"পবিত্র কুরআনে লজ্জা প্রসঙ্গে নবীর ঘটনায় বর্ণণা"
<=======★========★=======★=======>

হযরত মুসা (আঃ) যখন মাদায়েন শহরে পৌঁছালেন তখন দেখলেন, একটি কূপের ধারে ছাগলকে পানি পান করানো হচ্ছে।

وَوَجَدَ مِن دونِهِمُ امرَأَتَينِ تَذودانِ ۖ
"তাদের পেছনে ছিলো দুইজন নারী।"
- [সুরা কাসাসঃ ২৩]
.
ما خَطبُكُما ۖ
(মুসা (আঃ) বললেন,) "তোমাদের কি ব্যাপার!"
- [সুরা কাসাসঃ ২৩]

অর্থাৎ তোমাদের ছাগলগুলোকে পানি পান করাচ্ছ না কেন?
.
তারা বললোঃ -

لا نَسقى حَتّىٰ يُصدِرَ الرِّعاءُ ۖ وَأَبونا شَيخٌ كَبيرٌ
"আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ অন্য রাখালরা তাদের জানোয়ারগুলোকে নিয়ে সরে না যায়। আর আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ।"- [সুরা কাসাসঃ ২৩]
.
এ কথা শোনার পরে মুসা (আঃ) বললেনঃ "আমি তোমাদের ছাগলগুলোকে পানি পান করিয়ে দিচ্ছি।" অতঃপর তিনি অগ্রসর হন। ভীড় ঠেলে কূপের ধারে চলে যান। যে বালতি দশজনে টেনে তুলতো হযরত মুসা (আঃ) একাই তা অনায়াসে তুলে আনেন এবং ছাগলগুলোকে পানি পান করিয়ে দেন। তারপর ছায়ায় গিয়ে বিশ্রাম করতে বসেন এবং বলেন -

رَبِّ إِنّى لِما أَنزَلتَ إِلَىَّ مِن خَيرٍ فَقيرٌ
"হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অণুগ্রহ করবে আমি তার কাঙাল। [সুরা কাসাসঃ ২৪]
.
উভয় বোন বাড়ী ফিরে যায়। তাদের বৃদ্ধ পিতা জিজ্ঞেস করে, "আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরলে কি করে?" তারা বলে, "আব্বা! আজ এক ব্যাক্তি আমাদের ছাগলগুলোকে পানি পান করিয়ে দিয়েছে।" দ্বিতীয়জন বলে ওঠে- "তাকে কিছু প্রতিদান দেয়া উচিৎ।" বাবা বলেন, "যাও, তাকে নিয়ে আসো। তাকে গিয়ে বলো, আমাদের বাবা তোমাকে তোমার পরিশ্রমের বিনিময়ে কিছু বিনিময় দিতে চাচ্ছেন।"
.
এক বোন হযরত মুসা (আঃ) কে ডাকতে আসে। এখানে এই গল্প শোনানোর কি প্রয়োজন? প্রয়োজন এটাই কুরআনে কারীম সবকিছুই সংক্ষেপে বলে। হযরত মুসা (আঃ) কর্তৃক ছাগলকে পানি পান করানো, গাছের নিচে বিশ্রাম নেয়া, এক বোনের তাঁকে ডাকতে আসা, অতঃপর তারসাথে হযরত মুসা (আঃ)-এর গমন- এসব গল্প এখানে কেন শোনানো হয়েছে?
.
মূলত এর উদ্দেশ্য হলো- নারী জাতীর সামনে একটি বিধান আলোচনা করা। ইসলামী জীবনের একটি দিক তুলে ধরাই এর লক্ষ্য। ইসলামে এমন কঠোরতা নেই যে, একা নারী তার ঘর থেকে বেরই হতে পারবে না। তবে অবশ্যই সেই বের হওয়ার স্বতন্ত্র পদ্ধতি আছে। ইরশাদ হয়েছে -

فَجاءَتهُ إِحدىٰهُما تَمشى عَلَى استِحياءٍ
"তখন নারীদের একজন লজ্জাজড়িত চরণে তার কাছে এসে হাজির হলো। -[সুরা কাসাসঃ ২৫]
.
এই গল্প আল্লাহ তায়ালাই শুনিয়েছেন। শুনিয়েছেন একজন কন্যা হযরত মুসা (আঃ) কে ডাকতে এসেছে। কিন্তু সেখানে এই ঘটনাটি বলতে গিয়ে তিনটি শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। এই তিনটি শব্দের দ্বারা তার চলনভঙ্গিটি স্হির করা হয়েছে। স্হির করা হয়েছে তার চলন-চরণ লজ্জাজড়িত।
.
যারা আরবী ভাষাতত্বের খোঁজ-খবর রাখেন তারা বুঝবেন এই আয়াতে সেই নারীর চলনকে বাহনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বাহন যেমন তার মালিকের অণুগত হয়ে বাধ্যগতের মত ধীর কদমে অগ্রসর হয় তদ্রুপ এ কন্যাও লজ্জায় অণুগত হয়ে পথ চলছিল ধীর কদমে।
.
মূলত আয়াতের এই বর্ণণাভঙ্গির দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে এ শিক্ষাই দিতে চেয়েছেন। শিক্ষা দিতে চেয়েছেন লজ্জা কাকে বলে, এই মেয়েকে দেখে শিখ। সে এমনভাবে চলছে যেন লজ্জায় কাপড় জড়িয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত লজ্জাবৃত হয়ে ধীর কদমে পথ চলছে।
.
সেই সাথে মুসা (আঃ)-এর লজ্জার কথাও আলোচনা করেছেন। সেই লজ্জার কথা স্হান পেয়েছে হাদীস ও ইতিহাসে। আর নারীর লজ্জার কথা স্হান পেয়েছে পাক কুরআনে। কারণ, পুরুষের চাইতে নারীর জন্য লজ্জাই অধিক প্রয়োজনীয়। সে মুসা (আঃ)-এর কাছে এসে বললো -

إِنَّ أَبى يَدعوكَ لِيَجزِيَكَ أَجرَ ما سَقَيتَ لَنا
"আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেন।" [ সুরা কাসাসঃ ২৫ ]
.
এই কথা বলে মেয়েটি যখন বাড়ীর দিকে চলতে শুরু করে তখন হযরত মুসা (আঃ) তাকে বলেন, "তুমি আমার পিছনে আস। পেছন থেকে আমাকে পথ বলে দাও।" পবিত্র নবী, নিষ্পাপ নবী তাঁর চোখের উপর ভরসা করেননি। অথচ তিনি কালিমুল্লাহ। আমাদের মত নামাজী মানুষ নন।
.
আমরা হলে হয়তো মনের পর্দার কথা বলতাম। বলতাম মনের মধ্যে পূর্ব থেকেই পর্দা আছে। বলি, পর্দাতো মনের নয়। পর্দা তো হয় চেহারার। আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমিন।।!!!!!

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন