ইতিহাস গড়লেন বাইডেন


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন।

.

পেনসিলভানিয়ায় পপুলার ভোটে জয় পেয়েছেন বাইডেন। এই অঙ্গরাজ্যের ২০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাচ্ছেন তিনি। এই জয়ে তিনি ম্যাজিক ফিগার ২৭০ ছাড়িয়ে গেলেন। এখন তাঁর মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৭৩।

এই জয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস গড়লেন বাইডেন। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পপুলার ভোট পাওয়ার ইতিহাসও সৃষ্টি করেন ৭৭ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট। তাঁর রানিংমেট কমলা হ্যারিসও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সিকি শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ট্রাম্প তৃতীয় কোনো প্রেসিডেন্ট যিনি, ক্ষমতাসীন হিসেবে নির্বাচন করে হেরে গেলেন।

নির্বাচনের ফল জানতে সবার দৃষ্টি ছিল পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের দিকে। এই রাজ্যে জিতলেই বাইডেনের জয় নিশ্চিত হতো। হয়েছে সেটাই। আগেই ২৫৩ ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পাওয়া বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৩–এ। বাকি পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প জয় পেলেও তাঁর ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬৫।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, পেনসিলভানিয়ায় বাইডেন পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৩ লাখ ১১ হাজার ৩১০ ভোট। ব্যবধান ৩৪ হাজার ৪১৪ ভোট। আর দেশজুড়ে পপুলার ভোটের হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত গণনা করা ভোটের মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৩ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প পেয়েছেন ৭ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার ২১০ ভোট।

গণমাধ্যমে জয়ের খবর প্রকাশের পর পর টুইট করেছেন জো বাইডেন। টুইট বার্তায় তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এই মহান দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে নির্বাচিত করায় সম্মানিত বোধ করছি। আমাদের সামনের কাজ কঠিন হবে। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি আমেরিকার সবার প্রেসিডেন্ট হবো— আমাকে আপনি ভোট দিয়েছেন কি দেননি, সেটা বিষয় নয়।’

এক নজরে জো বাইডেন
পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, জো বাইডেন হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জন্ম: বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তাঁর বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
বাবা-মা: বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তাঁর মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
শিক্ষা: বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
পরিবার: সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন ১৯৬৬ সালের নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন—জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। নিলিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। সিনেটর হওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।’ ৭৩ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৮৭ সালে একবার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে লড়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। তবে অসুস্থতার কারণে ১৯৮৮ সালে প্রাইমারির শুরুতে ক্ষান্ত দেন তিনি। ২০০৭ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় প্রাইমারিতে নামেন। সেই যাত্রায় তিনি বারাক ওবামা আর হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালে ওবামা তাঁকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০: ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক ভিডিওবার্তায় বাইডেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রাইমারিতে লড়াইয়ের আভাস দেন। দলীয় প্রাইমারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিস (যিনি তাঁর বর্তমান রানিংমেট), ভারমন্টের সিনেটর উদারপন্থী বার্নি স্যান্ডার্স, ম্যাসাচুসেটসের এলিজাবেথ ওয়ারেন, পেটি বুটেগিগ, অ্যামি ক্লুবেচারকে পেছনে ফেলে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। জাতীয় পর্যায়ে বেশির ভাগ জনমত জরিপে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

 

 

 

 

Comments