ঝড়-তুফানের ছবি তোলা আর লাইভ স্ট্রিমিং এবং আমাদের করণীয়


ছবিঃ ইন্টারনেট

.

ঝড়েরও লাইভ স্ট্রিমিং হয় এখন
গতকাল ৩১ মার্চ বিকেলে সন্ধ্যা হতে তখনও প্রায় পৌনে এক ঘন্টা বাকি। খুবই অল্প সময়ের ভেতরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়। নেমে আসে অন্ধকার। প্রচন্ড বাতাস ধূলি উড়িয়ে গোটা এলাকা আচ্ছন্ন করে দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যে বৃষ্টিসহ শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়। আর তখনই দেখতে পাই, কিছু লোকের ভিন্ন চিত্র। অবস্থা দর্শনে মনে হল, দিনকে দিন ঠিকই পাল্টে যাচ্ছে আমাদের অবস্থা। একদিকে শুরু হয়েছে প্রচন্ড বাতাসসহ ধূলি ঝড় আর বৃষ্টি। আর অন্যদিকে চলছে, মোবাইল ভিডিও। 

ভিডিও করতে ব্যস্ত এক ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি করছেন?' 

নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তার উত্তর- 'ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছি।' 

'লাইভ স্ট্রিমিং নাকি ফেসবুক বন্ধ করার কথা বলছে? এখনও করেনি?' -জানতে চাইলাম তার কাছে।

'কেন বন্ধ করবে?' -উল্টো প্রশ্ন করলেন তিনি।

'কেন, নিউজিল্যান্ড হামলার পরে এমন খবরই তো শুনেছিলাম। আপনি শোনেননি?' -তিনি কি উত্তর করেছেন শুনিনি।

একই সময়ে কেউ কেউ দেখলাম ছবি তুলছেন। ঝড়ের ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত তারা। আচ্ছা, ঝড়-ঝঞ্ঝা-তুফান এলে কি তার ছবি তোলা আর লাইভ স্ট্রিমিং করাই আমাদের কাজ? না কি ঝড়ের মূহুর্তে এর ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অারও কোনো করণীয় থাকতে পারে? এ ব্যাপারে ইসলামী শরিয়াহ কি বলে? ঝড়-তুফান এলে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করতেন? এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাঁর আমল কি ছিল? আসুন, দেখা যাক হাদিসের আলোকে বিষয়টিতে কি কোনো শিক্ষনীয় কিছু রয়েছে কি না। 

এগুলো আল্লাহ পাকের পরিক্ষা
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পৃথিবীতে নানা আপদ-বিপদ ও মুসিবত দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। সব রকম বিপদ-আপদে আত্মরক্ষার কলা-কৌশল, দুআ এবং জিকির-আজকারও বর্ণিত হয়েছে কুরআন হাদিসে। মেঘের গর্জন, ঝড়-তুফান, অনাবৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টির অনিষ্ট থেকে হিফাজতে থাকার জন্যও রয়েছে দুআ ও আমল। 

ঝড়-তুফান এলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল কেমন ছিল?
হাদিসের ভাষ্যে জানা যায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই ভীতিবিহবল হয়ে পড়তেন। তাঁর চেহারায় পরিবর্তনের ছাপ পরিলক্ষিত হতো। আল্লাহ পাকের দরবারে দুআয় মগ্ন হতেন তিনি। ঝড়-বৃষ্টির ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকাতর মিনতি করতেন। পক্ষান্তরে আমরা আজ ঝড়-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মূহুর্তে আল্লাহ পাককে স্মরণ করা ভুলে গিয়ে, তাকে ডাকার পরিবর্তে মোবাইলে লাইভ স্ট্রিমিং আর ছবি তোলার মত অনর্থক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ অবস্থা কাম্য নয়। আমাদের ফিরে আসতে হবে। রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথেই মুক্তি, তাঁর দেখানো পথেই শান্তি। সেপথেই হোক আমাদের প্রত্যাবর্তন। 

ঝড়-তুফান থেকে রক্ষা পাওয়ার নববী শিক্ষা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেন, রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দুআ করতেন-

اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ- 'আল্লা-হুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগদাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্ববলা জা-লিকা।'

অর্থ : 'হে আমাদের প্রভু! আপনার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলবেন না, আর আপনার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করবেন না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিন।' (তিরমিজি)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কুরআনুল কারিমের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ

উচ্চারণ : 'সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খি-ফাতিহ।'

অর্থ : 'পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে।' (মুয়াত্তা)

ঝড়-তুফানের ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য বুখারি শরিফের হাদিসে নিচের দুআ পাঠের কথা বলা হয়েছে-

اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا

উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা’

অর্থ : 'হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নিন, আমাদের ওপর দিবেন না।' (বুখারি) 

এছাড়া ঝড়-তুফানের সময় এ দুআ বেশি বেশি পাঠ করা যেতে পারে-

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ

উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা- ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহ।`

অর্থ : 'হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে তার মঙ্গল কামনা করছি এবং এর অমঙ্গল, এর ভেতরকার অমঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে পানাহ চাই।'

আল্লাহ পাক আমাদের সুন্নাতের পথে পরিচালিত করুন
ঝড়-তুফান এলে কেউ কেউ আনন্দ প্রকাশ করেন। কোনো কোনো দেখা যায়, কিছু মানুষ বাহাদুরি প্রদর্শনের জন্য ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাইরে ছুটে বেড়ান। এসব মোটেই উচিত নয়। ঝড়-তুফান দেখলে বরং নিজেকেও নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে হবে; পাশাপাশি বিপদে নিপতিত অন্যদেরও রক্ষায় সাধ্যমত এগিয়ে আসতে হবে। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আত্মবিস্মৃত মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত দুআ ও আমলগুলো যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে ঝড়-তুফানসহ যাবতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে হেফাজতে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

382 Görüntüler

Yorumlar


Hasmot Ali 5 yıllar önce

Thank you for your good advencer and information

 
  • Beğen
  • Aşk
  • HaHa
  • Vay
  • Üzgün
  • kızgın