বোল্লা


বোল্লা, বল্লা বা বোলতা (Wasp) কীটপতঙ্গের হাইমেনোপ্টেরা বর্গের কয়েকটি গোত্রের সদস্যদের সাধারণ নাম।

.

এদের দুই জোড়া স্বচ্ছ পর্দার মতো পাখা থাকে। এ কারণে এরা উড়তে সক্ষম। কীটপতঙ্গের মধ্যে বোল্লা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এরা মৌমাছি ও পিঁপড়ার নিকট-জ্ঞাতি। সবচেয়ে বড় প্রকারের বোল্লাকে ভীমরুল নামেও ডাকা হয়। এদের উদরের গোড়ায় সংকীর্ণ কোমরের মতো অংশ রয়েছে। স্ত্রী পতঙ্গে বিষগ্রন্থিসহ হুলের উপস্থিতি এদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে এদের বেশি দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৭ হাজার প্রজাতির বোল্লা আছে। বাংলাদেশে বোল্লার সব গোত্রের প্রতিনিধি আছে। এদের দেহের রং সাধারণত উজ্জ্বল নীল, কালো, হলুদ অথবা লালচে। তবে অনেক প্রজাতিতে একাধিক রঙের সমাহার দেখা যায়। অনেক প্রজাতিতে ডোরা দাগ থাকে।

বোল্লা বিশ্রামের সময় দেহের উপরিভাগে ডানা ভাঁজ করে রাখে। এদের কিছু প্রজাতি নিজেদের তৈরি বাসায় দলবদ্ধভাবে বাস করে এবং কাজের দায়দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। এ ধরনের বোল্লার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভীমরুল ও হলুদ বোল্লা। এদের বাসা বানানোর ধরন ভিন্ন প্রকৃতির। পুরনো নরম কাঠ ও উদ্ভিদের আঁশ একত্রে মিশিয়ে, চিবিয়ে লালার সংমিশ্রণে কাগজের মতো এক ধরনের পদার্থ তৈরি করে তা দিয়ে বাসা বানায়। কেউ কেউ কাদা দিয়েও বাসা বানায়। ঘরের দরজা-জানালার কার্নিশে, কাঠের আসবাবের গায়ে অথবা তার মধ্যে গর্ত করে এরা বাসা বানায়। অনেক প্রজাতি উঁচু জায়গায় মাটি খুঁড়ে, বিশেষ ধরনের সুড়ঙ্গ বা গর্ত করে সেখানে ডিম পাড়ে। মৌমাছি ও পিঁপড়ার মতো এদের কলোনিতেও থাকে রানি, পুরুষ ও শ্রমিক বোল্লা। কিছু প্রজাতির বোল্লা আবার কলোনিবদ্ধ হয়ে বাস করে না। নিজ নিজ বাসা আলাদাভাবে নিজেরাই তৈরি করে। এ ধরনের বোল্লার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ম্যাসোন, কার্পেন্টার ও ডিগারস (গর্ত খননকারী) বোল্লা। কোনো কোনো বোল্লা ফলমূলের ক্ষতি করে। তবে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও শুঁয়োপোকা দমনে এদের জুড়ি নেই।

বোল্লা বিপদে পড়লে হুলের সাহায্যে শত্রুকে আক্রমণ করে। এদের হুল বেশ বিষাক্ত। প্রজাতিভেদে বোল্লা লোম ছাড়া বা লোমবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এরা অন্য পোকামাকড়ের শুককীটের মধ্যে ডিম পাড়ে। বোল্লার শুককীট অন্য পোকার শুককীটকে খেয়ে বড় হয়। এরা কৃষিজমিতে আক্রমণকারী ক্ষতিকর পোকার শুককীট খেয়ে ফসলের ক্ষতির হওয়া প্রতিরোধ করে।

205 Views

Comments