ঘোরাঘুরি হোক ঢাকার কাছাকাছি অসাধারণ কয়েকটি জায়গায়

রাজধানী ঢাকায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তবে নাগরিক কোলাহলের শহর, জ্যামের শহর ঢাকায় পাওয়া যায় না সবুজের ছোঁয়া, মেলে না শীতল জলের ঘ্রাণ। শহর জীবনে ব্যস্ততার প্রবল চাপে ছুটির দিনেও ক্লান্ত প্রাণকে দেয়া যায় না এতটুকু সজীব নিঃশ্বাস। তবে ঢাকার আশেপাশে চমৎকার কিছু স্থান রয়েছে যেখানে গেলে আপনি পেতে পারেন সবুজের সমারোহ কিংবা জলের ছোঁয়া অথবা গোলাপের মাদকতা। আসুন জেনে নিই ঢাকার কাছাকাছি কয়েকটি ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে।

গোলাপ গ্রামঃ
নাম শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামে গোলাপের চাষ হয়। গ্রামটি গোলাপ গ্রাম হিসেবে সুপরিচিত। গোলাপ গ্রামে গোলাপ চাষীরা অগণিত গোলাপের চাষ করেন। গোলাপ গ্রামে অর্থাৎ সাদুল্লাহপুরে পা রাখতেই নয়নাভিরাম গোলাপের সৌন্দর্য চোখকে মাদকতায় ভরিয়ে তোলে। চারদিকে শুধু গোলাপ আর গোলাপ। তবে সাদুল্লাহপুর নৌকা ঘাট থেকে আরো ভেতরে হাঁটতে থাকলে গোলাপের বড় বড় বাগান দেখা যায়। হাঁটার পথে গোলাপের অনেক বাগান যেন দর্শনার্থীদের সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়ায় ব্যস্ত থাকে। রাস্তার দুপাশে অসংখ্য গোলাপ গাছ যেন প্রহরীর ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। যতদূর চোখ যায়, ততদূর পর্যন্ত পাওয়া যায় গোলাপের সৌরভ। লাল, হলুদ, সাদা বাহারি রঙের গোলাপ! গোলাপ গ্রামে চাষীরা গোলাপ ছাড়াও চাষ করে গ্লাডিওলাস, জারভারা ও রজনীগন্ধা।

কোথায় খাবেন

সাদুল্লাহপুর ঘাটে একটি ছোট বাজার আছে। এখানে অনেকগুলো টং দোকান আছে। এছাড়াও আছে সাধারণ মানের হোটেল। সেখানে খাওয়া দাওয়া করতে পারেন। টং দোকানে বসে চা নাস্তা সেরে নিতে পারেন। চাইলে প্রয়োজনীয় খাবার ঢাকা থেকে বহন করতেও পারেন।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে মিরপুর ১ এ যাবেন। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে দিয়া বাড়ি বটতলা ঘাটে যাবেন। দিয়া বাড়ি ঘাট থেকে সাদুল্লাহপুরের উদ্দেশ্যে নৌকা ছাড়ে। নৌকা ঠিক সাদুল্লাহপুর ঘাটে থামাবে। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। তবে মনে রাখবেন সন্ধ্যা ৬ টার পর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আরেক রুটে টঙ্গী স্টেশন থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে কামার পাড়া বিরুলিয়া ব্রিজে চলে যান। সেখান থেকে বিশ টাকা অটো ভাড়ায় চলে যেতে পারেন সাদুল্লাহপুর।

নুহাশ পল্লী

গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ গাজীপুরে নুহাশপল্লী নামক বাগান বাড়ি তৈরি করেন। মূলত এই বাড়িটি পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। গাজীপুরের হোতাপাড়া বাজার থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালি গ্রামে নুহাশপল্লী অবস্থিত। ৪০ বিঘা জায়গা জুড়ে নুহাশপল্লীর অবস্থান। নুহাশপল্লীতে রয়েছে নানা রকম ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ। এখানে রয়েছে আড়াইশো প্রজাতির সবুজ গাছ।

এছাড়াও নুহাশপল্লীতে রয়েছে শুটিং স্পট, দীঘি ও ৩টি বাংলো। রয়েছে বৃষ্টিবিলাস ও ভূতবিলাস নামক বাড়ি, ট্রি হাউজ, বিভিন্ন ভাস্কর্য। ব্যস্ততার এক ফাঁকে আপনি ঘুরে আসতে পারেন লেখকের নিজ হাতে গড়া এই নন্দন কানন থেকে। নুহাশপল্লীর লিচু তলায় লেখকের সমাধিও দেখে আসতে পারেন।

যেভাবে যাবেন

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসে করে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে ছোট লেগুনায় করে নুহাশপল্লীতে যাওয়া যায়। এছাড়া নিজের গাড়ি দিয়ে যেতে পারেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই।

মৈনট ঘাট

দোহারে অবস্থিত মৈনট ঘাট মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিত। পদ্মার পাড়ের অপার সৌন্দর্য ও পদ্মার ঢেউ দেখা যায় মৈনট ঘাটে। ঢাকা থেকে কিঞ্চিৎ দূরের এই মৈনট ঘাটে গেলে পাওয়া যায় শীতল জলের ছোঁয়া। পদ্মার জেলে, নৌকা, শীতল জলরাশি, দিগন্তে মিশে যাওয়া নদী, চারপাশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ দেখলে আপনার মনে হবে কক্সবাজারে আছেন। চারপাশের সবকিছু আপনাকে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দেবে।

মৈনট ঘাটে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বর্ষাকালে। মনে হবে ভরা যৌবনা কিশোরী পদ্মা যেন রুপের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। তবে সব ঋতুতেই মৈনট ঘাট সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। মৈনট ঘাটের সবচেয়ে মাদকময় মূহুর্ত হলো সূর্য ডোবার মূহুর্ত। একবার সূর্যাস্ত দেখলে হাজার বার দেখার সাধ জাগবে। পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের সৌন্দর্য দেখতে বহু লোক ভিড় জমায় মৈনট ঘাটে। তাছাড়া এখানে গড়ে উঠেছে অনেক হোটেল। হোটেলে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। নদী থেকে তোলা জ্যান্ত ইলিশ মাছের স্বাদ অকৃত্রিম ও লোভনীয়। আস্ত ইলিশ মাছ ছাড়াও হরেক রকম ইলিশ পাওয়া যায় এখানে। ইলিশ ছাড়াও অন্য মাছ, মুরগী, খাসির তরকারি পাওয়া যায়। তবে মৈনট ঘাটে পানিতে নামা বিপদজনক। কারণ এটা নদী, সমুদ্র নয়। পাড় খাড়া। নদীতে নামলে দক্ষ সাঁতারু না হলে উঠে আসা মুশকিল হয়ে যায়।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে খুব সহজেই মৈনট ঘাটে যাওয়া যায়। গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে যমুনা পরিবহনে করে মাত্র ৯০ টাকা ভাড়া দিয়ে মৈনট ঘাটে পৌছানো যায়। ফেরার পথে একইভাবে ফিরবেন। মৈনট ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে শেষ বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৬ টায়। যাদের বাইক কিংবা গাড়ি আছে তারা সরাসরি মৈনট ঘাটে পৌঁছে যেতে পারেন। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সিএনজি স্টেশন থেকে আটি বাজার, আটিবাজার থেকে সিএনজিতে করে কোনাখোলা, কোনাখোলা থেকে দোহার-নবাবগঞ্জগামী একটি বাসে চড়ে যেতে পারবেন। যারা গাবতলী কিংবা হেমায়েতপুরে থাকেন তারা খুব সহজেই হেমায়েতপুর থেকে লোকাল সিএনজিতে করে নবাবগঞ্জ যেতে পারবেন।

পদ্মা রিসোর্ট

ঢাকার পাশে মনোরম পরিবেশে ঘোরাঘুরির জন্য পদ্মা রিসোর্ট চমৎকার স্থান। ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত পদ্মা রিসোর্ট মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকার কোলাহল নেই এখানে। এমন সুন্দর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধতায় ভাসাবে। পদ্মার বুকে ঘোরাঘুরি, মাছ ধরা, খাওয়া দাওয়া করে কাটিয়ে দিতে পারেন একটি বিকেল।

যেভাবে যাবেন
প্রথমে গুলিস্তান থেকে বিক্রমপুর পরিবহনে চড়ে যাবেন মাওয়া ফেরী ঘাট, সেখান থেকে লৌহজং চৌরাস্তা দিয়ে রিক্সায় বা অটোরিক্সায় পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন পদ্মা রিসোর্টে।
collected.......

image

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন