যাযাবর জীবনে আলো ছড়িয়েছিল যে মুসলিম শহর

Yorumlar · 385 Görüntüler

শিনকিত মিনার ও বাতিঘরের দেশ, লাখো কবি ও অসংখ্য আলেমের জন্মভূমি।

এখানে মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যাযাবরের জীবনে স্থান পেয়েছিল জ্ঞানের আলো। পশ্চিমা বিশ্বের পণ্ডিতরা এ অঞ্চল সম্পর্কে বলেন, ‘ইতিহাসে প্রথমবার মরুভূমিতে এমন এক সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটেছিল, যারা অসংখ্য ধর্মীয় পণ্ডিতের জন্ম দিয়েছিল—যারা কোরআন, হাদিসের পরিভাষা, ভাষা-সাহিত্যের নানা দিক, তর্কশাস্ত্র ও সংগীতের পাঠ গ্রহণ করত।’ তবে দীর্ঘদিন পর্তুগিজ ও ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনে থাকায় শিনকিত তার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব হারায়।

নামকরণ : শিনকিত সাহারা মরুভূমির পশ্চিম প্রান্তের আদরারের একটি পাহাড়ি শহরের নাম। পরবর্তী সময়ে পুরো অঞ্চলের নাম হয়ে যায় শিনকিত। শিনকিতের নামকরণ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। বলা হয়, শিনকিত বার্বারি শব্দ। যার অর্থ ঘোড়ার চোখ। আর কেউ কেউ বলেছেন, আরবি ‘শিন কাইত’ থেকে শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ শহরসংলগ্ন পর্বতের প্রান্ত। বর্তমান মৌরিতানিয়ার প্রাচীন নাম শিনকিত। তবে ইতিহাসে শিনকিত একাধিক নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

শিনকিতের গোড়াপত্তন : ধারণা করা হয়, শিনকিত ‘আবির’ শহরের উত্তরাধিকারী। শিনকিতের তিন মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে যে শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। আবির অধিবাসীদের হাতেই শিনকিতের যাত্রা শুরু হয়। স্থানীয়দের দাবি মতে, ১৬০ হিজরি মোতাবেক ৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে আবির শহরের আর ৬৬০ হিজরি মোতাবেক ১২৬২ খ্রিস্টাব্দে শিনকিতের গোড়াপত্তন হয়। ১৫ শতকের পর্তুগিজ পর্যটকরা শিনকিতের প্রথম ম্যাপ আঁকেন। তাঁরা তাকে একটি ছোট গ্রাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আরবদের মধ্যে আবদুর রহমান সাদির রচনায় শিনকিতের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৭ শতকে শিনকিত ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাহিত্য-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৮ ও ১৯ শতকে শিনকিত উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করে। কথিত আছে, তখন এক দিনে বাণিজ্যিক কাফেলার ৩২ হাজার উট শহর ত্যাগ করত, যা থেকে মরু অঞ্চলে শিনকিতের তাৎপর্য বোঝা যায়।

শিনকিতে ইসলামের আগমন : হিজরি প্রথম শতকেই শিনকিত ইসলামী খেলাফতের অধীন হয়। ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে, উকবা ইবনে আমের (রা.)-কে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া (রা.) উত্তর আফ্রিকার শাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর তিনি শিনকিত বিজয় করেন।

শিনকিতের উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা : শিনকিত সুদীর্ঘ কাল পর্যন্ত জ্ঞানচর্চা, ধর্মীয় অনুশাসন ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কেননা তা ছিল আরবদের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অংশের এবং উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এ ছাড়া এটা ছিল হাজিদের বিশ্রাম গ্রহণ ও ব্যবসায়ী কাফেলার পণ্য হাতবদলের কেন্দ্র। ফলে শিনকিত খুব সহজেই জ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মোহনায় পরিণত হয়েছিল। বহুকাল পর্যন্ত শিনকিত জ্ঞানের নগরী বলে খ্যাত ছিল, তার অধিবাসীরা জ্ঞান, ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী ছিল; শিনকিতের আলেমরা মেধা, প্রতিভা, আল্লাহভীতি, সাধনা ও যোগ্যতায় সমকালকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশ ও জাতির সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জনে শিনকিতের আলেমদের অনন্য ভূমিকা ছিল।

কেমন ছিল শিনকিতের শিক্ষাব্যবস্থা : শিনকিতের কোনো শিশুর বয়স পাঁচ বছর হলে তাকে এক থেকে ১০ পর্যন্ত শেখানো হতো। এরপর তাকে বর্ণ পরিচয় শেখানো হতো। বর্ণ পরিচয়ের পর তারা কোরআন শিক্ষা করত। সাবালক হওয়ার পর তারা জাগতিক শিক্ষাগ্রহণ শুরু করত। একজন শিক্ষকের কাছেই ছাত্ররা সব বিষয় শিখত। শিক্ষকরা কোনো বেতন নিতেন না; বরং তাঁরা ছিলেন ছাত্র, অতিথি ও অসহায় মানুষের আশ্রয়। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষার ধারা এখনো প্রচলিত আছে শিনকিতে।

মুসলিম পুরাকীর্তি : শিনকিতের গোড়াপত্তন থেকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা মুসলিমদের হাতেই হয়েছে। তাই শিনকিতজুড়ে রয়েছে অসংখ্য মুসলিম পুরাকীর্তি। এর মধ্যে শিনকিতের প্রাচীন জামে মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা সর্বাধিক প্রাচীন। ইউনেসকো মৌরিতানিয়ার তিনটি প্রাচীন শহর ও একটি গ্রামকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার অন্যতম শিনকিত। শিনকিতের প্রধান মুসলিম পুরাকীর্তি হলো জামে মসজিদ। পাথুরে অবকাঠামো, চার কোণবিশিষ্ট মিনার, সমতল ছাদ ও ভূতলে অবস্থিত মেঝে, চতুর্দিকের ছয়টি দরজা মসজিদটিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদকে শিনকিত অধিবাসী নিজেদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক মনে করে।

সমৃদ্ধ পাঠাগার : প্রাচীনকাল থেকে শিনকিত তার সমৃদ্ধ পাঠাগারের কারণে বিখ্যাত। শিনকিতে হাজার বছরেরও প্রাচীন পাঠাগার রয়েছে, যাতে হিজরি তৃতীয় থেকে চৌদ্দ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। এসব গ্রন্থাগারে কোরআন, হাদিস, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, প্রকৌশল, ব্যাকরণ, ভাষাবিজ্ঞান, ইতিহাস, চিকিৎসা, ভূগোলসহ বিজ্ঞান ও চারুকলার বিভিন্ন বিষয়ের বই আছে, যা আরব ও অনারব গবেষকদের মনোযোগের কারণ হয়েছে।

 

Yorumlar

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন