ঝুমকো লতা


ঝুমকো লতা হলো ঝোপঝাড় ও বনজঙ্গলে বেড়ে ওঠা এক ধরনের লতাজাতীয় ফুলগাছ।

.

এই ফুল দেখতে অনেকটাই কানের অলংকার ঝুমকোর মতো। তাই এই ফুল ঝুমকো লতা নামেই বেশি পরিচিত। এর অন্যান্য নাম হচ্ছে রাধিকা নাচন, কৃষ্ণকমল, পঞ্চপাণ্ডব, রাখী ফুল প্রভৃতি। কোনো কোনো এলাকায় একে বেগম বাহার বলেও চেনে। ইংরেজি নাম চধংংরড়হ ঋষড়বিৎ. পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৫০ প্রজাতির ঝুমকো লতা ফুল রয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিচিত ঝুমকো লতার প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora incarnate.

ঝুমকো লতা ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। পরবর্তীকালে উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এই লতাগাছের বিস্তৃতি রয়েছে। এই গাছে গ্রীষ্মের শেষ দিক থেকে ফুল ফোটা শুরু করে। প্রতিটি পাতার গোড়া থেকে একটি করে ফুল ফোটে। ফুলগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। হালকা বেগুনি আভা মেশানো সাদা বা ক্রিম রঙের পাপড়ি। ফুলের ব্যাসার্ধ ৫-৬ সেন্টিমিটার। ঝুমকো লতার পাঁচটি পাপড়ি আর পাঁচটি বৃত্যাংশ এতটাই সদৃশ এবং এমনভাবে সাজানো থাকে যে বৃত্যাংশগুলোকেও পাপড়ি বললে ভুল হয়।

ফুলের কেন্দ্রে পাঁচটি সবুজাভ হলুদ পরাগধানীর ওপর ডিম্বাশয় থাকে। ঝুমকো লতার বেশির ভাগ প্রজাতির ফুলের রয়েছে মিষ্টি ঘ্রাণ।

জংলি ঝুমকো লতা নামের এই ফুলের আরেক প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora foetida এবং ইংরেজি নাম Wild Passion Flower। এটি বনবাদাড়ে বেড়ে ওঠা পরিচিত একটি ফুল। এই প্রজাতির ঝুমকো লতার ফুল সুগন্ধি নয়, তবে দেখতে আকর্ষণীয়। পাতা একান্তর, দুটি খাঁজ রয়েছে। ফুল বেগুনি ও সাদা রঙের। বৃতি পাঁচটি, দল পাঁচটি এবং বৃতি নল থেকে কিছুটা খাটো। ফল পাকলে কমলা লাল বর্ণের হয়। ঝুমকো লতার ভেষজ গুণ রয়েছে। এই গাছের লতার রস পিঠের ব্যথায় খুব উপকারী। পাতার রস মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এই রস জীবাণুনাশক। কৃমিনাশক হিসেবে এই রস খাওয়া যায়।

কাশি, অ্যাজমা, অ্যালার্জিতে এই রস উপকারী। ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগে এই রস খাওয়া যায়। এ ছাড়া ঝুমকা লতার ফুল বেটে মাথার তালুতে লাগালে ভালো ঘুম হয়। এই পাতার রস মৃদু বিষাক্ত। তাই গর্ভাবস্থায় এবং শিশুকে দুধ পান করানোর সময় চিকিৎসকরা ঝুমকো লতার বা পাতার রস খেতে নিরুৎসাহ করেন।      

Comments