চোর ধরার কৌশল


জ্ঞান এবং আকল আল্লাহ তা’য়ালার খাস নিয়ামত। জ্ঞানী ও আকলবন্দ ব্যক্তিরা তাদের সমস্যার সমাধান করেন খুবই সহজভাবে?

.

ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর যুগে এক ব্যক্তির বাড়ীতে চুরি হল। চুরি করার সময় বাড়ীর মালিক চোরকে চিনে ফেলতেই চোর ধমকি দিয়ে মালিককে বলল, “যদি এই চুরির ব্যাপারে আমার নাম কাউকে বলে দাও তবে তোমার বউ তালাক হবে- এই কথা তুমি মুখে উচ্চারণ করে বল, নচেৎ তোমাকে এখনই প্রাণে বধ করব। মালিক প্রাণের-ভয়ে বলল, “যদি আমি চুরির ব্যাপারে তোমার নাম কাউকে বলে দেই তবে আমার স্ত্রী তিন তালাক হবে।” এই কথা উচ্চারণ করিয়ে চোর পালিয়ে গেল।

পরদিন সকালে চুরির শোকে মালিক দিশাহারা হয়ে পড়ল। আরো কষ্ট হলো এজন্য যে, চোরকে সামনে ঘুরে বেড়াতে দেখেও কাউকে বলতে পারছেন না। বললেই বউ তালাক হয়ে যাবে।

অতঃপর ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর কথা তার মনে পড়ে গেল। দিশাহারা লোকটি ছুটে গেল হযরতের খেদমতে। বলল, ‘‘হুযুর এই পাড়ারই একজন লোক গত রাত্রে আমার বাড়ীতে চুরি করেছে । কিন্তু তার পরিচয় বলে দিলে আমার বউ তালাক হয়ে যাবে। সে চুরি করে যাওয়ার সময় আমাকে ভয় দেখিয়ে শর্তের তালাকের কথা উচ্চারণ করিয়ে গেছে।’’

ইমাম আবু হানিফা (রঃ) বললেন। ‘‘চিন্তার কোনো কারণ নাই । চোর ধরা যাবে। তোমার বউ তালাক হবে না।’’ ইমাম সাহেবের এই কথা শুনে সবাই অবাক হলো। চোরের পরিচয় বলে দিলে কোনো অবস্থায়ই বউ তালাক না হয়ে পারে না। পরে আলেমগণ বলাবলি করতে লাগলেন, ‘ইমাম সাহেব মাআসালায় হের-ফের করে এবার বদনামের ভাগী হবেন কোন সন্দেহ নাই।

কিন্তু ইমাম সাহেব বাড়ীর মালিককে ডেকে গোপনে বলে দিলেন  ‘‘যারা চুরি করেনি তারা তোমার সামনে আসলে বলিও, ‘এরা চুরি করেনি।’ আর যে ব্যক্তি চুরি করেছে সে তোমার সামনে আসলে চুপ করে থাকবা।’’

অতঃপর জুমুআর নামায শেষে মসজিদের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেয়ার হুকুম দিয়ে তিনি এবং বাড়ীর মালিক একটামাত্র খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। খোলা দরজাটি দিয়ে একটি করে লোক বের হয়ে যেতে লাগল আর ইমাম সাহেব মালিককে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘‘এই লোকটি চুরি করেছে? মালিক বলে, ‘‘না এই লোক চুরি করেনি। এইভাবে যত লোক বের হয়ে যায় মালিক ঐ একই কথা বলে- ‘এই লোকটি চুরি করেনি।’ অত:পর কিছুক্ষন পর একজন লোক বের হতেই, মালিককে জিজ্ঞেস করা হল; এই লোকটি কি চুরি করেছে? মালিক তখন চুপ করে রইল। সাথে সাথেই তিনি বুঝতে পারলেন এই লোকটিই চুরি করেছে। সুতরাং তাকে পাকড়াও করার হুকুম দিলেন।

এভাবে চুরির কথা বলল না তাই বউ তালাকও হল না। অথচ চোর ধরা পড়ে গেল। ইমাম আবু হানিফা (র) ফেকাহর অনেক জটিল বিষয়সমূহকে এভাবেই সহজ ও সাবলীল করে মানুষের সামনে রেখে দিয়েছেন। ফলে মানুষ তাকে ইমাম আযম বা মহান ইমাম হিসেবে অন্তরে স্থান দিয়েছে। জীবনে তিনি কোনো কথায় বা যুক্তিতে কারো কাছে পরাজিত হননি। (মাওয়ায়েজ) Read More

01716-386958

 

414 Puntos de vista

Comentarios