আশেপাশের সবাই হা করে তাকিয়ে থাকল। ছেলেটার মা খোকা বলে চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে মাঠিতে পড়ে গেল।চাকার নীচে পড়ে তার মাথাটা একদম থেঁতলে গিয়েছে। দেখে মনেহচ্ছে কোন একটা মাঝারী সাইজের তরমুজ চাকার নীচে পৃষ্ট হয়েছে।কিছু লোক ছেলেটার মা কে ধরাধরি করে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে নিয়ে গেল। আর কিছু লোক রাস্তার উপর পড়ে থাকা লাশটার উপর একটা বড় কাপর দিয়ে ডেকে দিয়েছে।এবং দু পাশের গাড়িগুলোকে যাওয়ার রাস্তা করেদিচ্ছে।গাড়ি গুলো আস্তে আস্তে লশটার পাশদিয়ে যাচ্ছে, আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট মাংসের টুকরো গুলো চাকার নিয়ে পড়ে রাস্তার সাথে মিশে গেছে।ভেতরে থাকা প্যাসেঞ্জার গুলো কৌতুহলী হয়ে লাশটার দিকে তাকাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসেছেকয়েক জন ঘটনাস্থল ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করতেছে আর এক জন পুলিশ থকে পুর ঘটনা টা কীভাবে হয়েছে তা আশেপাশের মানুষ গুলো থেকে জানার চেষ্টা করতেছে।সবকিছু করার পর লাশটাকে এম্বুলেন্স-এ করে নিয়ে গেল।
বৃষ্টি হচ্ছে খুব ভাল ভাবেই হচ্ছে,ভেজবার ভয়ে সবাই সরে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ছেলেটার রক্ত ধুয়ে যাচ্ছে একটু পর জায়গাটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার লেশ মাত্রই নমুনা নেই সব মুছে গেছে সব শুধু মানুষের সৃতিতে রয়েগেছে।সময়ের পরিবর্তনের সাথে সৃতিটাও দুর্বল হতে থাকবে আর একসময় সেটা মুছে যাবে সৃতিথেকে, মানুষ ভুলে যাবে যে এখানে একটা কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল।ক্লিনিকে গেলাম মাকে দেখতে। ডাক্তার তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। মেঝ খালা ছোট মামাকে নিয়ে এসেছে ক্লিনিকে। আমাদের পরিবারের সবচাইতে শক্ত মনের মনের মানুষটা হচ্ছে মেঝ খালা তিনি অনেক সাহসীও বটে।যে কোন সিচুয়েশনে তিনি সবকিছু খুব ভালোভাবে কন্ট্রোল করতে পারে। খালুর মৃত্যুর পর তার উপর দিয়ে কতো ঝড় ঝাপটা গেছে এক মাত্র তিনি আর খোদাই জানেন।
ছোট মামা টুলের উপর চুপ চাপ বসে আছে, আশেপাশের কোন কিছুর প্রতি তার ধ্যান নেই।ছোট মামাকে আম্মার কাছে রেখে খালা আমাদের বাসায় আসল।তার সাথে আমিও বাসায় আসলাম কিন্তু বাসার দরজাথেকে আর ভেতরে যেতে ইচ্ছে করেনি। ঘরের ভেতর সবাই কান্নাকাটি করতেছে তাই ওখান থেকে ফিরে আসলাম।এম্বুলেন্সে করে লাশ এনেছে।গাড়ির চারদিকে সবাই ভিড় করে রয়েছে আর কান্না করছে। আপা কফিনটা ছুতে ছুতে বেহুশ হয়ে মাঠিতে পড়ে গেল। বাড়ির মহিলারা তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল।একে একে আমার দুস্তোরা আসতে লাগল ওমা শুয়োর গুলো দেখছি কাঁদতেছে। সেই প্রাইমারী থেকে কলেজ পর্যন্ত তাদের কখনো কাঁদতে দেখিনি।শুয়োর গুলো কাঁদুক আজ, কেঁদে কেঁদে চোখের সব পানি শেষ করে ফেলুক।যে যতবেশি চোখের পানি ঝরাতে পারে কোন ঘটনা সে তত বেশি মেনেনিতে পারে। আর যাঁরা পারেনা তারা সারাজীবন মুখে হাঁসি রেখে মনে মনে কাঁদতে থাকে, কেউ বুঝতেই পারে না।
তাই তারা কাঁদুক সবাই কাঁদুক, কেঁদে কেঁদে চোখের সব পানি শেষ করে ফেলুক।জানাযা শেষে লাশটা দাফন করার জন্যে কবরস্থানে আনা হল। ইচ্ছে ছিল একদিন এই রকম একটা গর্তের মধ্যে শুয়ে রাতের আকাশটা দেখব কেমন লাগে।লাশটা কবরের মধ্যে রাখা হল তার উপরে একটার পর একটা বাঁশের টুকরো সুন্দর ভাবে সাজিয়ে বসাতে লাগলো নীচে আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে এসেছে।বাঁশের উপর একটুকরো বেড়া আর তার উপর মাটি দিয়ে ভরাতে শুরো করলো। উপরে মাঠির পরিমান বাড়ার সাথে সাথে নিচে অন্ধকার তীব্র থকে তীব্রতর হচ্ছে, একি! এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমার একটুকুও ভয় হচ্ছে না বরং এই নিস্তব্ধ অন্ধকার আমার ভালো লাগতেছে।শরীরে পেঁচানো সাদা কাপড়টা খুলে মাঠির দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে উপরে কী হচ্ছে তা শুনার চেষ্টা করলাম।উপরে কারা যেন কাঁদতেছে, সবার কন্ঠই আমার পরিচিত, বাবা, চাচা, ভাই, বন্ধু সবার কান্নার আওয়াজ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। বড় মামা যে ঘটনার শুরোথেকে শেষ পর্যন্ত নিজেকে খুব ভালভাবেই কন্ট্রোল করেছিল তিনি এখন বাচ্চা ছেলের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেছে।
কাঁদুক সবাই কাঁদুক, কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ফুরিয়ে ফেলুল আর কিছু দিন পর সব ভুলে যাক।অনেক হয়েছে,এখন আমি একটু ঘুমাব,আমাকে ঘুমাতে দাও।
Suche
Beliebte Beiträge
-
বউ শাশুড়ীর একটি শিক্ষনীয় গল্প
Durch Muhammad Rakibul Islam -
কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা)
Durch Muhammad Rakibul Islam -
কাজী নজরুলের চার বছরের সন্তানের মৃত্যুর করুন কাহিনী
Durch Samia Shejuti -
Exploring Generative AI in Software Development: Opportunities & Risks
Durch kanhasoft llp -
Probiotics Market Size, Share, Development, Trends, Segments and Forecast 2033
Durch Univ Datos
Kategorien





