জন্মের সময় কেউই সভ্য-অসভ্য, মূর্খ-জ্ঞানী, ভালোমন্দ নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নিয়ে জন্ম নেয় না। পরিবেশ পরিস্থিতির প্রভাবে আস্তে আস্তে সভ্য-অসভ্য, সাহসী-ভিরু, ভালোমানুষ-মন্দ মানুষ, স্মার্ট-ক্ষ্যাত, মূর্খ জ্ঞানী ইত্যাদি চরিত্রের অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। বলা যায়, এটা প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক রীতি বা সূত্র।
প্রকৃতির এই সূত্রেমতে অসভ্য সমাজে বেড়ে ওঠা শিশুটি'র অসভ্য হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। আর অসভ্যের কর্ম - অসভ্যতা। অতএব অসভ্যের কর্ম নিয়ে ত্যানা প্যাচানোর কোনো মানে নেই। বরং তাকে(অসভ্যকে) কিভাবে সভ্যতার সংস্পর্শে নিয়ে আসা যায়, সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো চেস্টা করা উচিত।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সভ্য মানুষজন পাশের অসভ্য, মূর্খ মানুষটাকে সভ্যতা শেখানোর চেস্টা না করে সচেতনে এড়িয়ে চলেন। অসভ্য, মূর্খদের এড়িয়ে চলাই তো আমাদের সভ্যসমাজের সভ্যতা। আর যেহেতু
গ্রামে শিক্ষিত সভ্য মানুষজনের সংখ্যা এবং আয়ের উৎস কম তাই শিক্ষিত, সভ্যমানুষজন গ্রাম ছেড়ে প্রথমে শহরে পালিয়ে যান। তারপর টাকাপয়সা কিছু ইনকাম টিনকাম করে শহর থেকে.... পালান সভ্যতার দেশে। এবং সুদূর প্রবাসে বসে বসে 'বাঙ্গালি জাতিকে' অসভ্য, মূর্খ্য, বর্বর বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন।
সভ্যবাঙ্গালীরা দরিদ্র, অশিক্ষিত বাঙ্গালিদের শিক্ষা, সভ্যতা শেখানোর প্রয়োজনবোধ করেন না। ফলে আমাদের গ্রাম থেকে, দেশ থেকে দারিদ্র্যতা, মূর্খতা বা অসভ্যতা দূর হয় না।
(কারণে অকারণে বাঙালি জাতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা মাত্রাতিরিক্ত সভ্যবাঙ্গালিদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তথাকথিত এইসব সভ্যদের সভ্যতা, শিক্ষা, দেশপ্রেমে আমার সন্দেহ হয়।)
গ্রামের মানুষদের সুশিক্ষা, উন্নয়ন নিয়ে আমাদের দুষ্ট রাজনীতিবিদদের খুব একটা ভাবতে দেখা যায়না। তার প্রথম কারণ, হতে পারে- তাদের অযোগ্যতা। সঠিক, বোধবুদ্ধি অভাবে তারা গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে ভাববার প্রয়োজন অনুভব করেননি/ করছেন না।
দ্বিতীয় কারণ, হতে পারে, তারা জেনে বুঝেই দিনের পর দিন গ্রামীণ মানুষকে শিক্ষার আলো থেকে দূরে রাখবার চেস্টা করেছেন।
বড়বড় কলকারখানা, অফিস আদালত.... সবকিছু শহরে রেখেছেন; যাতে শিক্ষিত মানুষজন বাধ্য হয়েই গ্রাম ছেড়ে শহরে যায়। এবং শহর থেকে...
'সভ্য-শিক্ষিত-উন্নত জাতি' গড়তে হলে আমাদের টার্গেট করতে হবে কোমলমতি শিশুদের। সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করাতে বাধ্য করতে হবে। অসভ্য পরিবেশে বা অসভ্য সমাজে জন্ম নেওয়া শিশুটাকেও প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সভ্য, সুন্দর পরিবেশে রাখবার ব্যবস্থা করাতে হবে। সুশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করাতে হবে। প্রাইমারী লেভেলের সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা আরো আরো উন্নত করাতে হবে। শিশুরা যাতে ক্লাসের পড়া নিয়মিত ক্লাসেই শিখে নিতে পারে সেটা নিশ্চিত করাতে হবে।
গতবছর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদ অনুযায়ী শিক্ষাখাতে বাংলাদেশ জিডিপির মাত্র ২শতাংশ ব্যয় করে। যা পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটানের চাইতেও কম। সুতরাং শিক্ষাখাতে বাজেট আরো কয়েকগুণ বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি দেশের প্রশাসনিক ক্ষমতা ও উন্নয়ন পরিকল্পনার (জাতীয় বাজেট) বিকেন্দ্রীকরণ করার উপর জোর দিতে হবে। এবং বাজেট প্রণয়নের পূর্বে স্থানীয় সরকার যাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামতের গুরুত্ব দেয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবেনা। উন্নয়নের নাম ভাঙ্গিয়ে চোরের দল (নেতা, আমলাকামলা) পালাক্রমে দেশটাকে লুটেপুটে খাবে।
Suche
Beliebte Beiträge
-
বউ শাশুড়ীর একটি শিক্ষনীয় গল্প
Durch Muhammad Rakibul Islam -
কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা)
Durch Muhammad Rakibul Islam -
কাজী নজরুলের চার বছরের সন্তানের মৃত্যুর করুন কাহিনী
Durch Samia Shejuti -
Exploring Generative AI in Software Development: Opportunities & Risks
Durch kanhasoft llp -
Probiotics Market Size, Share, Development, Trends, Segments and Forecast 2033
Durch Univ Datos
Kategorien





