মেরু এলাকা ব্যতীত পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ভ্রমর আছে। এখন পর্যন্ত ভ্রমরের সাতটি স্বীকৃত জৈবিক পরিবারে ১৬ হাজারেরও বেশি প্রজাতি পাওয়া গিয়েছে। এদের শতকরা ৯৫ ভাগই একাকী, নিঃসঙ্গ জীবন কাটায়; অবশিষ্ট প্রজাতিগুলো সামাজিক, দলবদ্ধ বা কলোনিবদ্ধ হয়ে কাজের দায়-দায়িত্ব ভাগ-বাটোয়ারা করে এক সঙ্গে বাস করে। একটি বড় আকারের কলোনিতে থাকতে পারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ভ্রমর; তবে আরো বড় চাকে এ সংখ্যা ৮০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। দল বেঁধে বাস করে এমন ভ্রমরদের মধ্যে মৌমাছি এবং বাম্বোল বী একান্তভাবেই সামাজিক।
একাকী বাস করে এমন ভ্রমর (Solitary bees) প্রজাতির মধ্যে আছে ম্যাসল বী, কার্পেন্টার বী, লিফকাটার বী প্রভৃতি। এসব প্রজাতির স্ত্রী সদস্য নিজেই মাটিতে গর্ত করে বাসা বানায়। এরা অন্য ভ্রমরদের চাকে ডিম পাড়ে। একাকি বাস করা ভ্রমরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যাসন বী (Mason bee)। এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৮ মিমি। এ দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য Trigona minima, লম্বায় মাত্র ২ মিমি। বাংলাদেশে ভ্রমরদের চারটি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে T. fuscobaltiata ক্ষুদ্রতম, লম্বায় মাত্র ৩.৪ মিমি। এসব ক্ষুদ্রাকার ভ্রমর গাছের ফাঁকফোকরের বা দেয়ালের ফাটলে, এমনকি ছোট গাছের পাতায় অথবা ডালেও বাসা তৈরি করে। ফুলের নির্যাস (nectar) বহন করার জন্য ভ্রমরদের পাকস্থলীতে মধু থলি (honey stomach) নামের একটি আলাদা অংশ থাকে। ভ্রমরদের সব স্ত্রী সদস্যের আত্মরক্ষার জন্য একটি হুল থাকে। এরা বেশির ভাগই নানা ফুল-মূল ও ফসলের পরাগায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধারণা করা হয়, প্রায় ৮০ শতাংশ ফসলের পরাগায়ণ হয় বিভিন্ন প্রজাতির ভ্রমরের মাধ্যমে।
বাম্বোল বী (Bee bumble) ভ্রমরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় রঙের বৈচিত্র্যের জন্য। ওড়ার সময় এদের গুঞ্জন ধ্বনি বৈশিষ্ট্যময়। মৌমাছির মতো এদেরও রানি, পুরুষ ও শ্রমিক—এই তিন ধরনের জাতিভেদ রয়েছে। এরাও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। তবে অনেক সময় কাজের দায়িত্ব বণ্টিত হয় তাদের দেহের মাপ অনুযায়ী। শীতের মৌসুমে নিষ্ক্রিয় থাকা রানি বসন্তে সক্রিয় হয়ে ইঁদুরজাতীয় ছোট স্তন্যপায়ী বা অন্য কোনো প্রাণীর পরিত্যক্ত বাসায় ঘর তৈরি করে ডিম পাড়ে। প্রথম প্রজন্মের সব শাবকই হয় শ্রমিক। পরে এরাই ডিম পাড়ার কাজ বাদে অন্য সব কাজের দায়িত্ব পালন করে। পরবর্তী সময়ে নতুন রানি ও পুরুষ বাম্বোল বীয়ের জন্ম হয়।