মানুষে-কুমিরে মিলেমিশে বাস


মানুষে-কুমিরে মিলেমিশে বাস

.

ভারতের পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট। এখানে চারোতা নামের একটি অঞ্চলে ৩০টির মতো গ্রাম আছে। মনে হতে পারে, গ্রাম তো সাধারণ বিষয়, এ নিয়ে আলোচনার কী আছে? তবে এই গ্রামগুলোয় যা আছে, তার কথা শুনে চোখ কপালে ওঠার মতো। এসব গ্রামের জলাশয়ে বাস মাগার বলে পরিচিত কুমিরের। এগুলো সংখ্যায় অনেক। এখানকার মানুষ তাদের ভয় পায় না। মানুষ আর কুমিরের সহাবস্থানের এই গল্প তুলে ধরেছেন বিবিসির সাংবাদিক জানাকি লেনিন।

এই ৩০ গ্রামের একটি মালাতাজ। আর দশটা গ্রামের মতো এখানেও পুকুর আর জলাশয়ের দেখা মেলে। গ্রামের মানুষ কাপড় ধোয়া, গোসল করার মতো কাজের জন্য এসব পুকুরের ওপরই নির্ভরশীল। অথচ এসব পুকুরের পানিতে বাস কুমিরের, সংসারও এখানে। দুই পক্ষই নিজেদের মতো আছে। কেউ কাউকে ঝামেলায় ফেলে না।

সারা দিন গ্রামটি ঘুরে দেখা গেল, জলাশয় থেকে স্থলে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুমিরের দল। গ্রামের মানুষ সেগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে নিজের কাজে যাচ্ছেন। ভয়ভীতির কোনো ছাপ এখানকার মানুষের চোখে-মুখে নেই। মজার ব্যাপার হলো, কুমিরদের মধ্যেও মানুষ দেখে সরে যাওয়ার কিংবা তাদের প্রতি সহিংস হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ নেই।

মালাতাজ গ্রামের এক বাসিন্দার কথাতেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। শীতের সকালে ওই নারী বাড়ির পাশের পুকুর থেকে কাপড়চোপড় ধুয়ে এনে মেলে দিচ্ছিলেন। কুমির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এত সকাল সকাল কুমিরের দেখা পাওয়া যাবে না। ১০টার দিকে কুমিরগুলো পানি থেকে ডাঙায় উঠবে। অপেক্ষা করে ১০টার দিকে সত্যিই কুমিরদের দেখা মিলল। দেখে মনে হলো, শীতের দিনে রোদ পোহাতে পাড়ে উঠেছে তারা।

মাগার কুমিরের এমন আচরণ সত্যিই অবাক করার মতো। বিপজ্জনক কুমিরের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে এই প্রজাতি। এখানে বছরের পর বছর মানুষ আর কুমির এমনভাবেই আছে। যেকোনো জায়গায় একটি কুমিরের দেখা পেলে হুলুস্থুল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অথচ চার হাজার বর্গকিলোমিটারের চারোতায় এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। শবরমতী ও মাহী নদী দিয়ে ঘেরা চারোতার ৩০ গ্রামে ২০০টির মতো মাগার কুমির আছে বলে ভলান্টারি নেচার কনজারভেন্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে জানা গেছে।

এখানকার প্রতিটি পুকুরে মাগার কুমিরের বিষয়ে বিপৎসংকেত টাঙানো আছে। তবে এসবের তোয়াক্কা কেউ করেন না। নিত্যদিন মানুষ পুকুরে গিয়ে নিজের কাজ করেন। আর কুমিরগুলোও বাচ্চা দিচ্ছে, মাছ খাচ্ছে, বাচ্চাদের বড় করছে।

২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী মাগার প্রজাতির কুমিরের হামলায় ১৮ জন মারা গেলেও এখানে ভিন্ন চিত্র। চারোতার ভলান্টারি নেচার কনজারভেন্সি জানিয়েছে, গত ৩০ বছরে ২৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নয় বছর বয়সী একটি মেয়ে মারা গেছে।

কুমিরের প্রতি গ্রামের মানুষের ভালোবাসাই হয়তো এমন সহাবস্থানের জন্ম দিয়েছে বলে দেবী নামের একটি গ্রামের প্রধান দুর্গেশভাই প্যাটেল মনে করেন। তিনি জানালেন, কুমিরের দল যাতে আরও জায়গা পায়, সে জন্য তাঁরা পুকুর খননের কথা ভাবছেন। অন্য গ্রামের মানুষও কুমিরের ভালোর জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। বিশেষ করে খাবারের অভাব যাতে না হয়, সেদিকে নজর রাখে। পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ায় ভাঙার মানুষের প্রতি তারা সহিংস হয় না বলে মনে করা হয়।

Comments