শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক


শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

.

জন্মঃ ২৬ অক্টোবর ১৯৮৩
আবুল কাশেম ফজলুল হক তার পুরো নাম। তবে লোক মুখে তিনি ‘শেরে বাংলা’ বা ‘হক সাহেব’ নামেই অধিক পরিচিত। ২৬ অক্টোবর ১৯৮৩ সালের কোনো এক শুভ মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলার-আকাশ বাতাস উদ্বেলিত কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের সংসার আলোকিত করে বাকেরগঞ্জের সাঁটুরিয়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন বাংলার বাঘ খ্যাত এই মানুষটি। তিনি ছিলেন তার পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র ।

শিক্ষাজীবন:

বাড়িতে মায়ের কাছ থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। বাড়িতে শিক্ষকদের কাছ থেকে আরবি, ফার্সি এবং বাংলা ভাষা শিখতেন। পরযায়ক্রমে ১৮৮১ সালে তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তি হন, ১৮৮৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে লাভ করেন এবং ১৮৮৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সেসময়ে ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৮৯১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৩ সালে তিনি গণিত, রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায় অনার্সসহ প্রথম শ্রেণিতে বি.এ পাশ করেন। বি.এ পাশ করার পর তিনি ইংরেজী ভাষায় এম.এ করার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার ছয় মাস আগে তার এক বন্ধুর কথার প্রতিবাদ করার জন্য ইংরেজি ছেড়ে তিনি অঙ্কশাস্ত্রে ভর্তি হন এবং মাত্র ছয় মাস অঙ্ক করেই তিনি প্রথম শ্রেণি লাভ করেন।

পারিবারিক জীবন:

পারিবারিক জীবনে এ.কে ফজলুল হক নবাব আবদুল লতিফ সি.আই.ই-এর পৌত্রী খুরশিদ তালাত বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই সংসারে তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক ইবনে আহমদের কন্যা জিনাতুন্নেসা বেগমকে বিয়ে করেন। কিন্তু এখানে ভাগ্য বিড়ম্বনা। জিনাতুন্নেসা নি:সন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে শেরে বাংলা মীরাটের এক মহিলাকে বিয়ে করেন।

তার অবদান:

বাংলার শিক্ষা, সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য সকল ক্ষেত্রে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের রয়েছে অসমান্য অবদান। তিনি বুঝতে পারেন একমাত্র শিক্ষার অভাবেই পদে পদে এদেশের মানুষ অবহেলিত হচ্ছে। সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি শিক্ষার প্রতি ব্যাপক জোর দেন। তাই শিক্ষা বিস্তারকে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম কর্ম উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ফজলুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরে তার প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় মুন্সিগঞ্জে প্রতিষ্ঠা হয় হরগঙ্গা কলেজ। তার নিজ গ্রামে ও একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি এখানে মাদ্রাসা ও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তপসিলী সম্প্রদায়ের শিক্ষার জন্য তিনি প্রথম বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে কলকাতায় লেডি ব্রার্বোন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি মুসলমানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন। শিক্ষা বিস্তারে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের ভূমিকা অনন্য। কলকাতার ও দেশে তিনি অনেক স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় মুসলিম শিক্ষা সমিতি গঠন করেন। এই শিক্ষা সমিতির মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের শিক্ষাকে ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯২৪ সালের ১ জানুয়ারি এ. কে. ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। মন্ত্রীত্বের বয়স ছয় মাসের হলেও তিনি উক্ত সময়ে কলকাতায় একটি ১ম শ্রেণীর কলেজ স্থাপন করেন। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন উদার ব্যক্তিত্ব। ১৯১৩ সালে তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৫ সালে তিনি কৃষক প্রজা আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯১৮ সালে তিনি একদিকে মুসলিম লীগের সভাপতি অন্যদিকে নিখিল ভারত কংগ্রেসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ফজলুল হকের অসাধারণ নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এক কথায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি ইতিহাস। তিনি ছিলেন কৃষকদের প্রিয় ‘হক সাহেব’। বাঙালি মুসলমানদের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে ছিলো তার অসামান্য অবদান। তার মহান ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দর্শন তাকে অল্প সময়ে করে তোলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। শিক্ষা প্রসারের জন্য এ. কে. ফজলুল হকের অবদান বাঙালি জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

পরলোকগমন:

১৯৬২ সালের, ২৭ এপ্রিল ৮৬ বছর বয়সে বর্ণাঢ্য এক সামাজিক, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষে এই মহান ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন।

Comments