শুরু হলো করোনার নতুন ঢেউ


শুরু হলো করোনার নতুন ঢেউ।

.

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে করোনায় আক্রান্তের হার ক্রমেই কমছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। তখনই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে মার্চ মাসে আবার করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

অবশেষে তাই হলো। বৃহস্পতিবার সারা দেশে পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার সাড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রমণক্ষম যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন বাংলাদেশেও বেশ কিছু মানুষের শরীরে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে করোনা কিছুটা কমার কারণে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা একেবারেই কমে গেছে। ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবারও খুব নাজুক হয়ে পড়ার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

করোনা শনাক্তের হার কমে আসায় ৩০ মার্চ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার এবং ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা চলছে। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় নিতেই হবে। অনেক অভিভাবকও মনে করেন, পরিস্থিতি এভাবে খারাপের দিকে যেতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো কিছুদিন বন্ধ রাখা যেতে পারে। 

কিন্তু শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলেই কি আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব? ছুটির দিনগুলোতে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না এবং প্রায় কেউই মাস্ক পরেন না। মার্কেট, বিপণিবিতানগুলোতে আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, এখন সেগুলো নেই বললেই চলে। গণপরিবহনগুলোতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয় এবং বেশির ভাগ যাত্রীই মাস্ক পরেন না। তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে কিভাবে? এদিকে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রগুলোও (আইসিইউ) রোগীতে ঠাসা। ফলে অতি জরুরি হলেও আইসিইউতে নতুন রোগী স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। আইসিইউ শয্যার জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন। আর এই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছে। আইসিইউ সেবার নামে কয়েক গুণ অর্থ আদায় করছে।

মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হাসপাতালগুলোতে করোনায় নিবেদিত ওয়ার্ড, শয্যাসংখ্যা ও আইসিইউ সেবার সুযোগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মানোন্নয়ন ও সেবামূল্য যৌক্তিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Comments