মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যা আছে দেখার

Comments · 371 Views

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপনের ইতিহাস নব্বই দশকের ইতিহাস হলেও আধুনিক ও সুবিশাল গ্যালারি সমৃদ্ধ এখনকার জাদুঘরে

 

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৭ সালের ১৬ই এপ্রিল জাদুঘরের নতুন ভবনের উদ্বোধন কাজ সম্পন্ন হয়।

এখানে আলাদাভাবে ৪টি গ্যালারি রয়েছে। তবে ২৫ জানুয়ারি ৫নং গ্যালারি উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি থেকে দর্শনার্থীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।jagonews24

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যত্ন করে সংরক্ষণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত সব উপাদান ও ঐতিহ্য। ঝকঝকে গ্যালারিগুলোতে সেই যুগের ইতিবৃত্তের সমাহার ঘটে সারি সারি।

অগণিত নমুনা আর ছবির সংগ্রহশালা এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। স্বগর্বে জানান দিয়ে যাচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও তার আগে পরের কথা।

jagonews24

গ্যালারী-০১

জীবাশ্ম- মধূপুরগড়, লালমাই, সিলেট ও চট্টগ্রামে এ ফসিল পাওয়া যেত। ফসিল দিয়ে কুঠার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করতো।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পত্রপত্রিকার আর্কাইভ।
বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী প্রচারণার চিত্র ও নির্বাচনী ব্যালট।
সার্জেন্ট জহুরুল হকের আঁকা তৈলচিত্র ও তার রং তুলি।
২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ এ জয়নুলের আঁকা ব্যানার।
বঙ্গবন্ধুর কোট ও পাঞ্জাবি।
তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সফর, বৈঠক, নির্বাচনী প্রচারণা ও বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনকালের স্থিরচিত্র।
বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর, তামাক পানের পাইপ ও কলম।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার প্রদত্ত সেসময়কার কারাগারের তালাচাবি ও হারিকেন।
কারাগারে মুনির চৌধুরীর দিনপঞ্জি, চট্রগ্রাম ও ফরিদপুর কারাগারে থাকাকালীন কলকাতায় ছবি বসুকে লেখা শহীদুল্লাহ কায়সারের চিঠি।
ভাষা আন্দোলনের নারী রাজবন্দী- মমতাজ বেগম, সুফিয়া আহমেদ, হালিমা খাতুন, মোসলেমা খাতুন ও রওসন আরা বাচ্চুর স্মৃতি।
ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদ সত্যেন সেনের কারাগারে থাকাবস্থায় বিভিন্ন চিঠি।
সেলিনা বানুর স্মৃতি, যিনি ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। ১৯৫৭ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ১২। ২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫৩ সালে ইডেন কলেজের ছাত্রীদের কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার নির্মানের দৃশ্য

jagonews24
নিউ ভ্যালুস ও সীমান্ত নামক দুটো সাময়িকী। যা ছিলো অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনার বাহক।
১৯৪৬ সালের বাংলা অঞ্চলের মানচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত কৃষক সংগ্রামের চিত্র
হিন্দু মুসলমান সম্প্রতি রক্ষায় ১৯৪৭ সালের আগষ্টে কলকাতায় অনশনরত মহাত্মাগান্ধী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছবি৷ সেসময় দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৩ সালের দূর্ভিক্ষের নানা চিত্র।
বন্ধু হাবিবুল্লাহ বাহারকে লেখা চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত যুববিদ্রোহের অন্যতম নায়ক অনন্ত সিংহের চিঠি ও বিদ্রোহে শহীদ-দের মরদেহের ছবি।
ঢাকাই মসলিন শাড়ি সবিশেষ অস্তিত্ব।
নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা পোড়ামাটির ফলক ও টেরাকোটা ইত্যাদি।

গ্যালারি-০২

আলোকচিত্রী শুক্কুর মিয়ার ব্যবহৃত লুবিটেল ২ ক্যামেরা।
জয়দেবপুর প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল ও গুলি।
পাওয়া যাবে ৭ই মার্চ সন্ধ্যায় আওয়ামিলীগ প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের রেকর্ড। রেডিও থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সম্প্রচার বন্ধ করে দিলে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য এম আবুল খায়ের তার প্রতিষ্ঠান ঢাকা রেকর্ড থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অডিও রেকর্ড তৈরির ব্যবস্থা নেন।
অন্ধকার প্রকোষ্ঠের ভেতর স্থান পেয়েছে পাক হানাদারদের গুলিতে নিহত হওয়া অজস্র মরদেহের ছবি।
কবি সুফিয়া কামালের ডায়েরি, ২৭ মার্চ, ১৯৭১ রাত ১০টা।
বান্দরবানে পাক হানাদার প্রতিহত করতে ইপিআরের তৈরি বর্শা, জয়পুরহাটের আদিবাসীদের তীর-ধনুক ও বরিশালে স্থানীয় জনসাধারণের ব্যবহৃত ঢাল ও বর্শা।
১৯৭১ সালে এপ্রিলে কুষ্টিয়ায় যুদ্ধের একটি ভিডিও প্রতিবেদন। এটি বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা একজন বিদেশি সাংবাদিকের প্রতিবেদন। যেখানে পাক হানাদারদের আকাশপথে আক্রমণের সুস্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে
সে সময়কার বুদ্ধিজীবী, লেখক, সেনা যেমন- লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মামুন মাহমুদ, কবি মেহেরুন্নেসা, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মশিউর রহমান, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, লে. কর্নেল আব্দুল কাদির, শাহ আবদুল মাজিদ, মধুসূদন দে, ড.জুকারুল হক, প্রহ্লাদ সাহা, রণজিৎ দে, আব্দুল মুকতাদির, হরিনাথ দে, নতুন চন্দ্র সিংহ, রনদা প্রসাদ সাহা,ভবানী প্রসাদ সাহার-স্মৃতিবিজড়িত নানা ব্যবহার্য বস্তুর সমাহার।
বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধে ভারতীয় পার্লামেন্টের আবেদন, পাক-প্রেসিডেন্টকে প্রেরিত সোভিয়েত নেতা নিকোলাই পোগর্নির চিঠি ও বাংলাদেশের গণহত্যা বিষয়ে মার্কিন কনসাল আর্চার কে. ব্লাডের টেলিগ্রামপর প্রতিলিপি।
২রা এপ্রিল বাংলাদেশের ৩৫ জন জনপ্রতিনিধি জাতিসংঘের মহাসচিব উ.থান্ট এর কাছে গণহত্যা বন্ধের জন্য যে আবেদন করে।

jagonews24

ওই আবেদনের জন্য যে টাইপরাইটারটি ব্যবহৃত হয়েছিলো সেটি স্থান পেয়েছে।
জাতীয় ৪ নেতার ব্যবহৃত কোট, লাইটার, চশমা ইত্যাদি গ্যালারি ২ এ দেখতে পাবেন।

গ্যালারি-০৩

শরনার্থী শিবিরের দূর্দশার প্রামানিক চিত্র ও স্থিরচিত্র।
শরনার্থী শিবিরে কম্বল বিতরণ, কার্ড, রেজিস্ট্রেশন ও বুকলেট এর মূল নমুনা। পাকিস্তানিদের ব্যবহৃত থালা, ক্যাপ, পানির ফ্লাক্স।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন চিত্র।
শহীদ আলতাফ মাহমুদের ইলেকট্রিক শেভিং মেশিন, সংবাদপত্রের রিপোর্ট, শহীদ মাগফার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আজাদের গুলিবিদ্ধ বই ও চিঠি, ফয়জুর রহমানের চিঠি ও যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কিত বই।
মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান এর ব্যবহৃত ইউনিফর্ম, মুক্তিযোদ্ধা দিদারুল আলমের ব্যবহৃত লুঙ্গি ও তোয়ালে।
মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বাসন-কোসন।
শহীদ আমিনুল ইসলামের স্কেচ ও শামসুল রহমান এর ডায়েরি।
ডা. ফজলে রাব্বির মুক্তিযোদ্ধাদের বহন করা গাড়ি।

গ্যালারি-০৫

চিথলিয়া রেললাইনের নামফলক ও রেললাইন এর খণ্ডাংশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রদত্ত বিলোনিয়া যুদ্ধের মডেল। এটি ২০১৭ সালের ৫ই মার্চ সেনাবাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে প্রদান করে।
১৭ই আগষ্টে কিশোরগঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৪ নারীর ছবি। যাদের ১২ দিন আটক রেখে নানা শারীরিক নির্যাতন চালায় পাকিস্তানিরা। পরবর্তীতে অবশ্য তারা আর ফিরে আসেননি। হদিস মিলেনি তাদের
সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সম্পাদিত পত্রিকা শিলালিপির একটি সংখ্যা

jagonews24

জাদুঘরে কেন যাবেন?

জাদুঘর জাতীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জাদুঘরে কেন যাবেন সে কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘জাদুঘর আমাদের জ্ঞান দান করে, শক্তি যোগায়, আমাদের চেতনা জাগ্রত করে, মনোজগতকে সমৃদ্ধ করে ‘

‘জাদুঘর শুধু জ্ঞানই ছড়িয়ে দেয় না, অলক্ষ্যে ছড়িয়ে দেয় ভাবাদর্শ। জাদুঘর আমাদের আনন্দ দেয়। মানুষের অনন্ত উদ্ভাবন নৈপুণ্যে, তার নিরলস সৃষ্টি ক্ষমতা, তার তন্বিষ্ঠ সৌন্দর্য সাধনা, তার নিজেকে বারংবার অতিক্রম করার প্রয়াস। এসবের সাথে পরিচিত হয়ে আমরা অশেষ আহ্লাদীত হই ‘

Comments

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন