আপনি যখন ইন্টারভিউয়ে


ইন্টারভিউয়ে ভাল ফলাফল পেতে হলে প্রেকটিস করা দরকার। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বসে মক ইন্টারভিউয়ের অভ্যাস করতে ??

.

ইন্টারভিউ কি?

ইন্টারভিউকে আধুনিক বিশ্বে পার্সোনালিটি টেস্ট বলা হয়। এটি এখন আর প্রার্থী কতটা জানে, তার পরীক্ষা নয়। এটি প্রার্থীর সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা। কনটেন্টভিক্তিক না হয়ে ইন্টারভিউ এখন হয়ে গিয়েছে অনেকটা সাইকোলজিক্যাল টেস্টের মতো। ভালো কমিউনিকেশন স্কিল, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের বিষয় ছাড়াও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে পার্সোনালিটি এ টেস্ট পার হওয়া কঠিন। পার্সোনালিটি টেস্ট কিন্তু কোনো ক্রস-এগজামিনেশন নয়। এটাকে একটা আলোচনাও বলতে পারেন। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শোনা হল ইন্টারভিউয়ের মূলমন্ত্র। ইন্টারভিউয়ে প্রার্থীর পড়াশোনা, দক্ষতা ও কমিউনিকেশন স্কিল এসব একসঙ্গে যাচাই করা হয়। দেখা হয় প্রার্থীর মধ্যে রয়েছে কতটা একাগ্রতা আর কাজের প্রতি নিষ্টা।


নিয়োগকর্তা প্রার্থীর যে যে বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করেন

১. যোগ্যতা

২. পজেটিভ মনোভাব
৩. সংস্থার প্রতি আগ্রহ
৪. কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা
৫. কমিউনিকেশন স্কিল
৬. কাজের অভিজ্ঞতা (যদি থাকে)


ইন্টারভিউয়ে প্রার্থীর যা করণীয়
ইন্টারভিউ হল কর্মজগতে প্রবেশের পরীক্ষা। এতে লক্ষ্য করা হয়, এই কাজের জন্য প্রার্থী নিজেকে কতটা যোগ্য প্রমাণ করতে পারছে। ইন্টারভিউ নিয়ে অহেতুক আতঙ্কে ভোগার দরকার নেই। আবার খুব একটা হালকাভাবে ভাবতে গিয়ে ব্যাপারটাকে কোনো গুরুত্ব দিলাম না, এমনটা হলেও চলবে না। 
পূর্ব প্রস্তুতি 
যে সংস্থায় চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হবে, সেই সংস্থা সম্পর্কে আগে যতটা সম্ভব জেনে যাওয়া ভালো। সংস্থার যদি কোনো ওয়েবসাইট থাকে, তবে তা ভালো করে পড়ে নিতে হবে। সংস্থার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন নিয়োগকর্তারা, তাই এই বিষয়টা হেলাফেলার নয়।

ইন্টারভিউয়ে ভাল ফলাফল পেতে হলে প্রেকটিস করা দরকার। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বসে মক ইন্টারভিউয়ের অভ্যাস করতে পারলে ভালো হয়। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আপনার কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা বন্ধুরাই জানিয়ে দিতে পারবে। যে পদের জন্য ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে, সেই পদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। একটি ফাইলে বা ব্রিফকেছে দরকারি কাগজপত্র গুছিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে। জামা-কাপড়ের ব্যাপারটা সংস্থার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। কর্পোরেট হাউজে ফরমাল পোশাক পরে যাওয়া উচিত, ক্যাজুয়াল ড্রেস এড়িয়ে চলাই ভালো। ইন্টারভিউয়ের পাঁচ থেকে দশ মিনিট আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। তাহলে কিছুটা ফ্রেশ ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাবেন এবং ইন্টারভিউয়ে আপনার আগ্রহও প্রকাশ পাবে। বেশি আগে চলে যাবেন না। সেটা আবার দেরি করে যাওয়ার মতোই দৃষ্টিকটু। সঙ্গে করে অন্য কাউকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। এতে এমন মনে হতে পারে যে, আপনি পরনির্ভরশীল অথবা আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। ইন্টারভিউয়ের সময় অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন।
ইন্টারভিউ চলাকালীন 
ইন্টারভিউ রুমে ঢুকেই পরীক্ষককে বিনয়ের সঙ্গে সালাম দিন। যদি বোর্ডে একাধিক সদস্য থাকেন, সালাম দেবার সময় সকলের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাবেন। ইন্টারভিউ বোর্ডের মুড বুঝে চলতে হবে। যদি তাঁরা আপনার সঙ্গে ফরমাল আচরণ করেন তবে আপনিও তাই করুন। যদি তাঁরা হালকা মুডে  আলোচনা চালিয়ে যেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনিও একটু হালকা মুডে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্ত অতিরিক্ত ক্যাজুয়াল কথাবার্তা না বলাই ভালো। আপনাকে বসতে না বলা অবধি একটু অপেক্ষা করুন। ঘরে ঢুকেই চেয়ার টেনে বসে পড়াটা শোভন নয়।


প্রশ্নকর্তার চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন। এই ‘আই কনট্যাক্ট’ অত্যন্ত জরুরি। না হলে মনে হতে পারে যে, আপনি মিথ্যা বলছেন বা আপনার আত্মবিশ্বারসের অভাব আছে। ইন্টারভিউ চলাকালীন মুখে কিছু না রাখাই ভালো। যদি আপনাকে চা-কফি অফার করা হয়, নিতে পারেন। তবে স্ন্যাক জাতীয় খাবারে সোজা বলে দিন, ‘নো থ্যাস্কস’। তবে বিনয়ের সঙ্গেই এ ধরনের কথা বলবেন।

 
নিজের সম্পর্কে বলতে বলা হলে
চাকরির ইন্টারভিউ-এর প্রশ্নের যদি কোনো সাজেশন বই হত, তা হলে এই প্রশ্নটিই দেখা যেত প্রথম পাতায়। শতকরা নিরানব্বই জন চাকরিপ্রার্থীই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন ইন্টারভিউ বোর্ডে এসে। আপনার রেজাল্ট, একাডেমিক বা প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে সব তথ্যই তো দেয়া থাকে বায়োডাটায়। তবুও ইন্টারভিউয়ার এই প্রশ্ন দিয়েই শুরু করেন। নিজের সম্পর্কে বলা মানেই নিজের ঢাক নিজে পেটানো নয়। আবার এই প্রশ্নের উত্তরে একেবারে কিছু না বলাও বোকামি। এক্ষেত্রে যদি নিজের স্কুল-লাইফের কথা দিয়ে শুরু করে দেন, তা হলে প্রশ্নকর্তা মাঝপথেই আপনাকে থামিয়ে দিয়ে অন্য প্রশ্নে চলে যেতে পারেন। তখন মনে হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাই তো বলা হল না। কিন্ত উনি তো থামিয়ে দিলেন। আগে থেকেই ভেবে রাখা ভালো এই সময় কী বলতে হবে। নিজের সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে জানানোর এটাই তো আসল সময়। কোথায় শুরু করবেন, কোথায় শেষ করবেন এবং কী কী বিষয় ছুঁয়ে যাবেন- সবই ভাবতে হবে। আর চাই কথা বলার ফ্লো। মাথায় রাখতে হবে যে, এক্ষেত্রে প্রশ্নকর্তা অন্য প্রশ্নে চলে যেতে পারেন। তাঁর মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কথা বলার স্টাইলে নতুনত্ব আনতে হবে। বিষয়টি বাড়িতে চর্চা করে যাওয়া ভালো। নিজের গুণাগুণ জানানোর পালা বোধ হয় এবার এসেছে। তার মানে এই নয় যে, নিজের ঢাক নিজে পেটান। নিজের কথা নিজেকেই বলতে হবে বটে, কিন্ত এটা তো চাকরির স্বার্থে। কোন মনগড়া কথা না বললেই হল।

এই সুযোগে আপনার আগের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আলোচনা করা যেতে পারে। আগের সংস্থায় কত বেতন ছিল, তা জিজ্ঞেস করতেই পারেন নিয়োগকর্তা। এও জানাতে হবে, কেন আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে কখনই সেই সব সংস্থার নিন্দা করা উচিত নয়। এতে প্রশ্নকর্তা খুশি হবেন না।


নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানানোর পর এমন কোনো পারদর্শিতার কথা বলুন, যা আপনার নতুন কাজে সাহায্য করতে পারে। একা শুনে নিয়োগকর্তারা আপনার প্রতি আগ্রহ দেখতে পারেন। সুতরাং নিজের কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আপনার কাজের সাফল্য, অভিজ্ঞতা এবং পারিপার্শ্বিক বিষয় সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।


শুধু কী বলবেন সে কথা ভাবলেই তো হবে না, কীভাবে বলবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। নিজের কমিউনিকেশন স্কিলের পরীক্ষা আগেই করে নিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যান। নিয়োগকর্তার স্বার্থে আপনি কীভাবে কাজ করবেন অথবা এই সংস্থায় আপনার মতো কর্মী কেন অপরিহার্য, সে-কথাও আপনার বক্তব্যে উঠে আসা উচিত।


নিজের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক কথা বলা ঠিক নয়। নিজের দোষ-ক্রটি নিয়ে একটি শব্দও এই বক্তব্যে খরচ করা ঠিক নয়। দোষ-ক্রটি নিয়ে প্রশ্ন করলে তবেই তা নিয়ে কথা বলা উচিত। এমনটা ভাবা ঠিক নয় যে, আপনি নিজের সম্পর্কে যা বলছেন তা সবটাই প্রশ্নকর্তা বিশ্বাস করে নেবেন। তাঁকে কিছু উদাহরণ দিয়ে বিশ্বাস করতে সহায়তা করুন।

যেমন, সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা প্রসঙ্গে এটা বলে দিন যে, আগের কর্মস্থলে আপনি কী ধরনরে সমস্যায় পড়েছিলেন এবং কীভাবে তার সমাধান করেছিলেন। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বুঝেশুনে কথা বলাই ভালো। প্রশ্নকর্তার মনোভাব বুঝে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে হবে।  নিজের বক্তব্যের শেষের দিকে জানিয়ে দিন, কেন আপনি এই সংস্থায় কাজ করতে আগ্রহী। সংস্থা সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য জানার হলে তা প্রশ্নকর্তার কাছে জানতে চান।


তৈরি থাকুন এই সব প্রশ্নের জন্য Read More

ইন্টারভিউ কি? আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন-

 

www.tkincome.com

 

369 Views

Comments