কবিগুরু ও একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন


ছবিঃ ইন্টারনেট

.

কবিগুরু হলেন বিশ্বের সেই বিরল ব্যক্তি যার লেখা গান তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত। ভারত, বাংলাদেশের পর তৃতীয় দেশটি হল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু বিষয়টির মধ্যে একটু প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে আমরা দেখবো শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতটি। 

শ্রীলঙ্কা মাতা 

মা লংকা আমি তোকে প্রণাম করি ,
হেমা তোর সমৃদ্ধি বিপুল,
দয়া আর মমতায় তুই অতুল,
আনাজ আর সুস্বাদু ফলেতে পূর্ণ ,
উজ্জ্বল রঙের সুগন্ধিতে ফুলে ফুলেল,
জীবন আর সকল ভাল বস্তুর ধাত্রী,
আনন্দ আর বিজয়ের আমার ভূমি,
আমার আভারী প্রশংসা স্বীকার করি।
আমাকে জ্ঞান আর সত্যের দান দেয়া জননী,
তুই আমার সামর্থ্য আর আন্তরিক বিশ্বাস, 
আমারা দিব্য জ্যোতি আর সংবেদনশীল জীব,
জীবন আর মুক্তির শ্বাস,
আমাকে বন্ধন মুক্ত প্রেরণা প্রদান কর,
নবীন বুদ্ধি আর শক্তিতে,
রোগ, ঘৃনা কলহ, সকল শেষ হয়ে যাক,
ভালবাসায় পূর্ণ এক শক্তিশালী রাষ্ট্র,
আমরা সবাই এক হয়ে আগ বাড়াই,
হে মা, আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবর্ষ উদযাপনকালে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্র, এই মর্মে একটি খবর পরিবেশন করে যে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতটির রচয়িতা ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। নিঃসন্দেহে একজন বাঙালি হিসেবে এখবরে আমাদের গর্ব হবার কথা । কিন্তু সন্দেহ থেকে যায় খবরটির বিশ্বস্ততার বা নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে । কারন সংবাদে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই । পাশাপাশি কবিগুরুর জীবনীকার বা গবেষকরাও এমন কোনো সূত্র দিতে পারেননি যে গানটির রচয়িতা কবি স্বয়ং । 

ওদিকে আবার দ্বীপরাষ্ট্রের নিজস্ব পোর্টালে জাতীয় সংগীতের কম্পোজার হিসাবে আনন্দ সামারাকুনের নামও আছে । তাহলে তার কৃতিত্ব নিয়ে এই প্রশ্ন কেন? উল্লেখ্য সংগীতটির সুর অনেকটা রবীন্দ্র সংগীতের অনুরুপ। উইকিপিডিয়া মতে ১৯৩০ সালে আনন্দ সামারাকুন চারুকলা ও সঙ্গীত শিক্ষার পাঠ নিতে বিশ্বভারতীতে আসেন । নিজ প্রতিভা বলে অল্পদিনের মধ্যে সামারাকুন কবিগুরুর নৈকট্য লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে তিনি গুরুদেবকে একটি গান লিখতে অনুরোধ করেন । রবীন্দ্রনাথ বাংলায়, 
'নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা, গানটি লিখে সুরারোপ করেন । ১৯৪০ সালে দেশে ফিরে, ১৯৪৬ সালে আনন্দ সিংহলি ভাষায় গানটি অনুবাদ করে একটি রেকর্ড বার করেন। ইতিমধ্যে তৈরী হওয়া জাতীয় সংগীত কমিটিতে আনন্দ গানটি জমাও দেন । সেই মত ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর গানটি শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে। 

কিন্তু কিন্তু গানটি পরবর্তীকালে সমালোচনায় পড়লে, আনন্দ পাল্টা নিবন্ধ লিখে মতামত ব্যক্ত করলেও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারেননি । সম্ভবত সে কারণেই জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ আনন্দের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই শ্রীলঙ্কা মাতার পঙতিতে কিছু পরিবর্তন আনে । সূত্রমতে এই অপমান ও দুঃখ সহ্য করতে না পেরে আনন্দ ১৯৬২ সালে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন ।

তবে সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত ভাষ্য সত্য হলে ধরে নিতে হয় আনন্দ অসততা করেছেন । রবীন্দ্র নামের গানের অনুবাদ তাঁর নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন । অন্যায়ভাবে নিজের বলে জাতীয় সংগীতের প্যানেলে জমাও দিয়েছেন । সেক্ষেত্রে বরং গ্লানি ও দহনের কারণেই আত্মহত্যা করেছিলেন বলে অনুমান করা হয় । পাশাপাশি বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখের যে একজন সম্মানীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যপ্রমান ছাড়াই এ ধরনের অভিযোগ আনাটা একটা অপরাধ বৈকি। শুধুমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করে এ ধরনের অভিযোগ আনাটা ওনার প্রতি অবিচারের নামান্তর বটে। 

899 Puntos de vista

Comentarios