লবণবিহীন মাখনকে চুলায় জ্বাল দিয়ে ঘৃত প্রস্তুত করা হয়। ‘পদ্মার ইলিশ আর পাবনার ঘি/ জামাইয়ের পাতে দিলে আর লাগে কি?’ ঘি তথা ঘৃত নিয়ে এমন নানা প্রবাদ-প্রবচনে এর জনপ্রিয়তা সহজেই অনুমেয়।
ঘৃতের কদর ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র। পোলাউ, বিরিয়ানিসহ বাংলার বহু রান্নায় এটি ব্যবহৃত হয়ে বাঙালি খাদ্যরসিকদের রসনার তৃপ্তি ঘটিয়ে আসছে। বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন, হালুয়া ও লাড্ডুতে ঘৃত ব্যবহার করা হয়। বাঙালির পছন্দের তালিকায় ঘৃত মেশানো এসব খাবার ওপরের দিকে। এ ছাড়া চমৎকার গন্ধের জন্য নানা রকম ভর্তা-ভাজিতেও ঘৃত ব্যবহৃত হয়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ঘৃত স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্দি-কাশি সারাতে, দুর্বলতা কাটাতে, ত্বকের সমস্যা দূর করতে ঘৃত ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ঘৃতের সঙ্গে পেঁয়াজ ভেজে খেলে গলা ব্যথা সারে।
শীতকালই ঘৃত খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এ সময় এটি সহজে হজম হয় এবং শরীর গরম রাখে। এতে ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘কে’ আছে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি পেশি সুগঠিত রাখতে ঘৃত কার্যকর। এ ছাড়া শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে ঘৃত। খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের জন্যও দারুণ উপকারী ঘৃত। তবে এটি অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভালো। যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের ঘৃত এড়িয়ে চলাই উচিত।
একসময় দাদি-নানিরা নিজ হাতে খাঁটি দেশি ঘৃত বানাতেন। কিন্তু সময়ের আবর্তে পড়ে এখন আর সে ধরনের ঘৃত বানাতে দেখা যায় না। বর্তমানে বাজারের ঘৃত যে কতখানি খাঁটি তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বাঙালিরা গরুর দুধ থেকে তৈরি গাওয়া ঘৃতকে (গব্য ঘৃত) সবচেয়ে উত্কৃষ্ট ঘৃত বলে বিবেচনা করে। গাওয়া ঘৃততে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বাটাইরিক এসিড, যা পরিপাকতন্ত্রের প্রধান কাজ হজমে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষভাবে উপকারী।





