ক্ষ্যাত বউ.....
.
-- কিরে দোস্ত? ওই ক্ষ্যাত মেয়েটাকে
তুই বিয়ে করবি? আরে আর বিয়ের
পাত্রী পাইলি না? ইশ জামাকাপড়ের
অবস্থা দেখ! লং কামিজ পড়েছে,
আজকালকার যুগে কেউ লং ড্রেস পরে?
আরে দোস্ত আমারে দেখ! আমার বেশ
কয়েকটা প্রেমিকা। সবাই কত মর্ডান
আর শর্টকাট পোষাক পরে।
আমি সিজানের কথা শুনে কোনও কথা
বলছিনা। শুধুই মুচকি হাসছি। সিজান
চোখ বড় আর গোল করে তাকিয়ে বললো,
-- তোকে এতগুলো কথা বললাম তুই
হেসে উড়িয়ে দিলি? আচ্ছা কেমন
ছেলে তুই? সেই সাত আট বছর ধরে ওই
ক্ষ্যাত মেয়ের সাথে প্রেম করলি! অথচ
একবারো ভাবলি না ও একটা ক্ষ্যাত?
আমি মুচকি হেসে সিজানকে বললাম,
-- আচ্ছা আফিফা কে তোর ক্ষ্যাত মনে
হওয়ার কারন কি? খুলে বলতো?
-- ও কখনো তোর সাথে ডেটিংয়ে
গেছিলো?
-- না যায়নি।
-- তোকে কিস করেছিলো?
-- না করেনি!
-- তোর হাত ধরেছিলো?
-- না ধরেনি।
-- এবার বল, ও তোকে কিস করেনি, হাত
ধরেনি তার মানে ও তোর সাথে
বেডেও কখনো শোয়নি?
এই কথাটা শোনার পর সিজানকে কষে
একটা চড় মারা উচিৎ আমার। কিন্তু
আমার মাথা প্রচন্ড রকমের ঠান্ডা।
তাই মুচকি হেসে বললাম,
-- তো, এইগুলা না করলে সে ক্ষ্যাত?
-- হুম অবশ্যই ক্ষ্যাত। আমার যতগুলো গফ
ছিলো। সবাই বেডে যাওয়ার জন্য
অস্থির!!!
কি আশ্চর্য!! সিজানের এই কথাটা
শোনার পরও আমার মাথাটা ঠান্ডাই
আছে। আমি সিজানকে ঠান্ডা মাথায়
বললাম,
-- তাহলে তো আমিও ক্ষ্যাত!!!
-- কেন? তুই কেন ক্ষ্যাত হইতে যাবি?
তুই একটা হ্যান্ডসাম ছেলে!!!
-- আমিও তো কখনো কাউকে কিস
করিনাই, কারো হাত ধরিনাই। কাউকে
বেডেও নিয়ে যাইনাই!!!
-- হুম! তুই শোন! আফিফা কে বিয়েই
তো করবি কিছুদিন পর! বিয়ের আগে তুই
একবার ওকে বেডে নিয়ে যা। ইনজয় কর!!
এবারও আমার রাগ উঠলোনা। বরং একটা
দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় খেললো। আমি বুদ্ধি
টা সিজানের সামনে প্রকাশ করলাম
না।
.
কিছুদিন পর আমার আর আফিফার বিয়ে
হলো। আমার বিয়ের কয়েকমাস বাদে
সিজানও বিয়ে করলো। তারপর আর
কখনও সিজানের সাথে দেখা হয়নি
আমার। আমি চাকুরীর জন্য ঢাকায় চলে
গিয়েছিলাম।
.
কোনও এক ছুটির দিনে আফিফাকে
নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। হঠাৎই দুরে
সিজানের মতো কাকে যেন দেখলাম!
একটু এগিয়ে গিয়ে নিশ্চিত হলাম ওটা
সিজানই। সিজান সবসময় হাসিখুশি আর
আমোদী একটা ছেলে। তাকে আজ
বিষন্ন লাগছে। আমি আফিফা কে
সাথে নিয়েই তার সামনে গিয়ে
বললাম,
-- কেমন আছিস সিজান?
-- এইতো আছি! তোরা কেমন আছিস?
এমনভাবে বললো, দেখেই বোঝা
যাচ্ছিলো সে ভালো নেই। আমি ঘটনা
আচ করতে পেরে বললাম,
-- আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি। তো?
তোর বউ কই? বিয়ের সময় তো আসতে
পারিনি। ভাবীকে দেখাবিনা?
-- জ্বী সে নেই।
-- নেই মানে?
-- ডিভোর্স হয়েছে।
-- ডিভোর্স হয়েছে? কি বলিস? তুই কি
ক্ষ্যাত মেয়ে বিয়ে করেছিলি?
-- আরে সেরকম না। আমার বৌ মর্ডানই
ছিলো। আমার যে গফ রিয়া ছিলো।
ওকেই বিয়ে করেছিলাম।
-- কি বলিস? ও তো তোর মনের মতো।
একদম তুই যেমন চাস। তাইলে ডিভোর্স
হইলো কেন?
-- আর বলিস না। আমার কোনো কথাই
শোনেনা। রোজ রাতেই পার্টি হ্যান
তেন এসব করেই কাটায়। আমি মানা
করলে ঝগড়া লেগে যায়।
-- ওওও, তারপর?
-- রোজ রাতে এইসব প্যারা আর ভালো
লাগেনা দোস্ত। জীবনটা একদম
তেজপাতা হয়ে গেছে। ঝগড়া করে
কয়েকমাস ধরে বাপের বাড়িতে।
গতকাল ডিভোর্স পেপার পাঠাইছে।
.
আমি এবার আফিফার হাত টা শক্ত
আরে ধরে বললাম,
-- এই যে তোর ভাবী। আফিফা। তোর
ভাষায় ক্ষ্যাত মেয়ে। এই মেয়েটা আজ
অবধি আমার সাথে উচু গলায় কথা
বলেনি। আমিও তাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা
করি। যথেষ্ট ভালোবাসি। হুম আমদের
ঝগড়া হয়। কিন্তু সেটা ক্ষণিকের। রাগ
অভিমান। আমাদের ঝগড়া গুলো কখনও
একে অপরকে আঘাত করার জন্য নয়। বরং
ভালোর জন্য।
দোস্ত শোন। এই যে আফিফা বিয়ের
আগে আমার সাথে শোয়নি, এই জন্য তুই
তাকে ক্ষ্যাত বলেছিলি। অথচ মনে
রাখিস! এই ক্ষ্যাত মেয়েগুলোই প্রকৃত
নারী। এরা জানে কি করে
ভালোবাসতে হয়। কি করে সংসার
আগলে রাখতে হয়। সুতরাং অতীত ভুলে
যা। একটা ক্ষ্যাত মেয়ে কে বিয়ে কর!
দেখবি জীবনে সুখ .... আর সুখ।
.
সিজান আমার দিকে মিষ্টিনয়নে
তাকিয়ে আমার কথা শুনছে। আমি
তাকে বললাম,
-- দোস্ত! পৃথিবীতে সমস্ত নারী যে
তোর মর্ডান গফ এর মতো হবে এমনটা
নয়। আবার পৃথিবীর সমস্ত নারী যে
আমার বউ আফিফার মতো হবে এমনটাও
নয়। পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ যদি আমার
মতো ভাবতো তবে ভালই হতো। তবে সব
যদি ভালো হয়, তাহলে খারাপ বলতে
কিছু থাকবেনা। আর খারাপ আছে বলেই
তো ভালোর দাম আছে! সুতরাং কে
কোথায় কি অকাজ কুকাজ করছে! তার
সমালোচনা না করে ভালোর দলে চলে
এসে দেখ, তুই কতটা মর্যাদাবান।
দেখবি কত সুখ আর কত প্রশান্তি।
সিজান এরপর বদলেছিলো কিনা
জানিনা। তবে ওর চোখ দেখে
বুঝেছিলাম সে অনুতপ্ত ছিলো।

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন