ফরওয়ার্ড মেসেজ থেকে সাবধান!


ফরওয়ার্ড মেসেজ ! আমরা অনেকেই এই নামটি শুনেছি। আর নাম না শুনলেও প্রতিটা মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যাক??

.

এখনো বুঝতে না পারলে আপনাকে আরো সহজ করে বলি, ইদানিং আপনার ফোনের ইনবক্সে অথবা ফেসবুকের ইনবক্সে এমন অনেক মেসেজ আপনি পেয়ে থাকতে পারেন, যেখানে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে এবং শেষে বলা হয় এই মেসেজটি আরো ২০ জনকে বা ১০০ জনকে বা ফ্রেইন্ডলিস্টের সবাইকে সেন্ড করতে। বেশীর ভাগ সময় এটা কোন ধর্মীয় তথ্য দিয়ে লেখা হয়, আর এটাকেই ফরওয়ার্ড মেসেজ বলে। আর এসব মেসেজগুলো আমাদের পরিচিত ব্যাক্তিরাই আমাদের পাঠিয়ে থাকে এমন কি এটাও হতে পারে যে আপনিও এ ধরনের মেসেজ পেয়ে অনেক জনকে ফরওয়ার্ড করে সেই মেসেজ পাঠিয়েছেন।

এখন আসল কথায় আসি,

এই ফরওয়ার্ড মেসেজ গুলোতে বিশেষ করে ধর্মীয় অনেক কথা লেখা হয়ে থাকে যাতে এগুলো পড়া মাত্রই অন্যের কাছে কোন চিন্তা ভাবনা না করে বা সত্যতা যাচাই না করেই অনেক মানুষ এর কাছে শেয়ার করে দেওয়া হয়। কেউ জানেও না এই মেসেজ কে বা কারা কিভাবে কবে লিখেছে, অার এই মেসেজ এর তথ্য কতোটুকু সত্য সেটা না জেনেই যখন অন্যের কাছে এটা শেয়ার করা হয় বা ফরওয়ার্ড করা হয় তখন সেই তথ্যের দায় ভারটাও যে শেয়ার করলো বা ফরওয়ার্ড করলো তার উপরেই পড়ে। এবং আপনি জেনে অবাক হবেন এই সব মেসেজ এর দেওয়া তথ্য বেশীর ভাগ সময় ভুল হয় এবং মিথ্যা হয়। এই মেসেজ গুলো শুধু মানুষ এর ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে ছড়ানো হয়। এবং এটা অনেকটা ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে যায় একজনের ইনবক্স থেকে অন্য জনের ইনবক্সে।

যখন ফেসবুক ছিল না তখন আমাদের ফোনের ইনবক্সেও এরকম অনেক মেসেজ আসতো, এবং এমনকি মেসেজে অনেক হুমকিও থাকতো। বলা হতো এই মেসেজ ২০ জনকে না পাঠালে আপনি কোন খারাপ সংবাদ শুনবেন বা আপনার কোন ক্ষতি হবে। এখন ক্ষতির ভয়ে মানুষ মেসেজ আরো ২০ জনকে সেন্ড করে দিত আবার সেই ২০ জন আরো ২০ করে ৪০০ জনকে সেন্ড করে দিত... এভাবে হাজার হাজার মানুষ এর কাছে মেসেজগুলো পৌছে যেত। যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই এবং হুমকি গুলো নিতান্তই মিথ্যা কথা ছাড়া আর কিছুই না। এখন আপনি চিন্তা করুন আপনি যদি কখনও এরকম মেসেজ পাঠিয়ে থাকেন তবে আপনার পাঠানোর কারণে যতোজন এর কাছে ঐসব মিথ্যা বানোয়াট কথা পৌছাবে তার গুনাহের ভাগ কিন্তু আপনিও পাবেন।

কথা হচ্ছে মানুষ এত বোকা কেন?

মানুষ আসলে বোকা না, মানুষ এর আবেগ একটু বেশী। আর বিশেষ করে বাঙালীদের আবেগ তো আরো অনেক বেশী। শুধু কি ফরওয়ার্ড মেসেজ? ফেসবুকের পোস্ট, মিম, ট্রল পেইজ ভাইরাল হওয়ার জন্য খুবই জঘন্যতম কাজ করে থাকে। তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে মানুষকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে তাদের পেইজ বা পোস্টকে ভাইরাল করে, শেয়ার করতে বাধ্য করে এবং সস্তা লাইকের জন্য ভুল তথ্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।

এমন অনেক পোস্ট বা ছবি দেখে থাকবেন যেখানে একটা জামার ছবি দিয়ে বা একটা জুতার ছবি দিয়ে বলা হয় এটা আমাদের নবীজী (সাঃ) এর জুতা বা জামা। কিন্তু সেসব তথ্যের কোন ভিত্তি নেই। এমনকি নবী-রাসূল গণের নাম দিয়ে সরাসরি বানোয়াট মিথ্যা কথাও ছড়ানো হয়, বলা হয় নবীজী (সাঃ) বলেছেন এটা , যার কোন ভিত্তি নেই এবং বানোয়াট কথা। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না এটা কতবড় মারাত্বক অপরাধ ইসলামের দৃষ্টিতে। হাদীসে বলা আছে যে ব্যাক্তি নবীর নামে মিথ্যা কথা বললো সে যেন জাহান্নামে তার জন্য যায়গা করে নিল। এখন আপনার শেয়ারে বা আপনার ফরওয়ার্ড মেসেজের কারণে এটা অন্যকে বলা হলো এবং যখন এটা অন্যের কাছে যাবে আপনি কি মনে করেছেন আপনার অনেক পূণ্য হয়েছে? কিন্তু আপনি জানতেই পারলেন না যে, জাহান্নামে আপনার জন্য আরাম আয়েশের ব্যবস্থা হয়ে গেল।

এভাবেই তো বড় বড় মিথ্যা আর গুজব গুলো ইন্টারনেটে ছড়ায়, কারণ কিছু মূর্খ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে যারা না বুঝে, না জেনে চোখ বন্ধ করে সামনে যা পায় দেখা মাত্র শেয়ার করে। তাই আমাদের সকলের উচিত এগুলো থেকে বিরত থাকা এবং যে কোন কিছুই শেয়ার করার আগে জিনিসটা কতোটুকু সত্যি সেটা যাচাই করা।

এবং আপনাদের যাদের শেয়ার বাটন দেখলেই হাত চুলকায় তারা পারলে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। আর না হলে কপি করে আপনার টাইমলাইনে পোস্ট করুন। কারণ সবারই এই জিনিসটি জানা উচিত।

383 Views

Comments