বই উৎসব

Reacties · 570 Uitzichten

‘নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে, ফুলের মতো ফুটবো, বর্ণমালার গরব নিয়ে,আকাশজুড়ে উঠবো’— নতুন বই হাতে নিয়ে শিশু-কিশোরদের উল

বছরের প্রথমদিন চার কোটি ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে সরকার তুলে দিয়েছে নতুন বই। আর নতুন বই পাওয়ার আনন্দে উল্লসিত ছিলো তারা। চোখে মুখে ছিলো হূদয় কাড়া উচ্ছ্বাস।

প্রতিবারের মতো এবারো শিশু থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে কাঁচা গন্ধের নতুন বই তুলে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। শীতের পরশমাখা স্নিগ্ধ সকালে হাতে পাওয়া নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে এসব শিশু-কিশোর যেন আকাশে পাখনা মেলে। মুক্ত বিহঙ্গের মতো নীলাকাশে উড়তে চায় ডানা মেলে!

আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুটি এবারো পালন করেছে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’। মাধ্যমিকের উৎসবটি আয়োজন করা হয় সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানটি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে।

সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে মায়ের হাত ধরে বই নিতে এসেছিল ষষ্ঠ শ্রেণির জিনিয়া। নতুন বই পাওয়ার আনন্দে জিনিয়ার কাছে হার মানে তীব্র শীত। শীতের সকালে তার অপেক্ষা সোধা গন্ধের নতুন বই। অপেক্ষা করতে থাকে সে।

বারবার মায়ের কাছে সে জানতে চায় কখন হাতে পাবে কাঙ্ক্ষিত ‘নতুন বই’। একসময় তার অপেক্ষা শেষ হয়। হাতে পায় নতুন বই। বইগুলো হাতে নিয়েই ঝট করে বুকে চেপে ধরে সে। বন্ধ হয় চোখ। জগতের সব ভাবনা-কোলাহল ভুলে নিমগ্ন হয় অনুভবের আবেশে।

প্রচণ্ড শীতে একটু উষ্ণতার জন্য ছোট শিশু যেমন মায়ের বুকের ওম নিতে তীব্রভাবে লুটিয়ে থাকে, তেমন করেই বইগুলো বুকে চেপে রাখে সে। এভাবে কেটে যায় কিছুক্ষণ। আরও কিছুক্ষণ। তারপর জানালার বন্ধ কপাটের মতো হঠাৎ খুলে ফেলে একটি বই। নাক গুঁজে দেয় সেখানে।

লম্বা একটা টান, তৃপ্তির শ্বাস, অমোঘ প্রশান্তি নিয়ে পাশে দাঁড়ানো মায়ের হাতটা ধরে সে বলে ‘মা, বইয়ের গন্ধটা ঠিক তোমার মতো।’ মায়ের চোখ ছলছল করে উঠে। মা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেন না। গলা বুঁজে আসে তার। মা তার আবেগ সংবরণ করে হাত বুলাতে থাকেন মেয়ের মাথায়। আর দাঁড়িয়ে থাকার ক্লান্তি দূর হয় মেয়ের আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখে।

বছরের প্রথম দিন পহেলা জানুয়ারি সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নির্ধারিত সময়েই এসেছিলেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তার হাত থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন বই নিয়েছে জিনিয়া। বই পাওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া, ‘খুব ভালো লাগছে। আনন্দ হচ্ছে।’

এদিন মন্ত্রীর হাত থেকে বই নিয়েছেন আরও অনেকেই। তাদের অনুভূতি এক-অভিন্ন। গতকাল সারা দেশে একযোগে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত হলেও মঙ্গলবার উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছর চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

মাধ্যমিকপর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, শুধু জিপিএ-৫ এর পেছনে না দৌড়ে মানুষ হওয়ার জন্য দৌড়াতে হবে। শুধু জিপিএ-৫ এর পেছনে যাবো না। আমি পড়বো, আমি শিখবো, আমি চেষ্টা করবো। জিপিএ-৫ ছাড়া আর কোনো কাজ করবো না, কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেবো না এরকম করা যাবে না। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাপ কমাতে মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষার জন্য বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করছি, যাতে শিক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ কমানো যায় এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা যায়।

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সহিংসতা থেকে নিজেদের দূরে রাখবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। যে কাজই করো না কেন, যাই থাকুক না কেন, মানুষ হবে মানুষের মতো। বিশ্ব নাগরিক হতে গেলে নিজেকে কাজে লাগাতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, জীবনে মানুষ হতে হবে, অঙ্গীকার থাকতে হবে। জিপিএ-৫ এর চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। বইয়ের কনসেপ্ট বুঝে পড়তে হবে। জীবনে কোনো পেশাই ছোট নয়। সব পেশাকে সম্মান করতে হবে। জীবনে অনেক কিছু করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসবে অংশ নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার উপস্থিতিতে শিশুদের আনন্দ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ও ছয় শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে বই বিতরণ উৎসব-২০২০ উদ্বোধন করেন। শুরুতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা বেশে নাচে-গানে মঞ্চ মাতিয়ে তোলে। অতিথিদের বক্তব্যের পর ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে দুটি করে নতুন বই তুলে দেয়া হয়।

প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৫৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন।

এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে শিশুদের জন্য আনন্দপূর্ণ শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে রয়েছে বিশাল এক জনগোষ্ঠী। এ জনগোষ্ঠীকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

আদর্শ মানুষ হতে শিক্ষার্থীদের তিনি লেখাপড়ার প্রতি বেশি মনোযোগী হতে বলেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

বই উৎসবে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, শিরীন আক্তার, ফেরদৌসি ইসলাম, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, গত ১০ বছর (২০১০ থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ) ৪৩ কোটি ১৯ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৯ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

 

Reacties

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন