চাকরি


জলতরঙ্গে ভাসা হাঁসের ঝাঁকের মত স্বপ্নগুলো তার ভাসে নদীর স্রোতে.......

.

জলতরঙ্গে ভাসা হাঁসের ঝাঁকের মত স্বপ্নগুলো তার ভাসে নদীর স্রোতে। সাঁতরে বেড়ায়া সে স্বপ্নের নাগাল পেতে। কিন্তু স্বপ্ন তার স্বপ্নই থেকে যায়। নাগাল আর পায় না সে তার। তবুও দমে যাবার পাত্র নয় রাইয়ান। কাল আরেকটা ইন্টারভিউ আছে। চাকরির ইন্টারভিউ। এবার টিকে গেলেই হলো। স্বপ্নগুলো তখন নিজে থেকেই ধরা দিবে। উদ্ভ্রান্তের ন্যায় আর পিছে ছুটতে হবে না তার। ছোট বোনের ফি জমা দিতে আর ধন্যা দিতে হবে না লোকেদের দ্বারে দ্বারে।মার ওষধ আনতে আর পরে থাকতে হবে না চোধুরির বাড়িতে।শুনতে হবে না আর দোকানীর বাকির টাকা ফেরত দেয়ার ঘেনর ঘেনর। লোকেরা আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলবে না, ‘মাশটার পাশ কইরা পোলাডা বেকার ঘুরতাছে। ঘরে মা-বোন না খাইয়া মরে পোলাডার কোনো খবর আছ’?
*
দুই বছর হলো রাইয়ান মাস্টার্স দিয়েছে। দু’বছর যাবৎ একটা চাকরির জন্য ঘুরঘুর করছে সে কোম্পানীগুলোর দ্বারে দ্বারে। ইন্টারভিউগুলো সে ভালভাবেই দেয়। প্রতিবারই ইন্টারভিউ দিয়ে ভাবে,এবার চাকরিটা আমার হবেই। কনফার্ম। কিন্তু তার ধারণা পরিশেষে ভুল প্রমানিত হয়।
*
বাবা মারা গেছে তার পরীক্ষা চলাকালীনই।তবু সে পিছ পা হয়নি।সবগুলো পরীক্ষা সে যথাযথভাবে দিয়েছে। কারণ, সে জানে, সংসারের হাল ধরার ভার এখন তার ওপর।
যদি সে এখন টলে যায় তাহলে এতদিনের পড়ালেখা সব বেকার যাবে। পরিবারের হাল ধরাও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু পরীক্ষা দিয়ে কী লাভ হলো? সে কি পেরেছে হাল ধরতে? একা একা বসে ভাবে সে নিরন্তর।
*
রাইয়ান! নাম ঘোষণা হতেই সে ঘাবড়ে গেল। হাতে হাত ঘসে বুকে থুতু দিয়ে ধাক্কা দিল গ্লাসের দরজাটা। ভেতর প্রবেশ করতেই এক ঝাপটা এসির বাতাস এসে পথের ক্লান্তি তার ধুয়ে দিল নিমিশেই। সালাম দিয়ে চেয়ারে বসল সে। সামনে কোট-সুট তিনজন বিচারক। প্রশ্ন যেন সহজ হয়, প্রশ্ন যেন সহজ হয়- মনে মনে জপতে লাগল অনবরত। দীর্ঘক্ষণের প্রশ্নে একবারও ভুল উত্তর দেয়নি সে। এবার সে কনফার্ম, চাকরিটা তার হবেই। বাহিরে এসে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষায় রইল সে। আরেকবার ভেতরে ঢুকার অনুমতির অপেক্ষায়! এবার ভিতরে ঢুকতে পারা মানেই চাকরি নিশ্চিত…
*
উস্কখুস্ক চুল আর মলিন চেহারায় ঘরে প্রবেশ করল রাইয়ান। চকিতে শুয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করল তার মা। কিরে চাকরিটা হইলো? কিছু না বলে ধীর পদে সোজা নিজের রুমে চলে গেল সে। তার মা তখন দুর্বল কণ্ঠে উঠে, হইব না! হইব না! গরীবের পোলাগো দেশে চাকরি নাই। চাকরি তো হইল সব বড়লোকের পোলাগো লাইগা।
*
সকালের পাখিরা এখনো জেগে উঠেনি। সূর্যের রশ্মি এখনো ফুটে উঠেনি। কুশার আঁধারে ঘেরা চতুর্পাশ। রাইয়ান ঘুম থেকে উঠে সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরে সাজগোজে ব্যস্ত। তার মা তখন ফজর পরে তাসবিহ পড়ছে অনবরত। সে রেডি হয়ে তার মার সামনে এসে দাঁড়ায়। মা তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
-কিরে এই সহাল সহাল কই যাস?
-নতুন চাকরিতে যোগ দিতে যাচ্ছি মা, দোয়া করো!
-গতকাইল না কইলি তোর চাকরি অয় নাই। তয় অহন কৈতন চাকরি আইল?
-হ মা, তুমি গতকাল ঠিকই বলছিলা, গরীবের কপালে চাকরি নাই। সব ধনীর কপালে। তারা তো বড় অংকের ঘুষ দিতে পারে। গরীবে তো আর তা পারে না। তাই গতকাল যখন চাকরিটা হলো না তখন ফেরার পথে এক পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়। তার মাধ্যমেই অন্য আরেকটা চাকরির ব্যবস্থা হয়। গরীবের চাকরি। যে চাকরিতে কোন ঘুষ লাগে না। লাগে না ইন্টারভিউও। বলেই সে দরজার দিকে হাঁটা ধরল।
তার মা তখন পেছন থেকে ডেকে উঠে, কিরে বাজান, চাকরিটা কী ? হেইডাই তো কইলি না।
দরজা থেকে ঘার ঘুরিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সে বলল, হেল্পার! গাড়ির হেল্পার…!!

আমার পোস্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই আমাকে follow না করে যাবেন না।ধন্যবাদ।।।

আমার পোস্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই আমাকে follow না করে যাবেন না।ধন্যবাদ।।।

Comments