ইসলাম ও নারী স্বাধীনতা

নারী। ছোট্ট এই শব্দটিতে মিশে আছে পৃথিবীর যতো সুখ। স্নেহ-মমতা, প্রীতি আর ভালোবাসার অমৃত। কারণ, নারী মানেই কোনো না কোনো পুরুষের মা। যার স্নেহের আঁচলতলে কেটেছে তার শিশুকাল। নারী মানেই কোনো না কোনো পুরুষের ভগ্নি। যার সঙ্গে হেসে খেলে কেটেছে দুরন্ত শৈশব অার কৈশোর। নারী মানেই কোনো না পুরুষের জায়া। যার প্রেমময় চোখের চাহনিতে মুছে যায় সকল দুঃখ যাতনার গ্লানি। যার একচিলতে হাসিতে ক্লান্ত দেহে সঞ্চারিত হয় নব উদ্যম। নারী মানেই কোনো না কোনো পুরুষের কন্যা। যার অবুঝ অাচরণে সবুজ হয়ে ওঠে তার সুপ্ত স্বপ্নেরা। সর্বোপরি নারী মহান আল্লাহর এমনই এক অনন্য সৃষ্টি, যার উপস্থিতিকে উপেক্ষা করে মানব সভ্যতার আশা তো দূরের কথা, কল্পনাও করা যায় না। কেননা, বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

কিন্তু তারপরও সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা এই সমাজে নানাভাবে নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত হয়ে অাসছে। বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান থেকে। যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে সত্যিই কলঙ্কজনক অধ্যায়। সেই কলঙ্ক বিমোচনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাস্বরূপই যেন প্রতিবছর ৮ মার্চকে উদযাপন করা হয় 'বিশ্ব নারীদিবস' হিসেবে। কিন্তু তবুও মনের কোনে শঙ্কা থেকেই যায় এই ভেবে যে, এই নারীদিবস কি আসলেই নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরেছে? ঠিক যেরূপ দিয়েছে কল্যাণের ধর্ম ইসলাম।

আজ থেকে দেড় সহস্রাধিক বছর অাগেই ইসলাম নারীকে দিয়েছিল তাদের প্রাপ্য অধিকার। সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। এই ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যে ধর্ম নারী-পুরুষকে কখনোই বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখে না। বরং ইসলাম বলে, 'নারী ও পুরুষ একে-অপরের পরিপূরক।' এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।' (সূরা বাকারা : ১৮৭)

সেই আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগের কথাই ধরুন। তখনকার সময়ে নারীদের অবস্থান ছিল কতোই না নাজুক! যখন নারী মানেই ছিল পুরুষের ভোগপণ্য। নারীর প্রতি এইযে এমন অমানবিক অাচরণ করা হতো, তখন কিন্তু কোনো নারীবাদীর মুখ খুলেনি। তাদের ভূমিকা ছিল শুধুই নীরব দর্শকের। কিন্তু চুপ থাকতে পারলেন না ইসলামের প্রাণপুরুষ নবী মুহাম্মদ সা.।

তিনি নারীদের এহেন দুর্দিনে জেগে উঠলেন। সপ্তম শতাব্দীর সেই অন্ধকারের আরবে যখন 'কন্যা শিশুহত্যা' ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তখন মুহাম্মদ সা. ঘোষণা দিলেন, 'কন্যা শিশুর জন্ম অভিশাপ নয়, বরং আশীর্বাদ।' তিনি অারো বললেন, 'যে ব্যক্তির কন্যা সন্তান আছে, আর যে তাকে জ্যান্ত কবরস্থ করেনি কিংবা তার সঙ্গে লাঞ্ছনাকর আচরণ করেনি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেয়নি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।' (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৪৮)

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর

সমাজে নারীর অবস্থান যখন ছিল এমনই অমানবিক। তখন ইসলামই নারীর অধিকার ও মর্যাদার উন্নয়ন কল্পে বিধান জারি করেছে। পাশাপাশি নারী নির্যাতনের বিপক্ষেও কঠোর হুঁশিয়ারী করেছে। ইসলাম এমনই এক ধর্ম, যার চোখে নারী-পুরুষ কোনো বৈষম্যের বিষয় নয়। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের প্রথম পরিচয়ই হচ্ছে 'মানুষ'। আর মানুষ অতীব সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম জন্মগতভাবেই মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। চাই সে পুরুষই হোক কিম্বা নারী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'পুরুষ বা নারীর মধ্য থেকে যে-ই ভালো কাজ করলো, সে মুমিন হলে আমি তাকে একটি পবিত্র জীবনযাপন করার সুযোগ দেব এবং তারা যে কাজ করছিল আমি তাদেরকে তার উত্তম পারিশ্রমিক দান করব।' (সূরা আন-নাহল : ৯৭)

এছাড়াও ইসলাম নারীকে শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু এরপরও অনেকেই আছে, যারা ইসলামকে নারীবিদ্ধেষী বলে অপপ্রচার করে বেড়ায়। তাদের এই অপপ্রচার এ কথাই প্রমাণ করে যে, তারা শুধু ইসলামকে কলুষিত করার জন্যই এমন অমূলক মন্তব্য করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে নারীকে তার ন্যায্যতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নয়। অার এ জন্য তারা সর্বপ্রথম যে অস্ত্রটা প্রয়োগ করে থাকে, সেটা হলো কোমলমতী নারীদের অন্তরে এই বিদ্ধেষ ঢেলে দেয়া যে, 'ইসলাম নারীকে চার দেয়ালে বন্দি করে রাখে।'

অথচ এটা সম্পূর্ণই মিথ্যা। ইসলাম নারীকে কখনোই বন্দি করেনি। বরং নারীকে দিয়েছে নির্মল স্বাধীনতা। ইসলাম নারীকে শরীয়তের সীমার মধ্য থেকে অর্থনৈতিক ব্যাপারেও শ্রম-সাধনার অনুমতি দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নারীকে তার নিরাপত্তার জন্য যে মাধ্যমটিকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে, সেটি হলো পর্দা। এই পর্দা অহেতুক নয়। পর্দার প্রয়োজনীয়তা যে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝে আসে আমাদের সমাজচিত্রের দিকে তাকালেই। বলা বাহুল্য, ইসলাম এই পর্দাপ্রথাকে শুধু নারীর জন্যই আবশ্যক করেনি। আবশ্যকীয় করেছে পুরুষের জন্যও। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম।' (সূরা আন-নূর : ৩০)
(সংগ্রহীত)

image

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন