ঘোড়ার মালিকের বিপদ


মানুষকে সন্তুষ্ট করা আবার আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা এই দুই কাজ কখনো এক সাথে সম্ভব নয়। বরং মানুষের উক্তির প্রতি ভ্?

.

আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু হয় করে যাও। লোকে কি বলবে সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করিও না। কারণ একসঙ্গে সবাইকে সন্তুষ্টি করা যাবে না। তাহলে ঘোড়ার মালিকের মত অবস্থা হবে।

এক ব্যক্তি তার ঘোড়ায় চড়ে সফরে বের হল। সঙ্গে তার বউ এবং ছেলে হেঁটে যাচ্ছিল। একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বলল, “দেখ, দেখ। কত বড় নিষ্টুর ব্যক্তি! বিবি-বাচ্চাদেরকে হাঁটিয়ে মারছে আর নিজে জোয়ান মরদ সওয়ার হয়ে যাচ্ছে।” লোকটি ভাবলো লোকেরা ঠিকই তো বলেছে। এই ভেবে সে নীচে নেমে আসল এবং ছেলেকে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিজে হেঁটে যেতে লাগলো। রাস্তায় ছেলেকে ঘোড়ার পীঠে দেখে গ্রামের লোকেরা বললো, “দেখ, দেখ, ছেলেটা কত বড় বেয়াদব। নিজে জওয়ান মরদ ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে আর বৃদ্ধ বাপকে হাঁটিয়ে মারছে।” লোকটি ভাবল, এরা ঠিকই বলেছে। সুতরাং এবার বউকে ঘোড়ায় বসিয়ে নিজেরা হেঁটে যেতে লাগল। অতঃপর একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বলতে লাগল, “একেই বলে বউয়ের মুরীদ। মনে হচ্ছে বউয়ের কাছে একেবারে দাস-খত লিখে দিয়েছে।” লোকটি ভাবলো এরাও ঠিক বলেছে। এই ভেবে বিবি-বাচ্চা সবাইকে নিয়ে একত্রে ঘোড়ায় চড়ে বসল। অতঃপর এক গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা দেখে বলল, “আরে! ঘোড়াটাকে কেন তিলে তিলে মেরে ফেলছে? একটা গুলি মেরে দিলেই তো হয়ে যায়। একটা ঘোড়ায় একসাথে কত মানুষ সওয়ার হয়েছে দেখ!” লোকটি দেখলো সবাই ঠিক বলছে। তাড়াতাড়ি সবাই নেমে পড়ল এবং লাগাম ধরে হেঁটে চলল। পথে লোকেরা তাদেরকে দেখে বলতে লাগল, “দেখ না- শোকর বান্দা একেই বলে। আল্লাহর নেয়ামতের কোনো কদর নাই। আল্লাহ তা’য়ালা বাহন দিয়েছে, অথচ সবাই হেঁটে হেঁটে মরছে। আরে পালাক্রমে এক একজন করে চড়লেও তো পারে। সওয়ার হওয়ার ইচ্ছাই যদি না থাকতো তবে সঙ্গে নিয়ে আসার কী দরকার ছিল? ঘরে বেঁধে রেখে আসলেই তো পারত।” লোকটি দেখল ঘোড়ায় চড়ার কোনো পদ্ধতিই আর বাদ রাখা হয়নি। সুতরাং এখন ঘোড়ায় না চড়ে (এবং ঘোড়াকে হাঁটিয়ে না নিয়ে) অন্য কোনো পদ্ধতি আছে কিনা সেই পদ্ধতি বের করতে হবে। হঠাৎ লোকটির মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল।

একটি লম্বা বাঁশ নিয়ে আসল। বাঁশে ঘোড়ার চার পা বেঁধে ঘোড়াকে ঝুলিয়ে বাঁশের দুই দিক থেকে দুই বাপ-বেটা ঘাড়ে করে চলতে লাগল। ঘোড়ার মাথা নিচের দিকে থাকল আর পা উপরের দিকে। একটি নদী পার হওয়ার জন্য তারা যখন পুল পার হচ্ছিল তখন এই অদ্ভূত দৃশ্য দেখে পাড়ার ছেলেরা সব হো হো করে চিৎকার দিয়ে উঠল। এই চিৎকার শুনে ঘোড়াটি ভয়ে এক ঝাঁকুনি মেরে ছিটকে নদীতে পড়ে গলে। বাঁশের বাড়ি খেয়ে দুই বাপ-বেটা উপুড় হয়ে পড়ে কারো মাথা ফাটল কারো থুথনি ফেঠে রক্ত ঝরতে লাগল। লোকটি দেখল মানুষকে সন্তুষ্ট করার বিপদ কত মারাত্মক। এত চেষ্টা করেও মানুষকে সন্তুষ্ট করা যাচ্ছে না। মানুষকে খুশি করতে যেয়ে ঘোড়াও হারালাম আবার মাথাও ফাটল। সুতরাং মানুষের মন্তব্যকে ঝাড়ু মেরে উড়িয়ে দাও। শরিয়ত মতে যা সঠিক হয় তাই করে যাও। মানুষকে সন্তুষ্ট করা আবার আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা এই দুই কাজ কখনো এক সাথে সম্ভব নয়। বরং মানুষের উক্তির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে একমাত্র আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিলেই অগ্রগতি সম্ভব। (আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৪, প্রষ্ঠা- ৩৪৪) Read More

আরো মজার মজার গল্গপ পড়তে ভিজিট করুণ

 

404 Views

Comments