নফল ইলমের মর্যাদা কী?
যার উপর যাকাত ফরয নয় তার জন্য তো ঐ বিষয়ে জীবন সম্পর্কে ওহীর ইলম তালাশ করা ফরয নয়; কিন্তু সে যদি তা অর্জন করে তাহলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। এখন প্রশ্ন হলো, নফল ইলম হাসিলের মর্যাদা কতটুকু?
তেমনিভাবে যে এখনও বিয়ে করেনি সে যদি দম্পত্য জীবন সম্পর্কে ওহীর ইলম অর্জন করে তাহলে এ কাজটি কি বেহুদা বা ফালতু কাজ বলে গণ্য হবে।
যার উপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেই যদি এ বিষয়ে ইলম অর্জন করে তাহলে এটাকে কি বেগার শ্রম মনে করা হবে?
একটি হাদিসে থেকে এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট জওয়াব পাওয়া যায়। হাদীসটি হলো,
রাতের কিছু সময় ইলম চর্চা করা (শেখানো ও শেখা) সারা রাত জেগে (অন্য নফল ইবাদত) থাকার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
এ হাদিসে থেকে জানা গেল যে, সকল নফল ইবাদতের মধ্যে নফল ইলম চর্চা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ কারণেই যে আলেম নয় শুধু আবেদ তার তুলনায় আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব হাদিসে চমৎকার ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছেঃ যে দীনের একজন আলেম শ্রেষ্ঠ, যদি ও তিনি এত নফল এবাদত হয়তো করেন না। এর দ্বারা সকল নফল ইবাদতের মধ্যে নফল ইলম চর্চার মর্যাদা অনেক বেশি বলে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে ৩টি হাদিসই যথেষ্ট। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন।+++
আবেদের উপর আলেমের তেমনি শ্রেষ্টত্ব যেমন তোমাদের একজন সাধারণ লোকের উপর আমার মর্যাদা।
+++ আবেদের উপর আলেমের তেমনি শ্রেষ্ঠত্ব। যেমন সকল তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব।
+++ শয়তানের উপর একজন ফকীহ একজন ফকীহ (ইসলামী বিধানে জ্ঞানী) ব্যক্তি এক হাজার আবেদের চেয়েও শক্তিমান।
ওহূর ইলমের এ মর্যাদার কারণেই প্রত্যেক শিক্ষিত মুসলিমের জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জনের সকল সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। যদি সব সময় ইসলামী সাহিত্যে সঙ্গে রাখা হয় তাহলে সুযোগ পেলেই তা থেকে ইলম হাসিল করা যায়। আর সুযোগ তো পাওয়াই যায়।
১. কারো সাথে দেখা করতে গেলে কোন কারণে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হলে সময় পাওয়া যায়। যিকর করে বা দরূদ পড়েও এ সময়টা কাটানো যায়। কিন্তু ইলম হাসিলে করার মর্যাদা অনেক বেশি।
২. জলপথে, সড়ক পথে ও বিমানে প্রচুর সময় বেকার কেটে যায়। সাথে ইসলামী বই থাকলে সময়টা শ্রেষ্ঠ কাজে লাগানো যায়।
৩. শহরে যানজটে পড়লে দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়ে যায়। সাথে ইসলামী সাহিত্যে থাকলে সময়টা সেরা কাজে ব্যয় হতে পারে।
৪. বিছানার পাশে ইসলামী বই থাকলে ঘুম আসবার আগে কিছু ইলম হাসিল করা যায়।
৫. বই সাথে থাকলে কোথাও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়টাকেও অপচয় থেকে বাঁচানো যায়।
পার্থিব অন্যান্য জ্ঞানের কোনো শরয়ী মর্যাদা আছে কী?
কৃষিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা ইত্যাদি জ্ঞান ওহীর ইলম নয় বটে, কিন্তু এ সবের কোনো মর্যাদা ইসলামী দৃষ্টিতে আছে কিনা? এসব বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা তো স্বীকার করতেই হবে, তবে এ সব বিদ্যা অর্জন করাটা কি নিছক দুনিয়াদারি ব্যাপার? এসবের কি কোন শরয়ী মর্যাদা আছে?
একটি হাদীস থেকে এবিষয়ে আমরা এর সঠিক জওয়াব জানতে পারি।+++
অন্য সব ফরযের পর হালাল রুজী তালা মকরাও ফরয।
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, হালাল উপায়ে রোজগারের চেষ্টা করা ফরয। তাহলে আয় রোজগারের উদ্দেশ্যে কোন নাকোন পেশা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। যে পেশাই গ্রহণ করা হোক এর জন্য নির্দিষ্ট বিদ্যা অজর্ন করতেই হবে। ডাক্তারি পেশা গ্রহণ করলে তাকে ডাক্তারি বিদ্যা শিক্ষা করতেই হবে। চিকিৎসা করে রোগীদের নিকট থেকে টাকা নিয়েইযারা রুজী যোগাড় করে তারা যদি চিকিৎসা বিদ্যা ভালোভাবে আয়ত্ত না করে, যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন সে বিষয়েও প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীর সাথে প্রতারণা করে তাহলে তার আয় হালাল হবে না। তাই তার আয় হালাল করার প্রয়োজনেই তাকে ঐ বিদ্যা যথাযথভাবে অর্জন করতে হবে। ডাক্তারি বিদ্যা না শিখেই হাতুড়ে চিকিৎসকরা যে আয় করে তা কি হালাল হতে পারে।
তাহলে একথা প্রমাণিত হলে যে, হালাল রেজগারের চেষ্টা করা ফরয এবং রুজী হালাল করার প্রয়োজনে পেশাগত বিদ্যা যথাযথ শিক্ষা করা জরুরী। সুতরাং পার্থিব সব বিদ্যা অর্জন করা সরাসরি ফরয নয় বটে, কিন্তু পরোক্ষভাবে তাও ফরযের মর্যাদার অধিকারী। যিনি শিক্ষক তাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তার রুজীকে হালাল করতে হলে তাকে াতার বিষয়ের যথাযথ জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে তাকে পাঠ দানের বিদ্যাও আয়ত্ত করতে হবে। যে শিক্ষকের ক্লাসে ছাত্ররা পাঠদানে সন্তুষ্ট নয় তার বেতন হালাল হবে কি? যে শিক্ষক যোগ্যতার সাথে পড়ান ছাত্ররা তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। ছাত্রদের মন্তব্য থেকেই জানা যায় যে, কে ভালো শিক্ষক, আর কে ভালো নয়। এভাবেই আমরা পেশাগত বিদ্যার শরয়ী মূল্যায়ন করতে পারি।
শখের বিদ্যার মর্যাদার কী?
পেশার অতিরিক্ত কোন বিদ্যা শখ করে কেউ কেউ শিখে থাকে। যেমন হস্তরেখা বিদ্যা, জোতিবিদ্যা, ভাস্কর্যও চিত্রঙ্গণ বিদ্যা, যাদু বিদ্যা, গার্ডেনিং ইত্যাদি। মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর যে কোন বিদ্যাই শিক্ষা করা যেতে পারে পেশাগত বিদ্যা তো রজী রোজগারের জন্য শিখতেই হয়। কেউ সৌখিন হয়ে অন্য কোন বিদ্যা শিখলে শরীআতে কোন আপত্তি আছে কি না?
এ বিষয়ে নীতিগত কথা হলো, যে পেশা গ্রহণ করা হালাল নয় সে পেশাগত বিদ্যা অর্জন করা ও জায়েয নয়। হস্তরেকা বিদ্যা শিখে ত পেশা হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নয়। এ দ্বারা মানুষের কোন কল্যাণ হয় না; বরং হস্তরেখা দেখে কারো কিসমত বা আয়ু সম্পর্কে মতামত দেওয়া প্রতারণা মাত্র। এটা কোন নিশ্চিত বিষয় না। এ মতামত দ্বারা কারো কল্যাণ হবার কারণ নেই।
এ বিষয়ে বিস্তর মত পার্থক্যের সুযোগ আছে। মানুষের রুচি বিচিত্র। তাই এসব নিয়ে বিতর্ক করে লাভ নেই। যাদুকরের শিল্প বা হাতের সাফাই মানুষকে নির্মল আনন্দ দান করে। এর মধ্যে অশ্লীলতা না থাকারই কথা। বিনোদন হিসেবে তা দেখা যায়। কিন্তু এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা আপত্তি নেই। তাই এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করায়ও দোষ নেই।
মুমিন আখিরাতের সাফল্যকেই জীবনের প্যধঅন লক্ষ্য মনে করে। তাই সাবধানেই তাকে পেশা বাছাই করতে হয়। সে হিসাব কষেই শখের বিদ্যা সম্পর্কেও তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
Monir Zaman
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
℘rơɬɨҡ Տհɑħɑ
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Md. Kadar Ali
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?