বেদিশা পাগলি (১ম পর্ব)


রুমান্টীক ভালোবাসার গল্প

.

বিকাল ৩টা ছুই ছুই। কাজ শেষে এফবিতে ডুকলাম। উদ্দেশ্য নটিফেকশন ও ইনবক্স চ্যাক। ইনবক্সে একটি টেক্সের উপর চোখ আটকে গেলো। কে জানি নিউ একটি চ্যাটিং গ্রুপ খুলেছে? আমাকেও এড দিয়েছে। গ্রুপে ডুকলাম, অনেকজন একসাথে কথা বলছে। আমি কথা বলছি না, শুধু তাদের কথাগুলো পড়ছি। হঠাত দেখলাম একটি মেয়ে খুব উলটা পালটা কথা বলছে। আমার তো মিজাজ হট, দিলাম টেক্সট, কিছুক্ষণ কথা বললাম তার সাথে। এরপর মাঝে মাঝে কথা বলতাম গ্রুপে। এই-ই কেল্লা ফতেহ!
১০/১২দিন পর এফবিতে ডুকে দেখি একটি অচেনা মেয়ের টেক্সট। নাম দেওয়া আরিশা রহমান। লিখেছে,
"কী হলো? গ্রুপে কথা বলছেন না যে?"
= আমার ইচ্ছে করে না তাই!
-  ইচ্ছে করবে না কেনো? শুনি!
= হায় রে বাব্বাহ! এতো কথা বলছেন কেন? আপনার সমস্যা কোথায়?
- সমস্যা আমার না, সমস্যা আপনার।
= এই, কী বলছেন? গাঞ্জা বেশী খাইছেন না কি?
- নাহ, অল্পই খেয়েছি, আপনি খাবেন?
= ও আল্লাহ! কি কন? পাবনায় যেতে হবে না কি?
- হুম, যেতে তো চাচ্ছি। আপনি যাবেন সাথে?
= হালা মরছে রে! কি আবুল-তাবুল বলছেন? মাথার নাট এক্কেবারে গেছে রে....!
- নাহ, সবটুকু নষ্ট হয়নি, কিছুটা এখনো ভালো!
= এই মেয়ে! আমি পাগল না। আপনার পাগলামী অন্য কোথাও করেন।
- ওই, মেন্টাল, আমি পাগলি হলে তুমি আমার পাগল হবে।
ওরে আল্লাহ! কী প্যারায় পড়লাম, আমাকেই পাগল বানিয়ে ছাড়বে মেয়েটা। অলরেডি পাগল ডেকে ফেলছে। কি মহা মুসিবতে মাবুদ রক্ষা কর।
= আপনার এত্ত বড় স্পর্ধা, আমাকে মেন্টাল বললেন?
- জি, আমার স্পর্দা খুব বেশী।
= শোনুন বেদিশা মেন্টাল, আপনার সাথে পাগলামী করার সময় আমার নেই। সো ব্লক...........
মেয়েটিকে ব্লক মেরে কাজে মন দিলাম। ৫/৬ দিন শান্তিতে কাটল। কোন পাগলে বিরক্ত করেনি। ৭ম দিন আরেকটি মেসেজ। “বেদিশা পাগলি” নামের আইডি থেকে।
-তোমার নাম্বারটা দাওতো?
=কে আপনি আফা?
-ওই আমি তোমার কোন জন্মের আপা?
=জানিনা তো!
-নাম্বার দাও।
=কেন?
-আমি চাইছি তাই!
=আপনি কে?
-পরে বুঝতে পারবা।
=আমি এখুনি বুঝতে চাই।
-এখন বুঝতে পারবা না।
=যখন বুঝতে পারবো তখন নাম্বার দিবো
-তোমার জিএফ আছে.?
=কিহহ কে? আকাশ?
-কিহহ তুমি সমকামী নাকি
=ওই don't cross your limit
-কেন, তুমিই তো বললা আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম আকাশ
=না, আমার গুড ফ্রেন্ডের নাম আকাশ
-ওহহহহহ
=হুমমম
-তোমাকে দেখে যতটা ভদ্র মনে হয়েছিল এখন দেখছি তুমি ততটাই পাজি
-আপনি আমাকে দেখেছেন?
-হুমম।
-আপনি কে?
-তূমি তো নাম্বার দিলা না, কিন্তু আমি পেয়ে যাবো।
-কিভাবে পাবেন শুনি?
-বলবোনা।
=আপনার নাম কি?
-দুর্জয়া
=বাহহ আমার নামের সাথে মিলিয়ে বলা শুরু করেছেন দেখছি।
-সত্যি আমি দুর্জয়া, তাই এতদিন পর দুর্জয়কে পেলাম।
=আপনার মাথার তার ছেড়া নাকি?
-হতেও পারে বাট সেটা তোমার জন্য।
=খাইছে রে.... আমি যদি বলি আমি অন্য কাউকে লাভ করি তাহলে কি হবে?
-আমি জানি, তুমি খুব ভালো তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে লাভ করতেও পারোনা।
=এটা বলার কি আছে এটা সবাই জানে
-কি জানে
=মৌলভীবাজারের ছেলেরা খুব ভালো, এটা সবাই জানে।
-হুমম, আর পাবনার মেয়েরাও অনেক কিউট।
=কিহহহ, আপনি পাবনা.?
-হ্যা কেনো?
=তাই তো বলি এরকম তারছেড়া টাইপের কথা বলতেছেন কেন?
-ওই, কি বলতেছো এগুলা?
=ঠিকি তো বলতেছি, আপনার এখন মানসিক চিকিৎসার প্রয়েজন?
-কেন? আমি তো ঠিক আছি।
=না, আপনি ঠিক নেই, দিশাহীন হয়েগেছেন, বেদিশা টাইপের!
-কিহহহ!
=হুম, আর আপনি পাগল হয়ে গেছেন । না না পাগলি হয়ে গেছেন । দিশাহীন পাগলি।
-দেখো, এখন কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি।
=তা তো যাবেনই, পাগলদের পাগল বললে তারা রেগে যায়, বেদিশা কোথাকার?
-এখন কিন্তু তোর মাথা ফাটিয়ে দিমু
=এটাতো স্বাভাবিক, পাগলরা যা ইচ্ছা তাই করে।আচ্ছা বেদিশা পাগলি বলেন তো, আপনিও কি অন্য পাগলদের মতো কামড়িয়ে দেন।
-ওই, দুর্জয়ের বাচ্চা কুদিশা তোরে আমি খাইছি রে....
= ওরে আল্লাহ, আপনিতো দেখছি অন্য পাগলদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে । অন্যরা কামড়ে দেয় আর আপনি দেখছি খেয়ে ফেলেন ।
-ইয়া মাবুদ! হুম, তোরে আমি মাইরা ফালামু!
=কই পাবেন আমারে? আমি তো কোনোদিন পাবনা যাবোনা?
-আমি যামু মৌলভীবাজার, তারপর দেখিস কি করি?
=কি করবেন শুনি?
-প্রথমে কুমড়োর মতো ফালা ফালা করে কাটমু তারপর বেগুনের মতো ভাজমু তারপর সস দিয়া খামু!
= কীরে দজ্জাল রে বাবা! আপনার কথাবার্তা একদম পাগলের সাথে মিলে যায় । আর আপনার আইডির নামও তো “বেদিশা পাগলি” । সো আপনি একটা পাগলি । আপনারে নিয়া একটা গল্প লিখবো "পাগলি - The Mental" কেমন হবে?
-যা শালা কুত্তা তোর সাথে কথা নাই।
=আমার আরো কিছু বলার বাকি আছে
-সয়তানের হাড্ডি, গরু, ছাগল, কুত্তা,কুলি, মাইমাল.........।
বলেই অফলাইন হয়ে গেল বেদিশা পাগলি  নামের আইডি টা । কে হতে পারে এই মেয়ে । নাকি ফ্রেন্ড দের মধ্যে কেউ বোকা বানাচ্ছে । বুঝতে পারছিনা। আইডির প্রোফাইলে ডুকে কিছুক্ষণ বুঝার চেষ্টা করলাম, আইডিটা ফেক না রিয়েল। দেখলাম গতকাল মাত্র আইডিটা খোলা হয়েছে। কিভাবে ডিসাইড করব, বুঝতে পারছি। মাথাটা ঘোলমেলে মনে হল।

আরেহ, আমার পরিচয়টায় তো দেওয়া হয়নি, আমি দুর্জয় । ১১ তে পড়ি । বাবা মার ১ম  সন্তান । আমার পরে দুইটা এবং আগে একটা আছে। তবে আমি বড় ছেলে । ফেবুতে একটু আধটু লেখালেখির চেষ্টা করি আর একটু বেশীই দুষ্টামী করি, এই আর কি!!
কে হতে পারে এই বেদিশা পাগলি? চিন্তা করছি। কিছু মাথায় ডুকছে না। হঠাৎ মনে হল, এই মেয়েটা ঐটা না কি যাকে ব্লক করেছিলাম? হতেও তো পারে, হ্যান্ড রাইটিং সেইম টু সেইম।

বিকাল বেলা মাঠে গেলাম । ফুটবলে কিছুটা সময় ব্যয় করে  সন্ধার সময় বাড়ি ফিরার পর আম্মু বলল ভাবি নাকি ডেকেছে । ভাবি টা আমার চাচাতো ভাইয়ের বউ । কি আর করা । গেলাম তার বাড়িতে ।
=ভাবি আমাকে ডেকেছো?
-হ্যা, বসো মিস্টার দুর্জয়।
=বলো, কি হয়েছে?

#বেদিশা_পাগলি
(১ম পর্ব)
লেখকঃ আধাঁরের কীট (অনীল)

-আমার ফোন দিয়ে নেটে যেতে পারছিনা, একটু দেখোতো?
ফোন নিয়ে অনেক টিপাটিপির পর সক্ষম হলাম ।
=ভাবি হয়ে গেছে।
-রেখে দেও,
=আচ্ছ্‌ আমি চলে গেলাম।
-আচ্ছা
বাড়িতে এসে পড়াশোনা শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে ফোন নিয়ে ফেবুতে ঢুকলাম।
দেখলাম, বেদিশা পাগলি মেসেজ দিয়ে রাখছে,"তখন আমার অনেক রাগ হয়ছিলো তাই উল্টাপাল্টা বলেছি, আমি সরি"
একটু অবাক হয়ে গেলাম । উল্টপাল্টা কথা বললাম আমি আর ও সরি বলছে! এমাজিং!  একটু খারাপ লাগলো । দেখলাম অনলাইনে আছে তাই মেসেজ দিলাম
=আমিও সরি।
-এতক্ষনে আসার সময় হলো তোমার,
=হুহ
-কতক্ষণ থেকে ওয়েট করতেছি?
=কেন?
-বুঝোনা.?
=নাহ...
-দূর, কুদিশা।
=আশ্চর্য, আমি কেমতে বুঝব? এই, মাইন্ড ইউর লেংগুয়েজ! কুদিশা কী?
-তুমি, এক্কেবারে কুদিশা!
=হুম (মুখ বন্ধ করে রাখছি)
-তখন থেকে কি হু হু করতেছো? অন্য কিছু বলো।
=আপনার বাপের নাম কি?
-এসব বলতে বলিনি
=আচ্ছা আপনি আমাকে চিনেন?
-হুমম
=ক্যামনে, আমিতো কখনো ওই পাগলদের এলাকাতে যাইনি?
-তুমি আসনি তাই বলে আমি মৌলভীবাজার যাইনি নাকি?
=আব্বে, সত্যি?
-হ্যা, তোমার জন্য একটা সার প্রাইজ আছে,
=কি?
-এখন বলবনা, কয়েকদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবা।
=হুহহ....
অফলাইনে চলে আসলাম । অনলাইনে থাকলে  পাগলীর সাথে পাগলের মতো বকবক করতে হবে । তাই চলে আসলাম । হাফ ছেড়ে বাচলাম বাবা!

পরদিন সকালে কলেজে গেলাম । প্রথমেই সালাম স্যারের সাথে দেখা হলো । খুব ভালো তিনি । আমাদের পাড়াতেই থাকেন । উনার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক । মাথা টাক বলে সবাই উনাকে টাকলু বলে।
-এই দুর্জয়, দাড়াও। তোমাকে আমি খুব ভালো মনে করতাম......
=শুধু আপনি না।,সবাই আমাকে খুব ভাল মনে করে, কারণ আমি গুড বয় ।
-রাখো তোমার গুড বয়, আমার এই ধারনা কালকে সন্ধ্যার সময় ভুল প্রমানীত হয়েছে।
=কেন স্যার? আমি কি কিছু করছি?
-কি করছো মানে, কি করনি সেটা বলো।
=কি করেছি আমি?
-কেন? ভুলে গেছো..?
=জি, মনে নেই। আপনি বলেন তো স্যার কি হয়েছে?

কালকে রাত ৯টার দিকে দেখলাম, তুমি ওই মোড়ে দাড়িয়ে আছো যেখানে বখাটে ছেলেরা সবসময় আড্ডা দেয়. আমি কণ্ঠস্বর শুনে বুঝলাম, তুমি-ই।
=চেহারা দেখেন নি?
-নাহ, আমার চশমাটা সাথে ছিল না, আর রাত তো তাই।

আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি ব্যাপার দুর্জয়, তুমি এখানে দাড়িয়ে কেন?
=তারপর
-তারপর কি সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে?
=না বললে জানবো কিভাবে?
-তুমিই বলেছো আর এখন তুমিই জানোনা
=স্যার বলেন তো কি হয়েছে?
-তুমি আমাকে বলেছো, গাঞ্জা খাবার লাইগা দাড়াইয়া আছি, খাবেন নাকি?
তারপর আমি বললাম, দুর্জয়, তোমাকে খুব ভালো ছেলে ভাবতাম, এখন?
তুমি বললে,
=এই টাকলু, তুই যাবি এখান থেকে নাকি পাশের ডোবাতে তোরে চুবামু?
আমি বললাম,
-তোর আব্বুকে না বলছি, তাহলে আমার নাম আব্দুস সালাম না!
তারপর তুমি আমার মাথা কালো কাপড় দিয়ে পেচিয়ে পাশের ডুবাতে ফেলে দিলা! ও ও ও হাচ্চু! সর্দি কাশি অইছে সে কারণে। তোমার নিস্তার নাই। তোমাকে আমি বুজামু আব্দুসসালাম কি জিনিস?
= স্যার, বিশ্বাস করেন স্যার, ওইটা আমি না।
-এখন মশকরা করো, কত্ত বড় বেয়াদব!তোর বাপকে না বলছি তো আমার নাম আব্দুস সালাম না!
=স্যার বিশ্বাস করেন ওইটা আমি না। প্লিজ স্যার বিলিভ মী।
-আমার বিশ্বাষ করতে কষ্ট হচ্ছে বাট তুমি আমার ২ বছরের স্টুডেন্ট। আর তোমার ভয়েস আমি চিনব নাহ? এইটা কেমন কথা?। দেখো দুর্জয়, ভালো হতে পয়সা লাগেনা এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও ।,

স্যারকে যতই বলি আমি না, স্যার ততবেশী আমাকেই অপরাধী বলছেন। আমি বুঝেছি কাজটা কার!
নাহহ, হালা হারামিটার সাহস অনেক বেড়ে গেছে । এর একটা বিহীত করা লাগবে । না হলে সামনে অনেক বিপদ আসবে, আমি শিউর..... (মনে মনে)

ওয়েট পর নেক্সট পার্ট....................................

Комментарии