ছেলেটির বয়স ৮-৯ হবে। শ্যামলীর রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় দেখলাম কিসের যেন একটি জটলা বেধে আছে ফুটপাতের পাশে। দেখলাম ১টি শিক্ষিত ছেলে ছোট বিরিয়ানী দোকানের মালিকের সাথে কথা কাটাকাটি করছে।

এই যে ভাই, এই ছেলেটির বয়স কত? আপনি একে দিয়ে শিশুশ্রম করাচ্ছেন কেন?
^ভাই গরীব মানুষ আমরা, পেটের দায়ে ফুটপাতে বিরিয়ানী বেচি।
তাই বলে আপনি শিশুশ্রম করাতে পারেন না, এটা দন্ডনীয় অপরাধ।
^ভাই ভুল হয়ে গেছে ভাই, মাপ করে দেন ভাই।
কিসের মাপ? তোদের জন্য দেশের আজ এই অবস্থা। তোদেরকে পুলিশে দেওয়া উচিত।
^ভাই মাপ করে দেন ভাই, ভুল হয়ে গেছে ভাই, আর বেচুম না ভাই। বলে দোকানী কেঁদে শিক্ষিত ছেলেটির পা জড়িয়ে ধরল। চোখ বেয়ে আজস্র পানি পড়ছে লোকটির।
এমন সময় পাশে থাকা লোকজনের মধ্যে কয়েকজন উৎসুক লোক দোকানীর মুখে, পিঠে যে যেভাবে পারে কিল ঘুষি আরম্ভ করল, সালার ব্যাটা ছোট মানুষ দিয়া কাজ করাও।

শিক্ষিত ছেলে সুযোগ বুঝে সেলফিসহ মোবাইলে কয়েকটা ছবি তুলে কেটে পড়ল। কিছুক্ষন পর ফেইসবুকে পোস্ট করল, গ্রুপে শেয়ার করল ঘটনাটি-- "জেগে উঠুক জাগ্রত বিবেক, শিশুশ্রম বন্ধ হোক। আসুন আমরা সবাই ঐসকল পথ শিশুদের পাশে দাড়াই"। পোস্টের সাথে সাথেই সেলিব্রেটি!!!
সাথে সাথে হাজার হাজার লাইক, রিয়্যাক্ট, কমেন্টস, বাহবাহ জয়ধ্বনী।

ঘটনা শান্ত হওয়ার পর আমি এক প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে দোকানের বেঞ্চে বসে পড়লাম। ছোট ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, নাম কি তোমার? ছেলেটির চোখে মুখে ভয় ফুটে উঠেছে।

ভয় পেয়োনা, আমি পুলিশ না। বল।

^^রতন।
কোথায় থেকে এসেছ?
^^জানিনা।
ভয় নেই তোমার, বল। আমি তোমার ভাইয়ের মত।
^^স্যার, সত্যিই জানিনা।
তখন দোকানী কথা বলা শুরু করল।
^^^স্যার, ও আমার ছেলে। পেটের দায়ে বাপ ব্যাটা মিলে ফুটপাতে বিরিয়ানী বিক্রি করি।
তোমাদের বাসা কোথায়?
^^^মোহাম্মদপুর।
সংসারে আর কে কে আছে?
^^^কেউ নেই স্যার।
মানে কি, তোমার বউ, পরিবার কোথায়?
^^^স্যার ১০ বছর আগে বউ আর আমি ঢাকা আসছিলাম, অভাবের জন্য বউ গার্মেন্টস এ চাকুরী করত। কিন্তু, অভাব তো শেষ হওয়ার নয়। আমি সারাদিন হোটেলে কাজ করতাম। আমার বউয়ের পেটে যখন সন্তান আসে প্রসবের সময় বউ আর বাচ্ছা দুজনেই মারা যায়। অভাবের কারনে ঠিকসময় চিকিৎসা করাতে পারেনি, তাই বউকে হারালাম।
তাহলে রতন কে?
^^^^স্যার, রতনকে আমি আগারগাও ময়লা পরিস্কার করার সময় কুড়িয়ে পাই। রতনের একদিনের বয়স হবে হয়তো তখন, তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। কয়েকদিন থাকার পর রতনকে কার কাছে তুলে দিব বুঝতে পারছিলাম না। রতনকে কিছুদিন আমার কাছে রাখার পর মায়ায় জড়িয়ে গেছিলাম। এক খালা ছিল আমার, এমনিতেই খালা ডাকতাম, আসল খালা না। বাসায় বাসায় কাজ করত খালা, খালাকে আমি কিছু টাকার বিনিময়ে একটা নির্দষ্ট সময়ের জন্য রতনকে রেখে যেতাম। রাতে আমি আর রতন একসাথে থাকতাম। রতন একটু বড় হলে আমার দোকানের পাশে বসাই রাখতাম। তখন আমি চা পান বিক্রি করতাম। আস্তে আস্তে রতন বড় হতে থাকে, দুজনে মিলে ব্যবসা করি।

লোকটির কথাগুলো শুনছিলাম আর শ্রদ্ধাবোধে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়তেছিল। এমন মানুষকে নিয়ে মানুষ নোংরা রাজনীতি করে, সেলিব্রেটি হতে চায় মানুষটির সংগ্রামী জীবন বিক্রয় করে।

রতনও কাঁদতে ছিল, তার জন্য আজ তার বাবাকে মার খেতে হয়েছে।

আসলে আমরা যা ভাবি বাস্তবে তা না ও হতে পারে, সেলফিবাজি, সমাজবাদী, মানবতাবাদী, জনপ্রিয়তাবাদী, মানবাধিকারবাদী না হয়ে আসুন সত্যটা জানি। প্রকৃত উদ্দ্যেশে সকলের মঙ্গলের জন্য কাজ করি। লাইক কমেন্টস রিএ্যাক্ট পাওয়ার জন্য অন্যের শান্তিকে নষ্ট করবেন না দয়াকরে।

(Collected)

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন