বিয়ের পরের দিন‌ই বর পাগল


বিয়ের পরের দিন‌ই বর পাগল

.

বিয়ের রাতে বর বাসরঘরে ঢুকে আমতা আমতা করতে লাগল। আমি তখন লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছি। সে বেচারা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আমার পাশে এসে বসল। বললো, দেখো,তুমিও এডাল্ট,আমিও এডাল্ট। আমি ঘোমটার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বললাম,আমি এডাল্ট কে বলছে আপনারে?? আমার সার্টিফিকেটের বয়স সতেরো। সে আরো থতমত খেয়ে গেল। বললো, তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি,শুনবে?
আমি বললাম, আমার কবিতা পছন্দ না। তাও শোনাতে চাইলে তো আর কান বন্ধ করতে পারব না। সে সাথে সাথে শুরু করল,
দিন যায়, সন্ধ্যা আসিআসি, 
ওগো নববধূ,তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি,
তোমার মুখের ঐ মিষ্টি হাসি, মিষ্টি হাসি..

আমি বললাম, পাগলের প্রলাপের মতো এককথা দুবার করে বলেন কিজন্য?

দরজার পাশ থেকে তার ভাইবোনরা হেসে উঠলো। সাথেসাথেই দরজায় ধাক্কা পড়লো। সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। জলহস্তীর ছোটবোন টাইপের তার ফুপু দুলতে দুলতে ঘরে ঢুকল। বললো, আসতে দেরী হয়ে গেল,ব‌উ দেখতে আইলাম।
সে বিছানায় বসামাত্র বিছানা ক্যাকাৎ শব্দ করে একদিকে দুলে গেল। আমি রীতিমত কেঁপে উঠলাম। 
ভদ্রমহিলা নিজেই আমার ঘোমটা সরালেন। ভুরু কুঁচকে বললেন, মেকআপ দিছে একবস্তা! কোন পার্লার থেকে সাজছ? 
আমি উত্তর দেয়ার আগেই ভদ্রমহিলা আমার হাত-পা টেনে টেনে দেখতে লাগলেন। ছেলেকে দেখিয়ে বললেন, দেখ, মুখের থেকে কিন্তু পা কালো আছে!
ছেলে বিরক্ত হয়ে বলল,মুখে মেকআপ দেয়া মুখের থেকে পা তো কালো হবেই।
ফুপু 'হুমমম' টাইপের শব্দ করে চুপ করে গেলেন।
তারপর বললেন, আমার চৈতীর যখন বিয়ে দিয়েছিলাম,ছেলেপক্ষকে একদম সিম্পল ভাবে মেয়ে দেখাইছি। কোন সাজগোজ দেইনাই। তাতেই ছেলে চৈতীর ওপর পাগল হয়ে...
এদিকে আমার বর মশায় ফুপুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন। আমাকে পুরো কবিতাটাও এখন‌ও শোনাতে পারেননি এদিকে ফুপুর যাওয়ার নাম নেই। আমি ভাবছি, মিষ্টি হাসির পরের লাইন কি হতে পারে! নাহ, সবকিছু ছেলেরাই কেন করবে? আমারো একটা কবিতা লিখে আনা দরকার ছিল। অন্তত কপি তো করে আনতে পারতাম। আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে...
ফুপু আবার কথা বললেন, তোমার পড়ালেখা জানি কতদূর?
- জ্বী অনার্স সেকেন্ড ইয়ার করছি ইংলিশে।
ফুপু আবারো বুঝনদার স্টাইলে মাথা নাড়লেন, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠিয়ে বিয়ে দিছে,মেয়ে বুড়ি বানায়ে বিয়ে দিছে। আমার চৈতী ইন্টার পরীক্ষা দিল আর বিয়ে দিয়ে দিলাম, ওর এনগেজমেন্ট যেদিন হলো তারমধ্যে ওর প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা চলে।
আমার বর আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠল,ফুপু যাও, দূর থেকে জার্নি করে এসেছ। রেস্ট নাও গিয়ে, খাওয়া-দাওয়া করেছ?
ফুপু বললেন, হ্যাঁ খাওয়া-দাওয়া করেছি কিন্তু....
-কি?
ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফুপু আমার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে র‌ইলেন। বললেন, আসলে হয়েছে কি.. সেই উনিশশো পঁচানব্বই সালের কথা..আমার তখনো বিয়ে হয়নি বুঝলে..
আমার বর উশখুশ করছে, তার সম্ভবত প্রেশার‌ও বেড়েছে। যাওয়ার নাম নেই মহিলা উনিশশো পঁচানব্বই সাল থেকে শুরু করেছেন..
আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবার ফুপুর দিকে তাকালাম, জ্বী ফুপু বলেন।
তখন তো আমি ভাইয়া-ভাবীর সাথেই থাকতাম বুঝলে.. তো একরাতে তোমার বরকে তোমার শ্বাশুড়ি দিল বেদম পিটানি, রান্নাঘর থেকে আচার চুরি করে খেতে গিয়ে কৌটা ফেলে ভেঙে ফেলেছে..সে কি মার!!
আমার বরের লজ্জায় মনে হচ্ছে মাথা কাটা যাচ্ছে..
ফুপু আবার শুরু করলেন, তো তারপর আমি কোনরকম করে ঠেকালাম, ভাবীর ওপর খুব রাগ হলো। বললাম, এই ছেলেকে আমি আর তোমার কাছে দেব না। তারপর থেকে আমিই ওর দেখাশোনা করতাম,রাতে এই ঘরে নিয়ে ঘুমাতাম, তারপর আমার বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু অভ্যাস বুঝলে, যতবার এই বাড়িতে আসি আমি ওর সাথেই ঘুমাই.. আসলে..
আমি এবার সবটা বুঝে নিয়ে মুচকি হাসলাম। বললাম,জ্বী ফুপু,এত সংকোচের কি আছে? আচ্ছা,আমি কোন ঘরে থাকব বলেন।
ফুপু খুশী হয়ে গেলেন। বললেন, তোমার থাকার ঘর আমি গুছিয়ে দিয়েই এসেছি। চলো,দেখিয়ে দিচ্ছি। আমার চৈতী থাকবে তোমার সাথে।

আমি ফুপুর সাথে বেরিয়ে এলাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি আমার বর হতাশ, নির্বিকার, রাগান্বিত,পাগল পাগল একটা মিশ্রিত অদ্ভুত চেহারা নিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।
বিয়ের পরের দিন‌ই বর পাগল হয়ে গেলে তো বিরাট সমস্যা হবে..

1056 Views

Comments