"তুই অাবার ওই মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করেছিস? সন্ধ্যার একটু পরেই ফেসবুকে ঘুরছিলাম তখনি অারশির মেসেজটা এল।অাগে থেকেই জানতাম এমন মেসেজ অাসবে।অারশি অামার গার্লফ্রেন্ড।গত দুইবছর ধরে অামাদের সম্পর্ক।আরশি এমন একটা মেয়ে যার অভিমানী চেহারা দেখলে মায়া হয়, রাগ দেখলে মজা পায়, অার হাসতে দেখলে খুশিতে মনটা ভরে যায়।তবে অামার কেমন জানি ওকে রাগিয়ে দিতেই ভালো লাগে।তখন ওর চেহারা ঈষৎ রক্তিম হয়ে সৌন্দর্য দ্বিগুন হয়।তাই প্রায়সময় ওকে ইচ্ছে করেই রাগিয়ে দিই।ও ইচ্ছেমত অামায় বকে।অার অামি অানলিমিটেট মজা লুটি। অারশি সচরাচর ভালোবেসে অামায় তুমি তুমি করেই বলে।প্রচন্ড অভিমানে অাপনি বলে।অার রেগে গেলে তুই বলে।এবার তুই করেই বলেছে তারমানে রেগে গিয়েছে।অামি নিজেও মুখের ভিতর একটু হেসে একটা হাসির ইমুজি সেন্ট করলাম।সেটা তৎক্ষণা্ৎ সীন করে অারশি লিখল- - সেতু, ফাজলামি রাখ। অামি কিন্তু সিরিয়াস। - ওকে।মি সিরিয়াস টু। - তোমাকে অামি কতবার বারণ করেছিলাম ওই মেয়ের ছবিতে কোনরকম কমেন্ট না করতে তবুও কেন করলে? - কি করব বল ওর ছবিটা সুন্দর লাগছিল তাই অার চুপ করে থাকতে পারলাম না। - সুন্দর লেগেছে বলেই কমেন্ট করে দিলে।বাহ!(অারশি) - অারে ওটা তো ওর নিজের ছবি ছিল পোলাপান কমেন্ট না করলে বেচারি কষ্ট পেত।(আমি) - তাহলে তুমি ওই মেয়ের কষ্ট ঠিকই বুঝলে কিন্তু অামার কষ্টটা বুঝলেনা। - তোমার এ একটাই দোষ তুমি সবসময় পজিটিভ বিষয়গুলোকে নেগেটিভে নিয়ে যাও।এখানে এত হিংসা হওয়ার কি অাছে অামি বুঝলাম না। - অাচ্ছা অামি হিংসে করি। পজিটিভকে নেগেটিভ করি।অার তুমি প্রেম করবে একজনের সাথে অার লুচ্চামি করবে অারেকজনের সাথে।দেখিয়ে দিলেই যত দোষ। - হ্যাঁ দোষ। - থাক তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে।( অারশি) -হুম।(অামি) লাস্ট মেসেজটা সীন করেনি অারশি।কারন তার অাগেই সে অফলাইন হয়েছিল।অামিও ডাটা অফ করে দিয়ে শরীরটা বিছানায় হেলিয়ে দিলাম।অারশি মেয়েটা ভীষন ভালোবাসে অামায়।তাই অন্য মেয়েকে কমেন্ট করায় তার এত কষ্ট।মেয়েরা তাদের প্রিয়মানুষকে কারো সাথে ভাগ বসাতে পছন্দ করেনা। মায়ের পেটের বোন হলেও না।যে মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করেছি ওর নাম পূজা।বছরে ছয় মাসে একটা ছবি দেয়।অামরা ভালো বন্ধু।পাশাপাশি বাড়ি।এমন ঘনিষ্ঠ কোন মেয়ের ছবিতে যদি কমেন্ট না করি তাহলে কেমন জানি দেখায়।কিন্তু অারশির কথা কোন মেয়েকে কমেন্ট করা চলবেনা। প্রায় একঘন্টা বাদে অাবার ডাটা অন করলাম।আরশির অাইডি একটিভ ওয়ান অাওয়ার দেখাচ্ছে।ভেবেছিলাম এতক্ষনে বেশ কয়েকটা মেসেজ এসে জমা হবে।কিন্তু একটা মেসেজও অাসেনি।পূর্বে যে কনভারসেশন হয়েছিল সেগুলো অাগের মতই অাছে।লাস্ট মেসেজটা এখনো সীন করেনি।সম্ভবত খুব বেশি ক্ষেপে গিয়েছে অামার উপর।নাহলে এতক্ষনে ফেসবুকে না অাসার কথা না।অারশি রেগে গেলে যেকোন সময় সাংঘাতিক রূপ নেয়।এ সময় যদি আমি ওর অাশেপাশে থাকতাম তাহলে নির্ঘাত চড় থাপ্পড় অল্প খেয়ে ফেলতাম।ভাগ্যিস তার থেকে পঞ্চাশ কি.মি দূরে অাছি। অারশি শহরে থাকে অার অামি গ্রামে।মাসে দুই থেকে তিনবার দেখা হয় অামাদের।গেল শুক্রবার দেখা করে এসেছি।ইচ্ছে করে প্রতিদিনই তার সাথে দেখা করি, কথা বলি, নির্জন রেস্তেরাঁই বসে থাকি, হাত ধরে পুরো শহরে ঘুরি।কিন্তু সেটা কোনভাবেই সম্ভব হয় না।কারন সপ্তাহে সাতদিনে সাতদিন অামার টিউশান থাকে, নিজের কোচিং, কলেজে ক্লাস থাকে।তাছাড়া পারিবারিক কিছু বাধাবিপত্তি তো অাছেই।সবমিলিয়ে অামি পারিনা।তবুও শুক্রবার সকালে সব ঝামেলা শেষ করে বিকালে শহরে যায়।তাও প্রতি শুক্রবার সম্ভব হয় না। দিনে কম করে হলেও পাঁচ থেকে সাতবার ওর প্রোফাইলে ঘুরি।ছবিটাগুলা দেখি।স্ট্যাটাস গুলা বারবার করে পড়ি।এটা অামার অভ্যাস হয়ে গেছে।না করলে কেমন জানি লাগে।ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলাম।একটু অস্হির অস্হির লাগছে।নেট কানেকশন স্লো হয়ে এইচ প্লাস একবার অাসছে অাবার যাচ্ছে।বাইরে নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।তাই বাইরে গেলাম।অারশির অাইডিতে মেসেজ করা যাচ্ছেনা।বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলাম তাও হচ্ছেনা।প্রতিবার ইংরেজীতে সুন্দর করে লিখা অাসছে ইউ কুডন্ড কনভারসেশন....। লাস্ট মেসেজটা এখনো সীন হয়নি তবে ডেলিভারট হয়েছে। ওর মোবাইলে বারবার কল দিচ্ছি কিন্তু সংযোগ পাচ্ছেনা।হয়ত বন্ধ করে রেখে দিয়েছে কোথাও।একদিকে অাইডি ডিয়েকটিভেট অন্যদিকে মোবাইল বন্ধ।বলতে গেলে এখন অারশির সাথে কথা বলার সব রাস্তায় বন্ধ।অস্হিরতা ক্রমশ বাড়ছে।বুকের পাশে একটু একটু ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।সব দোষ অামার।অামার জন্যই হয়েছে সব।না জানি এখন কি করছে ও।এমনিতেই ও যে জেদি মেয়ে কি করতে কি করে বসে তার ঠিক নেই।এক দৌড়ে গেলাম পূজার কাছে।অামি প্রেমজনিত কোন সমস্যায় পড়লে প্রথমে ওর কাছেই যায়।এমনকি অামি অারশির সাথে প্রেম করব কি করবনা সেটাও ওর কাছ থেকেই বুঝেছিলাম। পূজার কানে পুরো ঘটনাটা ঢুকিয়ে দিলাম।পূজা খানিকক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলল- - তুই কাকে ভালোবাসিস অামাকে নাকি অারশিকে? - দুজনকেই ভালোবাসি। - অাসলে অামি বলতে চাইছি তুই প্রেম কার সাথে করিস? - অবশ্যই অারশির সাথে। - তাহলে তার বারণ স্বত্বেও তুই অামার ছবিতে কমেন্ট করতে গেলি কোন দুঃখে? - অামি এসেছি তোর কাছে সমাধান খুঁজতে।অার তুই কিনা সিঅাইডি অফিসারের মত প্রশ্ন করেই যাচ্ছিস করেই যাচ্ছিস। - অারশি মনে মনে কি ভেবেছে জানিস? - কি ভেবেছে? - ও ভেবেছে এখন তুই ওর কথা শুনছিস না ভবিষ্যৎতে গিয়ে যে শুনবি তার গ্যারান্টি কি। অারো অনেক কথা হল অামাদের। প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা পার হয়ে গেল এখনো অবস্হা অাগের মতই।অাইডি ডিয়েকটিভেট মোবাইল সুইচ অফ।অামার এমন মনে হচ্ছে যেন বুকের ভিতর থেকে কেউ কলিজা ছিড়ে নিয়ে গেল।খুব কষ্ট হচ্ছে খুব।অার ভীষণ চিন্তাও হচ্ছে। ও যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে তখন অামার কি হবে।ওদিকের খবর কিছুই তো জানতে পারছিনা।প্রচন্ড ক্ষুদায় থাকতে না পেরে একবার ভাতের টেবিলে গিয়েছিলাম।কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামেনি।এমন মনে হয়েছিল যেন স্বার্থপরের মত খাবার অামি একাই খেয়ে ফেলছি।পরে হাত ধুয়ে চলে অাসি।ভালোবাসলে হারানোর ভয় থাকে সবসময়।এক মুহুর্ত কথা না হলে মনে হয় যে হারিয়ে যাচ্ছে। পরদিন সকালে ঘুম ঘুম চোখে প্রথমে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিলাম।তারপর অারশির নাম্বারে কল করলাম।কালকের মতই নাম্বার বন্ধ পাচ্ছি।তারপর ডাটা অন করে মেসেন্জারে গেলাম দেখলাম অাইডির সেইম অবস্হা।ভেবেছিলাম রাতে যেমন-তেমন সকালে নিশ্চয় নাম্বার চালু করে দিবে।সেটাও করলনা।অামি কাল রাতে যা ভাবার ভেবে নিয়েছি।দুপুরের মধ্যে যদি ওর নাম্বার খোলা না পায় তাহলে সোজা তার বাসায় চলে যাব।কেমন জানি একটা কথায় বারবার মনে হচ্ছে যদি অামি একবার তাকে স্যরি বলতে পারি তাহলে সবকিছু অাগের মত হয়ে যাবে।আমি স্যরি বললেই ওর রাগ গলে ভালোবাসায় পরিণত হবে। প্রায় পোনে চারটার দিকে অারশির বাসার নিচে পৌছে গেলাম।এক ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগে এখানে অাসতে।বাসার ভিভরে যাওয়া সম্ভব না।তবে একটা জায়গা অাছে যেখান থেকে আরশির সাথে সহজেই কথা বলা যায়।জায়গাটা হল তাদের বেলকনির সোজাসুজি যে টং দোকানটা অাছে সেটা।অামি সেখানে গিয়ে বসলাম।একটা চায়ের অর্ডার করলাম।বিকালে বেলকনিতে হাঁটাহাটির অভ্যেস অাছে ওর।অামি সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাব।মিনিট কয়েক পরে অারশিকে বের হতে দেখা গেল।অামি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।ইশারা করলাম।কিন্তু অারশি এদিকে তাকায়নি শুনেনি দেখেনি।অারশি অাবার ভিতরে ঢুকে গেল। কিছুতেই হাল ছাড়া যাবেনা।তার ঠিক মিনিট দশেকপর অাবার সে বেলকনির কাছে এল।কিন্তু এবারও অামি ব্যর্থ। তৃৃতীয়বার ও খুব তাড়াতাড়ি বেলকনির কাছে এল।এত দ্রুত যে অামিও প্রস্তুত ছিলাম না।কতক্ষন অামার দিকে সে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।ভালো করে যাচাই করছে সেটা অামি কিনা।অারশির হয়ত বিশ্বাসই হচ্ছেনা অামি এখান অবদি চলে অাসব।তার দিকে তাকিয়ে অামি কি করতে এসেছি সেটা কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলাম।এমন মনে হচ্ছে যেন বহুকাল পর তাকে দেখছি।হ্যাঁ এটাই উপযুক্ত সময় স্যরি বলার।অামি দাঁড়িয়ে দুহাতে কান ধরে ফিসফিস করে বললাম স্যরি।
Search
populaire posts
-
বউ শাশুড়ীর একটি শিক্ষনীয় গল্প
-
কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা)
-
কাজী নজরুলের চার বছরের সন্তানের মৃত্যুর করুন কাহিনী
Door Samia Shejuti -
Exploring Generative AI in Software Development: Opportunities & Risks
Door kanhasoft llp -
Probiotics Market Size, Share, Development, Trends, Segments and Forecast 2033
Door Univ Datos





