আমার বয়স তখন উনিশ ছুঁই ছুঁই । সেদিন ও রাত করে বাসায় আসছিলাম ঝর্নার বাসায় পার্টি ছিল । আহা পার্টি আমি শপিং বিন্দাস লাইফ । বাসার কাছাকাছি ডাস্টবিন এ হাতে থাকা চিপ্স এর প্যাকেট ফেলে আসতে গেছি । চলেই আসছিলাম চোখে পড়ে রক্ত অনেক বেশি আর একটা উড়নায় অনেক পিপড়া কি জেনো খাচ্ছিল খুব তিপ্তি করে । উড়না সরিয়ে দেখলাম ফুটফুটে একটা বাচ্চা । অনেক রাত প্রথম এ ভয় ও পাইছিলাম । যায় হোক নিলাম হাতে আঙুল গুলো পিঁপড়া জেনো দখলে করে নিয়েছে । আলতো করে মুখ থেকে পিঁপড়া সরিয়ে দেখলাম কি মিষ্টি চেহেরা । ঘরের সামনে ছিলাম কিন্তু আর ঘরে যাওয়া হলো না । হাসপাতাল এ বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি এক নার্সের ডাকে উঠি । বাচ্চাটা খুলে দিয়ে বলে আপনার বাচ্চাটা খুব মিষ্টি দেখতে আপনার মত নাম কি আপা । আমি একটু চুপ করে জ্বি মানে আচ্ছা আমি কি ওকে নিয়ে যেতে পারি । হ্যা পারেন টাকাটা দিয়ে স্লিপ নিয়ে যান আর হ্যা ক সপ্তাহ পর আবার চ্যাক আপ করাবেন । বাসায় আসার পর দেখি মা-বাবা কাদঁছে । আমার ফোন কখন যে অফ হয় গেছিল । যাই হোক সব খুলে বলি ওদের । বাচ্চাটা কাঁদছিল । আমি ওকে কেমনে কি করবো বুঝতেছিনা । ইন্টারনেট থেকে বেবিস ফুড আনিয়ে খাওয়ালাম । আমার বান্ধবীরা দেখতে আসে আমি নাম রাখি অনন্ত । যেদিন ওকে পেয়েছিলাম সেদিন থেকে তার জন্মদিন ধরি । মা-বাবা নোংরা সমাজের দোহাই দিচ্ছে , অবিবাহিত মেয়ে বাচ্চা রাখলে সমস্যা । মা যে সমাজ ওকে না জায়েজ বলে দূর করে দিয়েছে সেই সমাজকে আমি কেয়ার করিনা । আমাকে না বলে মা অনন্ত কে কার কাছে দিয়ে দেয় । আমি বাসায় এসে অনন্ত বাবা কয় রে দেখ মামমাম কি আনছি । মা অনন্ত কোথায় অনেক রেগে বলছিলাম । আমাকে না বলে মা কাকে দিয়ে দিয়েছে । সেদিন থেকে ৪,৫ দিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ আর ঘরের মধ্যে থাকি । বার বার অনন্তের হাসি মাখা মুখ ভেসে আসছিল। আচ্ছা কেমন মা-বাবা এমন একটা বাচ্চা ফেলে দেয় , এরা কি মানুষ । কি জানি আমার অনন্ত কোথায় কি কেরছে ? কলিং বেল এর শব্দে কিছুটা জেগে উঠি । ভদ্র মহিলা বলছিল বাচ্চাটা রাখতে পারছিনা, শুধু কাঁদছে কিছুই খাচ্ছে না । আমি গেলাম অনন্ত কে দেখে আমার জেনো ঈদ এর মত লাগছিল । কোলে নিয়ে অনেক আদর করলাম । একটা মুচকি হাসি দিলো । মাও বুঝতে পারে আমি অনন্ত কে ছাড়া বাঁঁচবো না । অনন্ত কে পাওয়ার পর পার্টি,শপিং সব কিছু শেষ এখন অনন্ত আমার সব। ছোট একটা জব করি । বাবা রাগ করে তাই আমিও অভিমান করে চলে আসি । আমি আমার অনন্ত অনেক ভালোই আছি । অনন্তের প্রথম জন্মদিন সবাই শুধু ওর বাবার কথা জানতে চেয়েছিল আর আমি কেউকে উত্তর দিতে পারিনি । আমার আর ইমরান এর সম্পর্কটাও প্রায় শেষ শুধু অনন্তের জন্য । ধীরে ধীরে আমার ছেলেটা স্কুলে ভর্তির সময় হয়ে এসেছে । বাবা আর মা দুজনের নামের পাশে আমার নাম উত্তর দিলাম ওদের আমি অনন্তের বাবা আমি অনন্তের মা । যে মেয়ে সারা রাত অনলাইন থাকতো , দিনের পর দিন ঘুমাতো সে আজ ভোরে উঠে নামাজ পড়ে । আমার সব কাজ শেষ হলে অনন্ত কে ডেকে স্কুলে পাঠাই তারপর আমার জব এভাবে কেটেছে বহু বছর । দুনিয়ার সবার সাথে যুদ্ধ করেছি আমার অনন্তের জন্য । আমার ছেলে আমার অনন্ত অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে তাই বিদেশ এ স্কলারশিপ এ পড়াশোনা শেষ করে আসছে । চশমা মুছতে মুছতে অনন্ত পা ছুঁয়ে বলছিল মা আমি এসেছি আর যাবো না তোমাই ছেড়ে । সরকার থেকে পুরষ্কার দিবে আমার অনন্ত কে । আমিও গেলাম অনেক নাম শুনি আমার ছেলের । কি যে খুশি লাগছিল । আমার ছেলে সবার অনুমতি নিয়ে আমাকে মঞ্চে ডাকে । আর পুরষ্কার আমার পায়ে রেখে বলে মা তুমি যা করেছো তার বিন্ধু মাত্র আমি করতে পারবো না । নিজের সন্তান এর জন্য ও কেউ এতো ত্যাগ স্বীকার করেনা । আর তুমি কার কার না কার কেমন সন্তান তাও আমার জন্য যুদ্ধ করেছো ত্যাগ দিয়েছো সব ভালোবাসা । আমি থাপ্পড় দিয়ে বলি নিজের না মানে পেটে ধরলেই কি আসল মা হয় নাকি, বাসায় আই তুই বিরানি বন্ধ আজ থেকে । হাজার মানুষ হাত তালি দিচ্ছিল আর হাসছিল । সবার চোখে সেই সম্মান দেখে আমার গর্ভে বুক ফেটে যাচ্ছিল । আমার অনন্তের জন্য আজ হাজার হাজার মানুষ আমায় চেনে । একটা ফুটফুটে বউ এনেছি আমার অনন্তের জন্য । দোয়া করবেন সবাই এভাবে আমার অনন্তের জন্য আর ও অনেক অনন্ত আছে যারা হয়তো মিশে যায় না নোংরা সমাজে নোংরা হয়ে যায় । এমন ফুটফুটে অনন্তদের দোষ নই , দোষ আপনার আমার সামান্য আনন্দের জন্য আজ হাজারো অনন্ত হয় পুচে যাচ্ছে মাটিতে হয় মিশে যাচ্ছে নোংরা সমাজে ।
সচেতন হোন