বসন্তের সেই কবিতার মতো বলতেই হয়, গরম পড়ুক আর না-ই পড়ুক তাল পেকেছে। শুধু তা-ই নয়, পাকা তালে এখন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন খাবার।
পাকা তালের রস বা কাইয়ের সঙ্গে চালের গুঁড়া আর গমের আটা মিশিয়ে বানানো হয় তালের বড়া, চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানানো হয় পিঠা, দুধের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে বানানো হয় তালক্ষীর। এ ছাড়া কোথাও কোথাও খাওয়া হয় তালের রুমালি রুটি, ময়দা-আটার সঙ্গে মেখে পরোটা। তালের সরু চাকলি মানে তাওয়ার ওপর রেখে বানানো হলদে সাদা রঙের ফিনফিনে দোসা ক্ষীরে ডুবিয়েই যা খাওয়ার নিয়ম। এ ছাড়া এই আধুনিক সময়ে রন্ধন পটীয়সীরা তৈরি করে থাকেন কলাপাতায় তালপিঠা, তালের স্পঞ্জ কেক, কেক গ্লেইজ।
সম্ভবত সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় তালের ফুলুরি। অমৃত লাল বসু বলেছেন, ‘তাল ফুলুরির তত্ত্বে করিয়া জমক/ ধার্য হল লোক মাঝে লাগাবে চমক।’ আটার সঙ্গে তালরস বা কাই মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিলেই হয়ে যায় তালফুলুরি। নোনতা নাকি মিষ্টি, সে স্বাদের ব্যাপারটা নির্ভর করবে ‘খানেওয়ালা’দের ওপর—নোনতা খেলে লবণ আর মিষ্টি খেলে গুড়। সাধারণত মানুষ তালফুলুরি মিষ্টিই খায়।
তাল কিন্তু বাঙালি জীবনে বহু পুরোনো ব্যাপার। ঘটি না ডুবলেও বাঙালি পুকুরের নাম রাখে ‘তালপুকুর’। বাঙালির যাপিত জীবনে তালগাছ কেন পুকুরপাড়ে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আর যেসব ব্যাখ্যা পাবেন, সেসব শুনলে বেতাল হয়ে যেতে পারেন। তা ছাড়া বাঙালি তিলকেও তাল বানাতে পারে। বলা উচিত, তিলকে তাল বানাতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। কেন তিল তাল হয়, সে ব্যাখ্যাও নেই বাঙালির জীবনে। সম্ভবত এসব ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই বাঙালি তালপাখা দিয়ে হাওয়া খেতে খেতে তাল পাতায় লেখা পুঁথির গল্পে ডুবে যেতে ভালোবাসে।
সে যা হোক, তালপাখা দিয়ে হাওয়া খেতে খেতে তালফুলুরি যখন-তখন খাওয়া যায়।