ধর্ম ও বিজ্ঞান


ছবিঃ ইন্টারনেট

.

সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই এই প্রশ্নের জবাবে কিছু সহজ ও যুক্তিবাদী প্রশ্ন। 

১। সৃষ্টি শুরুর আগে সৃষ্টিকর্তা কি করছিলেন?

আমরা জানি নির্দিষ্ট দিনে বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সূচনা হয়েছে। বিজ্ঞানের মতে ১৪.৭ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সূচনা হয়েছে। কোরান ও অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থগুলোর মতেও বিশ্ব ব্রক্ষাণ্ডের নির্দিষ্ট সূচনা লগ্ন আছে। তাহলে সৃষ্টি জগত শুরুর আগে সৃষ্টি কর্তা কি করছিলেন? এ প্রশ্ন যতটা অর্থহীন শুনায় আসলে ততটা অর্থহীন নয়। যিনি সৃষ্টিকর্তা তার অসীম ক্ষমতা। তিনি কি চুপচাপ বসে থাকতে পারেন? বিশ্ব ব্রক্ষান্ড সৃষ্টির আগের সময়টুকু তিনি কি করে কাটিয়েছিলেন? নাকি এই মহাবিশ্ব ছাড়াও আরো মহাবিশ্ব রয়েছে? বর্তমানে বিজ্ঞান মাল্টিপল ইউনিভার্স থিওরির কথা বলে। তাহলে কি স্রষ্টা আরো মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন? সেক্ষেত্রে সেই মহাবিশ্বগুলো তৈরির আগে তিনি কি করেছেন? আমরা জানি সৃষ্টিকর্তার ধ্বংস বা সৃষ্টি নেই। তিনি চিরকালই বর্তমান। কাজেই সময়ও চিরকালীন বর্তমান। কিন্তু আইন্সটাইনের থিওরী অফ রিলেটিভিটী থেকে আমরা জানি বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের মত সময়েরও নির্দিষ্ট শুরু আছে, এমনকি সময় আপেক্ষিক। অর্থ্যাত সময় সব জায়গায় এক নয়। পৃথিবী পৃষ্ঠে ও মহাকাশে কিংবা অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্রে এমনকি ব্ল্যাকহোলে সময়ের ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপ পাওয়া যাবে। তাহলে এ কথা বলা কি সহজ নয় যে মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হল এ প্রশ্নের জবাব বের করতে না পেরেই মানুষ স্রষ্টা নামক ধারণার আবর্তন করেছে? আসলে সৃষ্টির অনাদীকাল থেকেই মানুষকে এ প্রশ্ন তাড়া করে বেরিয়েছে যে আমরা কোত্থেকে এলাম? কিভাবে এ সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব খুজতে গিয়ে কেউ হাতে তুলে নিয়েছে ধর্ম, কেউ বা বিজ্ঞান। আসলে মহা বিশ্ব যে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট অর্থ্যাত এর সৃষ্টির পেছনে কোন ঐশ্বরিক ইঙ্গিতের প্রয়োজন হয় না এই সত্য অনুধাবন করতে না পেরেই আজকের ধার্মিক সমজের সৃষ্টি। তবে সেই দিন আর বেশি দেরি নেই যেদিন বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ স্রষ্টা নামক অলিক বস্তুতে বিশ্বাসের চেষ্টা বাদ দিয়ে সরাসরি বিজ্ঞানের মাধ্যমে সৃষ্টি রহস্যের সমাধান খুঁজবে।

২। স্রষ্টা কি পারবেন নিজের মত আরেকজন স্রষ্টা তৈরি করতে?

এ প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন। স্রষ্টার সংজ্ঞায়ই বলা আছে যে তার অসাধ্য কিছুই নেই। তাহলে কি তিনি নিজের মত আরেকটি স্রষ্টা তৈরি করে দেখাতে পারবেন? যদি নাই পারেন তাহলে তিনি কিসের স্রষ্টা? আর যদি পারেনই তাহলে সৃষ্ট নতুন স্রষ্টার সাথে তার দ্বন্দ্বটা অবশ্যম্ভাবি নয় কি?

৩। মহাবিশ্ব কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে এল?

একটু আগেই আমরা জেনেছি যে মহাবিশ্ব প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে তা কিভাবে এল তা নিয়ে একটু কথা বলা যাক। ধরুন বুড়িগঙ্গা নদীটিকে নিয়ে কথা হচ্ছে। এখন কেউ যদি বলে বুড়িগঙ্গা নদী প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয় নি। আমি নিজে খনন করে বুড়িগঙ্গা নদী তৈরি করেছি। তাহলে তা শুনতে যেমন হাস্যকর শোনায় তেমনি যারা পৃথিবী ও মহাবিশ্বের উতপত্তি নিয়ে গবেষনা করছেন অর্থ্যাত থিওরিটীক্যাল ফিজিসিস্ট তাদের নিকটও স্রষ্টা মহাবিশ্বকে তৈরী করেছেন শুনতে একই রকম হাস্যকর শোনায়। অর্থ্যাত মহাবিশ্ব কোন লোগো সেট নয় যে তাকে তাকে একটূ একটূ করে তৈরি করতে হবে বরং এক স্বতস্ফুর্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইহা সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বতস্ফুর্ত প্রক্রিয়াতেই মিলিয়ে যাবে।

৪। স্রষ্টাকে কে তৈরি করেছেন?
মহাবিশ্ব যদি স্রষ্টাই তৈরি করে থাকেন তবে স্রষ্টাকে কে তৈরি করেছেন? প্রশ্নটি খুব স্বাভাবিক। তাহলে কি বলা যায় না যে স্রষ্টাকে কেউ তৈরি করেন নি তিনি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছেন। ঠিক এমন কথা তো মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও বলা যায় যে মহাবিশ্বকে কেউ তৈরি করেনি তা নিজে নিজেই স্বতন্ত্র উপায়ে সৃষ্টি হয়েছে। শুধু শুধু স্রষ্টার ধারণা যে শুধু অবান্তরই না। যুক্তিহীন।

কাজেই একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে স্রষ্টা মানুষ তৈরি করেনি বরং মানুষই স্রষ্টা তৈরি করেছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতার ফলেই স্রষ্টার উৎপত্তি। এ কথা সত্য যে বিজ্ঞান এখনো সৃষ্টি রহস্যের কুল কিনারা করতে পারে নি কিন্তু যদি তা করতেই হয় তবে ধর্ম গ্রন্থ হাতে নিয়ে বসে না থেকে বিজ্ঞানের বই হাতে তুলে নিলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত উত্তর।

Comments