হজমের সমস্যা থেকে ক্যানসার সবার শত্রু হলুদ। তেল নুনের মতোই হলুদ বাঙালি রান্নার এক অন্যতম উপকরণও বটে। একই সঙ্গে টোটকা চিকিত্সাতেও হলুদ ব্যবহার করা হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। ইদানীং বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন হলুদের মধ্যে থাকা কারকুমিন বিভিন্ন অসুখ বিসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অন্যতম হাতিয়ার। ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর আয়ুর্বেদিক ড্রাগ ডেভলপমেন্টের প্রাক্তন অধিকর্তা, আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডা সুবল কুমার মাইতি।ব্যথার ওষুধের বদলে চুন হলুদ গরম করে লাগানো অথবা ঋতু পরিবর্তনের জ্বর সর্দির হাত এড়াতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সকালে খালিপেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার প্রচলন যুগ যুগ ধরে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে এগুলির কোনওটিই ভুল নয়। , প্রাচীন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা হলুদের গুণাগুণ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত ছিলেন। এই ম্যাজিক মশলার প্রতি আগ্রহী এখন মূল ধারার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও।হলুদের বিজ্ঞান সম্মত নাম কারকুমালঙ্গা –এল। হলুদ আসলে এক ধরনের গুল্ম জাতীয় অর্থাৎ নরম কান্ডের গাছ। আর এর কন্দ বা মূলটি হল হলুদ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে কারকুমিন নামে এক ধরনের জৈব যৌগ, যা আদতে এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। কারকুমিনকে ম্যাজিক যৌগ বলা যেতে পারে অনায়াসে। কারকুমিন ছাড়াও হলুদে আছে যথেষ্ট পরিমাণ ফোলেট ( ফলিক অ্যাসিডের মূল উপাদান), নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট। এখানেই শেষ নয়, কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন সি। সুতরাং কারকুমিন নামে এই পলিফেনিলিক যৌগটি সঠিক ভাবে পরিমিত মাত্রায় নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেক অসুখবিসুখকেই দূরে সরিয়ে রাখা যায় অনায়াসে। এমনকি এখনকার মারাত্মক ভাইরাল ফিভারের বিরুদ্ধেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করে জ্বর প্রতিরোধ করতে পারে অনায়াসে। এবারে একে একে জেনে নেওয়া যাক হলুদ কোন কোন অসুখের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে আমাদের ভালো রাখতে সাহায্য করে।হলুদে থাকা কারকুমিন নামক পলিফেনোলিক যৌগটি আমাদের শরীরকে নানান ঘাত প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন অসুখ বিসুখকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। তবে ভেজাল মেশানো গুঁড়ো হলুদ শরীরের উপকারের বদলে ক্ষতিই করে। তাই ভাল কোম্পানির নায্য মূল্যের হলুদ ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। কম দামি হলুদে থাকা মেটালিন ইয়লো কারসিনোজেনিক অর্থাৎ ক্যানসার উদ্দীপক। এই ব্যাপারটা ভুললে চলবে না।হলুদে থাকা কারকুমিন গলব্লাডার অর্থাৎ পিত্তথলিকে উদ্দীপ্ত করে পিত্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে এক দিকে হজম ক্ষমতা বাড়ে অন্য দিকে হজম সংক্রান্ত নানান অসুখ বিসুখের হাত থেকে কিছুটা রেহাই মেলে।সমীক্ষায় জানা গেছে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ ইত্যাদি পেটের রোগ প্রতিরোধে হলুদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সহ জয়েন্ট পেন কমাতে পারে হলুদ। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল অনেকের ধারণা শুধুমাত্র কাঁচা হলুদই বোধহয় স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। শুকনো হলুদ বা গুঁড়ো হলুদ যদি খাঁটি হয়, তাও সমান উপকারি। কাঁচা হলুদে ভিটামিন সি থাকে যা, গুঁড়ো হলুদে থাকে না। এটাই গুঁড়ো হলুদের সঙ্গে কাঁচা হলুদের প্রধান পার্থক্য।আমাদের দেশের এক অন্যতম সমস্যা ডায়াবিটিস। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে প্যানক্রিয়াস উদ্দীপিত হয় ও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। ডায়াবিটিসের রোগীরাও হলুদ খেতে পারেন। এর ফলে ডায়াবিটিসজনিত অন্যান্য শারীরিক সমস্যার মোকাবিলা করা সহজ হবে।কাডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় হলুদের কারকুমিন। হৃদপিন্ডের রক্তবাহী ধমনী বা করোনারি আর্টারিতে কোলেস্টেরল বা চর্বির প্রলেপ পড়ে আর্টারি সরু হয়ে গিয়ে হার্টে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হার্ট ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে হলুদ। রোজকার ডাল তরকারিতে কিছুটা হলুদ থাকলে ধমনীতে চর্বি জমার হার অনেকটাই কমে যা।
Buscar
entradas populares
-
বউ শাশুড়ীর একটি শিক্ষনীয় গল্প
-
কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা)
-
কাজী নজরুলের চার বছরের সন্তানের মৃত্যুর করুন কাহিনী
Por Samia Shejuti -
Exploring Generative AI in Software Development: Opportunities & Risks
Por kanhasoft llp -
Probiotics Market Size, Share, Development, Trends, Segments and Forecast 2033
Por Univ Datos
Categorías