ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ দের ' জাতিয় সংগীত হিন্দুর লেখা, তাই হারাম ফতোয়া ঢুকিয়ে দেয়'!
ধন্যবাদ
Suche
Beliebte Beiträge
-
বউ শাশুড়ীর একটি শিক্ষনীয় গল্প
Durch Muhammad Rakibul Islam -
কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা)
Durch Muhammad Rakibul Islam -
কাজী নজরুলের চার বছরের সন্তানের মৃত্যুর করুন কাহিনী
Durch Samia Shejuti -
Exploring Generative AI in Software Development: Opportunities & Risks
Durch kanhasoft llp -
Probiotics Market Size, Share, Development, Trends, Segments and Forecast 2033
Durch Univ Datos
Kategorien





