বন্ধু কেমন হওয়া উচিত?


ডালিম পাকিলে পরে নিজেই ফেঁটে যায়, ছোটলোক বড় হলে বন্ধুকে কাঁদায়।

.

ডালিম পাকিলে পরে নিজেই ফেঁটে যায়, ছোটলোক বড় হলে বন্ধুকে কাঁদায়।

 

ছোট বেলায় এই কবিতার লাইনটুকু কোথাও পড়েছিলাম বলে মনে হয়। এই লাইনের সুন্দর ও যথার্থ ব্যাখ্যাতো বাংলা প্রভাষক বা বাংলা প্রফেসররাই ভাল জানেন।

 

ছোটবেলায় আমাদের অনেক বন্ধু ছিল। আমরা যখন স্কুলে যেতাম, খেলা করতাম, অবসর সময়ে আড্ডা দিতাম তখন একে অন্যের প্রতি গভীর মহব্বত রাখতাম। আমাদের মনে কোনো পাপ ছিল না, পাপের কালিমা ছিল না। অহংকার বা হিংসে ছিল না। সবাই ছিলাম সাদা মনের মানুষ। দিনের পর দিন কাটিয়েছি একই সাথে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাগানে, মাঠে, নদীর কিনারে হৈচৈ করে বেড়াতাম। নদীতে সাঁতার কাটতাম, পরের বাড়ীর গাছ থেকে আম, জাম চুরি করে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়ে বেড়াতাম। আমাদেরকে কেউ শাস্তি দিলে বা দমকালে প্রতিশোধ নিতে হাত-পা বেঁধে লেগে যেতাম। আমরা ছিলাম একে অন্যের ছাহারা, একে অন্যের ঢাল।

 

কালের বিবর্তনে আজ আমরা বড় হয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছি। টাকা, বাড়ী-গাড়ী করে ফেলেছি। মান-সম্মানের অধিকারী হয়ে পড়েছি। অর্জন করে নিয়েছি বিশাল ক্ষমতা। আবার অনেকেই দুর্ভাগ্য আর প্রতিযোগীতার যাতাকলে পীষ্ঠ হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। পারিনি ভাল পজিশন তৈরি করতে। এটা বিধাতার এক মহান লিলা।

 

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট ধনী ব্যক্তি বিলগেটস। তার কি কোনো বাল্য বন্ধু নেই যে আজ এই ধরাধামে গরীবই রয়ে গেছে। বিলগেটস এর অসংখ্য বন্ধু পাওয়া যাবে যারা মহান হতে পারেননি। সবাই মহান না হবারই কথা।

 

এই পিছিয়ে পড়া কোনো এক বন্ধুর সাথে আমার দেখা। আজ বহুদিন পরে তার সাথে দেখা। আমি তার ব্যাপারে আগে থেকেই জানি। তাকে দেখেই একফালি তৃপ্তির হাঁসি (বন্ধুকে তুচ্ছ করার হাঁসি) ছুঁড়ে দিলাম। নিজেকে মহান জ্ঞানীদের কাতারে দাঁড় করিয়ে বক্তৃতা দেয়া শুরু করলাম। তুই কি করছিছ? কিছু একটা কর। এভাবে বসে থেকে নিজের জীবন কেন নষ্ট করছিছ? দেখ আমাকে। আমি সময়কে মূল্যায়ন করে তবেই এখানে এসেছি। হয় চাকরি কর না হয় ব্যবসা কর। রিক্সা চালা, টেক্সি চালা। রোজগার করা কোনো দুষের কাজ নয়। কোনো অন্যায়তো আর করছছ না। এরকম উপদেশমূলক কথা বলে বিদায় নিলাম। আর মনে মনে নিজেকে বিশ্ব বিজয়ী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করলাম।

 

আমি এই বন্ধুকে ভাল ভাল উপদেশ দিলাম ঠিকই কিন্তু তাকে টেনে তোলার জন্য কোনো হাত বাড়ালাম না। কোনো রকমের সহযোগীতা করলাম না। তার আসল সমস্যা কি তা জানতেও চাইলাম না। কারণ আমি মনে করি বন্ধুকে ধার দেয়া শরমের কাজ, তাই উচিত না। এছাড়া ধার দিয়ে কোনো বন্ধুকে আমি ছোট করতে চাই না। তার আত্মমর্যাদায় আঘাত করতে চাই না। কেননা আমি ব্যস্ত। মহা ব্যস্ত। আমাকে আরো অর্জন করতে হবে। আরো বড় হতে হবে। আমার সাথে নতুন কিছু মানুষের পরিচয় হয়েছে ব্যবসার সুবাদে, ধনী হওয়ার বদৌলতে। আমি এদের চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে আছি। তাই তাদের মতো হতে চাই। এভাবে আরো চাই, আরো দরকার। আমার যে গরীব বন্ধু প্রকৃত অর্থে আমি তার চেয়েও গরীব। কেননা, তার যা আছে তাতেই সে সূখী। আর আমার যা আছে আমি তাতে সন্তুষ্ট্ নয়, সূখীও নয়। আমার আরো চাই, আরো লাগবে। (চলবে)

 

সময়ের সেরা প্রশ্ন

১. পিছিয়ে পড়া বন্ধুদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত?

২. পিছিয়ে পড়া বন্ধুদের কিভাবে সহযোগীতা করা উচিত?

 

প্রতিটি প্রশ্নের ৫টি বাক্যে উত্তর দিন

 

বন্ধুদের ব্যাপারে আমার নিজের দু’টি উক্তি বা বাণী হল

১. যারা বন্ধু নির্বাচনে ভুল করে তারা উন্নয়নের পথ খুঁজে পায় না।

২. বিপদের সময় যে বন্ধু কাজে আসে না এমন বন্ধুর কোনো প্রয়োজন নেই।

 

372 Views

Comments