ফিটকিরি


ফিটকিরি হলো সোডিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি যৌগ লবণ।

.

এটি একপ্রকার অর্ধ স্বচ্ছ কাচসদৃশ কঠিন পদার্থ। এর রাসায়নিক নাম পটাশ এলাম। ইংরেজিতে এটি এলাম (Alum) নামে পরিচিত। এটি দামে সস্তা, সহজলভ্য এবং ভালো জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত পানি পরিশোধনের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। এর রাসায়নিক সংকেত K2SO4AL2(SO4)3.24H2O।

দাড়ি কাটতে গিয়ে ব্লেডে গালটা আচমকা কেটে গেলে, আফটার সেভের বিকল্প হিসেবে ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। এর স্বাদ মিষ্টি ও কষা এবং অত্যন্ত শুষ্ক প্রকৃতির। মূলত এটি খনিজ দ্রব্য; কিন্তু বর্তমানে কৃত্রিমভাবেও ফিটকিরি তৈরি করা হয়। ওষুধশিল্পে লাল রঙের স্বচ্ছ ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়। মুখের ভেতরে ঘা বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে দুর্গন্ধ হলে হালকা গরম পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়। ফিটকিরি উকুননাশক হিসেবেও কাজ করে। গরমে অতিরিক্ত ঘামলে ফিটকিরি মেশানো পানিতে সপ্তাহখানেক গোসল করলে ঘাম কমে আসে, স্বস্তি মেলে। দাঁতের যন্ত্রণা দূর করতেও ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। আগের দিনে মেয়েরা রূপচর্চায় ফিটকিরি ব্যবহার করত। কারণ ফিটকিরি ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। এ ছাড়া মুখে ব্রণ, ফুসকুড়ি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া রোধে ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। ঠাণ্ডা লেগে গলা ব্যথা হলে বা গ্ল্যান্ড ফুলে গেলে গরম পানিতে একচিমটি লবণ ও ফিটকিরি চূর্ণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফিটকিরিকে মোমের সঙ্গে মিশিয়ে লোমনাশক ক্রিম প্রস্তুত করা হয়। কাগজ ও চামড়া শিল্পে ফিটকিরি ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকরা যে কাপড় ও কাগজ ব্যবহার করেন তা আগুনে পোড়ে না (Fire proof)। এ ধরনের কাপড় ও কাগজ বানাতে ফিটকিরির প্রয়োজন হয়। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রে যে রাসায়নিক দ্রব্য থাকে তা ফিটকিরি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়।

তবে ফিটকিরি আমাদের উপকারের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিও করে থাকে। ফিটকিরি পানির পিএইচ হ্রাস করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে পানিতে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফিটকিরি মিশ্রিত পানি চোখের সংস্পর্শে এলে চোখ জ্বালা করে। পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করলে পানির কিছু জীবাণু যেমন—ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস হলেও ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। ফলে ফিটকিরির সাহায্যে পরিশোধিত হওয়া পানি খেলে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয় ও কৃমি সংক্রমণ জাতীয় রোগ থেকে রেহাই পাওয়া গেলেও হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসজনিত রোগ জন্ডিস থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।

Comments