শুভ সূচনা হলো টিকার


২৬ জনের শরীরে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে গতকাল বুধবার দেশে করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে।

.

গতকাল বিকেল পৌনে ৪টায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা প্রথম টিকা নেন। এর কিছুক্ষণ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। রুনুর পর প্রধানমন্ত্রীর সামনে আরো চারজন টিকা নেন। তাঁরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ, কুর্মিটোলা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ লুত্ফুল মবিন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দিদারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই টিকা নেওয়ার সময় কথা বলেন এবং উৎসাহ সাহস জোগান।

উদ্বোধনী পর্বের পরে আরো ২১ জনকে টিকা দেওয়া হয়। গতকাল উদ্বোধনী দিনে টিকা দেওয়ার জন্য মোট ৩২ জনের নাম তালিকায় থাকলেও উপস্থিত ছিলেন ২৭ জন। এর মধ্যে সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার শারীরিক কারণে টিকা নিতে পারেননি। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, গত রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁরা সবাই ভালো, সুস্থ স্বাভাবিক আছেন। কারো মধ্যেই কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কুর্মিটোলা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. বি এম খুরশীদ আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

অনুষ্ঠানস্থলে সরকারি সংবাদমাধ্যম ছাড়া কোনো বেসরকারি সংবাদমাধ্যম রাখা হয়নি। যদিও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলে এবং অনলাইনে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানের পরপরই উন্মুক্ত করা হয় টিকা নেওয়ার জন্য সরকারের তৈরি সুরক্ষা নিবন্ধন অ্যাপ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস এসে যেন বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল। কি ধনী কি গরিব, কাউকে বাদ দিল না। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, চলাফেরা সবই যেন থেমে যায়। মানুষের কাজকর্ম সব বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। আরো কী করা যায় সে জন্য কাজ করছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে খবর আসে টিকার উদ্যোগের। আমরা সব জায়গায় চিঠি পাঠিয়ে খোঁজখবর নিতে চাই। এই পর্যায়েই আমরা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো আমার সঙ্গে যোগোযোগ করে, আমি তাদেরকে বলিযত দ্রুত সম্ভব টিকা আনার জন্য চেষ্টা করো। আমরা জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করি। অর্থ মন্ত্রণালয়কে অর্থ বরাদ্দের জন্য বলি। যত টাকা লাগে দিতে বলি। কারণ  দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে নার্স, ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিয়েছি। সবাইকে প্রণোদনা দিয়েছি। করোনা মোকাবেলায় যারা কাজ করেছে তাদেরকেও প্রণোদনা দিয়েছি। সেই সময় যারা কাজ করেছে সেই ডাক্তার, নার্স, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসারের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনও মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় যে টিকা এনেছি তা দেওয়া শুরু হচ্ছে। আরো তিন কোটি টিকা আসবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে সব ভালো কাজের সময়ই কিছু নেতিবাচক মত প্রকাশের লোক থাকে, হয়তো তাদের কাছ থেকে মানুষ কোনো সহযোগিতা পায় না।

Comments