সার্কাস


সার্কাস (Circus) আসলে এক ধরনের বিনোদন প্রক্রিয়াবিশেষ।

.

সার্কাসশিল্পীরা তাঁদের সার্কাসে শারীরিক কসরত, বিশেষ কলাকৌশল, ভাঁড়ামি, মূকাভিনয়, রশির ওপর হাঁটাসহ নানা মাধ্যমে দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকেন। সার্কাস দলে হাস্যরসাত্মক অভিনয় ও খেলা প্রদর্শনীতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ। এ ছাড়া পশু-পাখিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নানা আমোদি খেলাও দেখানো হয়। সার্কাসে হরেক রকম বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় বেশ বড় আয়তনের খোলামেলা উন্মুক্ত জায়গার প্রয়োজন পড়ে। রোদ ও বৃষ্টি থেকে দর্শককে দূরে রাখতে এবং সার্কাস সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তাঁবু ব্যবহার করে অনেক লোকের বসার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়। দূরের দর্শকের জন্য সামনের সারির দর্শকদের তুলনায় উঁচু আসন তৈরি করা হয়। সার্কাসের মিলনায়তন সাধারণত গোলাকৃতির হয়ে থাকে। মিলনায়তনে মাঝখানে ঝলমলে পোশাক পরা শিল্পীরা তাঁদের দক্ষতা দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। গোলাকৃতি জায়গাটি রিং নামে পরিচিত। যিনি সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন, তাঁকে রিং মাস্টার বলে।

বাংলাদেশে প্রথম সার্কাস দলের নাম ‘দি লায়ন সার্কাস’। স্বাধীনতার আগে এ দেশে বেশ কিছু দল প্রায় নিয়মিত সার্কাস প্রদর্শনী করত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—‘দি বেবি সার্কাস’, ‘দি আজাদ সার্কাস’, ‘দি রয়েল পাকিস্তান সার্কাস’, ‘দি ইস্ট পাকিস্তান সার্কাস’, ‘দি আর এন ডল ড্যান্স সার্কাস’, ‘লক্ষ্মীনারায়ণ সার্কাস’ ইত্যাদি। স্বাধীনতার পর সার্কাস দলের মধ্যে ছিল দি রয়েল বেঙ্গল সার্কাস, দি বুলবুল সার্কাস, দি নিউ স্টার সার্কাস, দি ন্যাশনাল সার্কাস, দি রাজমনি সার্কাস, নিউ সবুজ বাংলা সার্কাস, দি সোনার বাংলা সার্কাস। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সার্কাস মালিক সমিতি গঠিত হয়। প্রথম দিকে এ দেশের সার্কাসে নারীদের অংশগ্রহণ খুব একটা ছিল না। তখন নারীর ভূমিকায় পুরুষরাই অভিনয় করত। তবে সাম্প্রতিকালে এ দেশের সার্কাসে নারীর অংশগ্রহণ লক্ষ করার মতো। যেমন—দি রয়েল বেঙ্গল সার্কাস দলের সদস্যের ৮০ ভাগ নারী। বেশির ভাগ খেলাও দেখিয়ে থাকে নারীশিল্পী। নারী ছাড়াও বহুসংখ্যক শিশুশিল্পী এ দেশের সার্কাস প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত। 

পেশাদারি সার্কাস দলের পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্রামীণ হাট-বাজারে কিছু স্বাধীন পেশার সার্কাসজীবীকে দেখা যায়। প্রদর্শনীর জন্য তাঁদের কোনো প্যান্ডেল, টিকিট কাউন্টার বা মূল্যবান ও ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। তাঁরা দু-তিনজন বা চার-পাঁচজনের ছোট দলে সার্কাসের কিছু খেলা বা কসরত দেখিয়ে উপস্থিত দর্শকের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকে।

 

Comments