সালমান শাহ নামটি ৯০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতুর নাম, যিনি হুট করে এসে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে খুব তাড়াতাড়ি চলেও গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি চলে গেলেন। দিন গুনতে গুনতে ২০ বছর পার হয়ে গেল। তাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন ধূসর হয়ে গেছে। তবুও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক সময়ের রোমান্টিক যুবরাজ আজও বেঁচে আছেন দর্শকের মনোজগতে। জেগে আছেন তরুণ-তরুণীর তর্কে, স্মৃতিচারণায়। সবার মুখে প্রায়ই শোনা যায়- 'সালমান শাহর মতো নায়ক চলচ্চিত্রে আর কেউ এলো না!' কী এমন রসসম্ভার ছিল সালমান শাহর অভিনয়ে? কী এমন বৈচিত্র্য ও আকর্ষণ ছিল তার সাজসজ্জায়, যার আবেদন বাংলাদেশের লাখো কিশোর-কিশোরীর মনে অনুভূতির প্লাবন বইয়ে দিয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পাওয়া যায় সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্র দেখলেই। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬- মাত্র চার বছরের অভিনয় জীবন। এই স্বল্প সময়ে সালমানের প্রাপ্তি ছিল আকাশচুম্বী। সালমান নামের যুবরাজ বাংলা চলচ্চিত্রের মোড় ঘোরালেও স্বল্প সময়ে থেমে গেল সবকিছু। চিরবিদায় নিলেন নীরবে, নিভৃতে। কালো মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ল সালমান নামের জ্বলজ্বলে তারাটা, যা আর কোনোদিন অভিনয়ের আকাশে জ্বলে ওঠেনি। সালমানের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯৬ সালের দিকে। তারিখটা মনে নেই, সম্ভবত জুনের দিকে হবে। মতিন রহমানের 'মন মানে না' চলচ্চিত্রের শুটিং সেটে। দিলীপ বিশ্বাসের সঙ্গে শুটিং দেখতে আমি সেই সেটে যাই। এ ছবির নায়ক সালমান শাহ, নায়িকা শাবনূর। দিলীপ বিশ্বাস আমাকে সালমানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ওটাই ছিল তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। ওদিন শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে সালমানের সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়েই সালমান শাহর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়। আমরা নানা বিষয়ে হাসি-ঠাট্টা করি, যা মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়। এমন একজন মিশুক মানুষ এভাবে চলে যাবেন_ তা কোনেভাবেই মেনে নিতে পারি না। প্রথম সাক্ষাৎ আমার জন্য সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য ছিল, তা জানি না। কথাটা এ জন্য বললাম; সালমানের মৃত্যুতে 'মন মানে না' ছবির কাজটি আমাকেই করতে হয়েছিল। কাজটি করতে গিয়ে পায়ে পায়ে আমি সালমানের শূন্যতা অনুভব করেছি। একজন শিল্পীর কাছে তা যে কতটুকু কষ্টের, সে কথা বলে বোঝানো যাবে না।
সালমানের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল 'প্রিয়জন'। এটি নির্মাণ করেছিলেন মোহাম্মদ হোসেন। কাজ করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সালমানকে আরও ভালো করে চিনতে পারি। একজন অসম্ভব ভালোমানুষ ছিল সালমান। তার একটা ভালো গুণ ছিল, তিনি মানুষকে খুব সহজেই হাসাতে পারতেন। সালমান যখন হাসতেন বা আনন্দ করতেন, তা মূহুতের মধ্যেই উপস্থিত সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ত। উপস্থিত কারও যদি ভীষণ মন খারাপ থাকত, সালমানের কথা শুনে তিনিও হেসে উঠতেন। এমন গুণ নিয়ে খুব অল্প মানুষই পৃথিবীতে আসে। তাদেরই একজন সালমান। শুধু আমি না, চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষই এ কথা স্বীকার করবেন। এমন আরও অনেক গুণ ছিল তার মধ্যে। বিপদে-আপদে সব সময় সালমান আমাদের পাশে ছিলেন। নিজ অবস্থান থেকে যতটুকু পেরেছেন সালমান তা করেছেন। কত মানুষকে যে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তার কোনো হিসাব নেই। এত জনপ্রিয় হওয়ার পরও সালমানের মধ্যে কোনো অহঙ্কার ছিল না। সবার সঙ্গে আপন মানুষের মতোই মিশতেন। সালমান যেখানেই যেতেন, সেখানেই আড্ডা জমিয়ে তুলতেন। তাই তো সালমানের মৃত্যুতে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষ কেঁদেছেন। সঙ্গে কেঁদেছেন লাখো ভক্ত। একজন নায়কের মধ্যে যেসব গুণ থাকা উচিত, তার সবটুকুতেই পরিপূর্ণ ছিলেন সালমান। তাই তো আজও আমরা এ মানুষটির কথা মনে রেখেছি। সালমান শাহ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ

abdul kader
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟
Md. Sabbir Ahmed
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟
Habibullah Mullah
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟