এক ভাইয়ের জীবন পরিবর্তনের ছোট একটা কাহিনী


১২ নভেম্বর ২০১৬, যথারীতি আড্ডা দিচ্ছিলাম ধানমন্ডি <br>লেকের পাশে। হুট করে এক ক্লোজ ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে <br>বলল ওর বা

এক ভাইয়ের জীবন পরিবর্তনের ছোট একটা কাহিনী,,,,
আমরা চাইলে খুব সহজেই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি,,,,,
১২ নভেম্বর ২০১৬, যথারীতি আড্ডা দিচ্ছিলাম ধানমন্ডি
লেকের পাশে। হুট করে এক ক্লোজ ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে
বলল ওর বাবা মারা গেছে। আমার মাঝে তেমন কোন
কিছু ফীল হল না। বয়স হয়েছে মারা যাওয়াটাই
স্বাভাবিক। আড্ডার মাঝে আংশিক সমবেদনা জানিয়ে
ফোন রেখে দিলাম।রাতে বাসায় আসার পর আরেক
দ্বীনদার বন্ধু ফোন দিয়ে বলল, ও জানাজায় যাবে!
আজীবন ওর দাড়ি,টুপি নিয়ে বন্ধুমহলে সবাই মজা
করতাম। আমি জানাজায় যেতে চাইনি। মরা বাড়ির
গুমোট পরিবেশ আমার ভালো লাগে না।
.
তারপরও আমাকে জোড় করে নিয়ে গেল। জানাজা শেষে
লাশ দাফনের সময় অনিচ্ছা স্বত্তেও ভদ্রতার খাতিরে
মাটি দিতে কবরের পাশে গেলাম। হঠাৎ কোথায় যেনো
হারিয়ে গেলাম। মুহুর্তে মনে হল একদিন এই জায়গায়
আমাকেও যেতে হবে।কি হবে এর ভেতরের পরিস্থিতি।
ভয়ে কাঁপছিলাম। দ্রুত মাটি দিয়ে আমি সরে গেলাম
কিন্তু আমার ভেতরের আন্দোলন তখনো চলছিল। সত্যি
বুঝতে পারিনি এ ভীতি আল্লাহর পক্ষ থেকে
হেদায়াতের পয়গাম নিয়ে আসবে।
.
.
মাটি দিয়ে ফেরার পথে পুরোটা রাস্তা আমি কোথায়
যেনো হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমার হুজুর বন্ধু বুঝেছিল
আমি একটা ভয়ের ঘোরে আছি। ও আমাকে আমার বাসায়
যেতে নিষেধ করলো এবং ওর বাসায় নিয়ে গেল। বাসায়
এসে ইশার নামাজের পর আমার বন্ধু সুরা ওয়াকিয়ার
বাংলা অনুবাদ শোনাচ্ছিল। দর দর করে মনের অজান্তে
চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল!বাসার লাইট টা বন্ধ করে
মুনাজাত করলাম। মুনাজাত শেষে বুঝতে বাকি নেই
জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
.
.
বলে রাখি আমি তখন দেশের নামকরা একটা প্রাইভেট
ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট এর ফাইনাল
ইয়ার এর স্টুডেন্ট ছিলাম। নিজের ভেতর কেমন যেনো
পরিবর্তন আসা শুরু করল।এখন আর আড্ডা,ফেইসবুক,
চ্যাটিং কিছুই ভালো লাগে না। মন চায় সারাক্ষন
কুরআনের বাংলা অনুবাদ পড়ি। ফোনবুক থেকে মেয়েদের
নাম্বার ডিলেট করেছি।ফেইসবুকে আনফ্রেন্ড আর ব্লক
করা শুরু করলাম। একজনকে ব্লক করতে গিয়ে হাত পা অবশ
হয়ে আসছিল। চোখ ঝাপসা হয়ে টপ টপ করে পানি
পড়ছিল। তারপরও তাকে ব্লক করে সব যোগাযোগ বন্ধ
করে দেই। কারন আল্লাহর ভালোবাসা তার ভালোবাসার
চেয়ে অনেক অনেক বেশী তীব্র!
.
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মাথায় আসলো আর শেইভ করবো
না। বাসায় জানালাম আমি দাড়ি রেখেছি! আম্মার
প্রথম কথা ছিল:
"বিয়ে করার জন্য মেয়ে পাবি?"
.
আমি কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাসা
থেকে সবাই উঠে পড়ে লেগেছে দাড়ি কাটানোর জন্য
কিন্ত আমি অনড়, কিছুতেই এই সুন্নত ছাড়া যাবে না। এর
কিছুদিন পর বাসায় কিভাবে যেনো জানলো আমি
প্যান্ট,শার্ট বাদ দিয়ে পাঞ্জাবি, পায়জামা পড়া শুরু
করেছি। বাসা থেকে ফোন দিয়ে সবাই কান্না কাটি শুরু
করেছে, কোন জঙ্গি দলে যোগ দিলি তুই? আমি কোন
কথা বলি না শুধু শুনি আর তাহাজ্জুদে আল্লাহর কাছে
দোয়া চাই।
.
ভার্সিটির স্টাইলিশ ছেলেটা পাঞ্জাবি,পায়জামা
পড়বে, মুখ ভর্তি দাড়ি রাখবে এটা কেউই মানতে
পারেনি।কিন্ত আমি ছিলাম অবিচল।সব ছবি ডিলিট করে
দেই।ল্যাপটপ দিয়ে দেই আপাকে।
.
___________
.
ইতিমধ্যে আমার রেজাল্ট পাবলিশড হল।অনেক ভালো
রেজাল্ট করেছি এবং সাথে সাথেই একটা রেপুটেড
কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের স্যালারির জবের
অফার পেলাম। কিছুদিনের মধ্যেই জবে যোগ দিলাম।
কাজ করছিলাম মন দিয়ে কিন্তু ১ মাস যেতেই বুঝতে
পারলাম এখানে ঘুষের লেনদেন চলে এবং এই ঝড় আমার
উপর দিয়ে যাবে। বসকে বললাম, স্যার এটা অন্যায়।
ইসলাম কখনোই এটা সমর্থন করে না। কে শুনে কার কথা।
তাকে টাকার নেশা অন্ধ করে রেখেছে ! আমাকে হাত
করতে না পেরে তারা আমার দাড়ি নিয়ে কথা তুলেছে।
দাড়ি কাটতে হবে। রাগে আমার শরীর কাপছিল কিন্তু
কিছু বলতে পারছিলাম না! শুধু একটা লাইন বলেছি, "সবার
আগে নবীর সুন্নাত, চাকরি না! আল্লাহ আপনাকে
হিদায়াত দান করুক।"
.
ঐ দিনই চাকরি ছেড়ে দেই! ২ মাসের মাথায় চাকরি
ছেড়ে দেয়া কেউই মেনে নিতে পারছিল না।কিন্ত আমি
মেনে নিয়েছি কারন আমি জানি ভাগ্য একমাত্র
আল্লাহর হাতে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে জীবনের কঠিন
পরিক্ষার মধ্যে পড়লাম। আত্মীয়রা দাড়ি,টুপি,
পাঞ্জাবি নিয়ে আজে বাজে কথা বলত, বন্ধুরা সবাই
নতুন জব শুরু করেছে। বাসা থেকে টাকা চাইতে পারতাম
না। সব কিছু মিলিয়ে এতটা অসহায় অবস্থায় কখনোই
পড়িনি। তারপরও ধৈর্য্যহারা হইনি।যখনি হতাশ হয়ে
যেতাম তখনি সুরা বাকারার ১৫৫ নাম্বার আয়াতটা মনে
করতাম!
____
.
"এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা
ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। [ সুরা
বাকারা ২:১৫৫ ]
.
____
.
এই আয়াতটা মনে হলে সব হতাশা চলে যেত এবং আরো
আমল করার ইচ্ছা জাগতো! অবশেষে আল্লাহ তার
প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন নি, কিছুদিন আগে নতুন
একটা জবের এগ্রিমেন্ট হয়েছে যেটা আগের চেয়ে
হাজার গুনে ভালো। এই কোম্পানি দাড়ি,টুপি দেখে
আমাকে নিতে আরো উৎসাহিত হয়েছে ! লাখো কোটি
শোকরিয়া যে আল্লাহ হিদায়াতের মত নিয়ামতটা
আমাকে দিয়েছেন এবং এটা রক্ষা করার ধৈর্য্য
দিয়েছেন।
.
.
দিনশেষে সবার কাছে একটাই চাওয়া, চলো ফিরে আসি
ইসলামে। নীড়ে ফেরা পাখির মত আমাদেরও একদিন
ফিরতে হবে কবরে। দেখতে দেখতে জীবনের অর্ধেকটা
সময় পার করে ফেলেছি।যৌবন ফুরিয়ে যাচ্ছে, বহতা
নদীর মত। চল এখনি তাওবা করে ফিরে আসি। হারাম
সম্পর্ক গুলোকে আজকেই মাটি চাপা দেই। আঁকড়ে ধরি
রাসুল (সা) এর আদর্শকে। চল রাসুলের আদর্শে জীবনকে
নতুন ছকে সাজাই!
.
"Turn to ALLAH before you return to ALLAH"
:
:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক হিদায়াত
দান করুক। আমিন !!!

Comments