তেঁতুলের চাটনি কি না পাসান্দ? তাহলে কিন্তু চিন্তার বিষয়?


শরীরকে সচল রাখতে যে যে উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে, তার প্রায় বেশিরভাগই মজুত রয়েছে তেঁতুলে

.
চাটনি না খেলে চিন্তা বাড়বে, এমনটা কেন? আসলে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরকে সচল রাখতে যে যে উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে, তার প্রায় বেশিরভাগই মজুত রয়েছে তেঁতুলে। যেমন ধরুন থিয়ামিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, কপার, ফাইবার, পাইরোডক্সিন প্রভৃতি। আর এই সব উপাদানগুলি শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে একাধিক রোগ তো ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেই না, সেই সঙ্গে নানাবিধ শারীরিক উপকারও পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...


১. লিভারের ক্ষমতা বাড়ে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কাঁচা তেঁতুল বা এই ফলটি দিয়ে তৈরি কোনও পদ খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে একেবারেই সময় লাগে না। সেই সঙ্গে বিলিরুবিনের মাত্রাও ঠিক থাকে। ফলে লিভার সংক্রান্ত নানাবিধ রোগের খপ্পরে পরার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে!
 
 
২. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে: তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের যেমন শরীর থেকে বের করে দেয়, তেমনি দেহের অন্দরে উপস্থিত "ট্রোজেন ভাইরাস"দেরও মেরে ফেলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের রাজ্যে যে হারে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, তাতে প্রত্যেকেরই যে তেঁতুল খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!
 
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে তেঁতুলে খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
 
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: মশলা হিসেবে তেঁতুলকে কাজে লাগালে শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক অ্যাসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে সার্বিকভাবে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ক্ষিদে কমে যায়।আর একবার কম খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে সময় লাগে না।
 
৫. শরীরে ইনফ্লেমেশনের মাত্রা কমে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শরীরের অন্দরে ইনফ্লেমেশন বাড়তে শুরু করলে ধীরে ধীরে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপরই খারাপ প্রভাব পরতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানা রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে, সেই সঙ্গে জয়েন্টের সচলতা কমে যাওয়ার কারণে নড়াচড়া করার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। আর সবথেকে ভয়ের বিষয় হল শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়ছে কিনা, তা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়, তাই তো নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এই ফলটিকে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে ইনফ্লেমেশন বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ ভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়।
 
৬. হার্টের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে তেঁতুলের অন্দরে থাকা একাদিক ভিটামিন এবং খনিজ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা কমাতে ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল কোনও খামতিই রাখে না। তাই শরীর যখন এই দুই ক্ষতিকর রোগ থেকে দূরে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কোনও সুয়োগই থাকে না। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন তেঁতল খাওয়া কতটা জরুরি।
 
৭. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: সরাসরি না হলেও প্ররোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুনভাবে কাজে এসে থাকে। আসলে এই ফলটিতে উপস্থতি বেশ কিছু এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে সুগারের কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়তে থাকলে নানা কারণে রক্তে শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই তো অনিয়ন্ত্রত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।
 
৮. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: তেঁতুলে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটতে একেবারে সময় লগে না। এখানেই শেষ নয়, তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় "বিলিয়াস সাবস্টেন্স" যা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, একাদিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ক্রনিক কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দূর করতেও তেঁতুল দারুন কাজে আসে। এক কথায় পেটের অন্দরে ঘটে চলে ছোট-বড় প্রতিটি কাজ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে এই ফলটি। ফলে যে কোনও ধরনের পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
 
৯. নার্ভ সেলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বি কমপ্লেক্স হল এমন ভিটামিন, যা ব্রেন ফাংশনের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই ভিটামিনটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নার্ভ সেলের শক্তি বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কগনেটিভ ফাংশনে উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, তেঁতুলে বি কমপ্লেক্স ভিটামনিটি রেয়েছে প্রচুর মাত্রায়। তাই তো পড়াশোনা হোক কী কর্মজীবন, যে কোনও ফিল্ডে যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে তেঁতুল খাওয়া মাস্ট!
816 Views

Comments