জুমু‘আর দিন দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন:


নিঃসন্দেহে জুমু‘আর দিন সেরা দিন ও আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন।

.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে জুমু‘আর দিন সেরা দিন ও আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন। আল্লাহর নিকট তা ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।”[ সহীহ ইবন মাজাহ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘যে সকল দিনে সূর্য উদিত হয়েছে তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমু‘আর দিন। সেই দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সেই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেই দিনেই জান্নাত থেকে তাকে বের করা হয়েছে।”[সহীহ মুসলিম]

জুমু‘আর দিনের মুস্তাহাব আমলসমূহ:

১. জুমু‘আর দিনে ফজরের সালাতে বিশেষ কিরা‘আত পাঠ করা:
জুমু‘আর দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা আস-সাজদাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আদ-দাহার (ইনসান) পড়তেন।”[সহীহ বুখারী ও মুসলিম]

২. বেশি বেশী দরূদ শরীফ পাঠ করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে জুমু‘আর দিন তোমাদের সর্বোত্তম দিনসমূহের মধ্যে অন্যতম। সেই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার জান কবজ করা হয়েছে, শিঙ্গায় ফুৎকার হবে এবং (আসমান ও যমীনবাসী) ধ্বংস অথবা বেহুশ হবে। সুতরাং সে দিনে বেশি বেশি করে আমার ওপর সালাত পাঠ কর; কেননা তোমাদের সালাত আমার নিকট পেশ করা হয়।” তারা (সাহাবায়ে কেরাম) জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সালাম আপনার নিকটে কিভাবে পেশ করা হবে অথচ তখন আপনি (অর্থাৎ তাঁর হাড্ডি) পুরাতন হয়ে যাবেন? তিনি বললেন, আল্লাহ নবীগণের শরীর মাটির জন্য খাওয়া হারাম করে দিয়েছেন।”[সুনান নাসাঈ]

৩. সূরা কাহাফ পাঠ করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে অপর জুমু‘আ পর্যন্ত একটি নূর তাকে আলোকিত করবে।”[হাকেম, শাইখ আলবানী ইরওয়াতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৪. গোসল করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন. ‘‘তোমাদের কেউ জুমু‘আর সালাতে আসতে চাইলে সে যেন অবশ্যই গোসল করে আসে।”[সহীহ বুখারী ও মুসলিম]
এ হাদীসে উল্লেখিত আদেশ থেকে গোসল ফরয সাব্যস্ত হবে না; বরং তার অর্থ হলো গোসল উত্তম; কেননা অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কেউ যদি ওযূ করে জুমু‘আর সালাতে আসে তা যথেষ্ট হবে। তবে গোসল করা উত্তম।”[সুনান তিরমিযী]

৫. মেসওয়াক করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জুমু‘আর দিন প্রত্যেক বালেগ (বয়সপ্রাপ্ত) ব্যক্তি গোসল ও মেসওয়াক করবে এবং সামর্থ্য অনুসারে সুগন্ধি লাগাবে।”[সহীহ মুসলিম]

৬. সামর্থ্য অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর পোষাক পরিধান করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল ও সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে এবং সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করে, অতঃপর শান্তভাবে মসজিদে আসে, মনে চাইলে সালাত পড়ে, কাউকে কষ্ট না দেয়, ইমাম আসার পর থেকে নিয়ে সালাত আদায় পর্যন্ত চুপ থাকে তার জন্য এটা উভয় জুমু‘আর মাঝের কাফ্ফারা হবে।”[ আহমাদ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘তোমাদের কারো যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে কাজের দুটি পোশাক ব্যতীত জুমু‘আর জন্য দুটো আলাদা পোশাক রাখতে পারে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।[ সুনান আবু দাঊদ]

৭. সকাল সকাল সালাতের জন্য যাওয়া:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে (সহবাসের পর) ফরয গোসল করে অতঃপর (জুমু‘আর উদ্দেশ্যে) গমন করে সে যেন একটি উট ছদকা করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় ভাগে গমন করে সে যেন একটি গরু ছদকা করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় ভাগে গমন করে সে যেন একটি মেষ ছদকা করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ ভাগে গমন করে সে যেন একটি মুরগী ছদকা করল। যে ব্যক্তি পঞ্চম ভাগে গমন করে সে যেন একটি ডিম ছদকা করল। যখন ইমাম (খুতবার উদ্দেশ্যে) বের হয়ে আসে তখন ফেরেশতাগণ হাজির হয়ে যিকির (খুৎবা) শ্রবণ করতে থাকে।[সহীহ বুখারী ও মুসলিম]

৮. ইমাম সাহেব খুৎবার জন্য বের হওয়ার আগ পর্যন্ত (নফল) সালাত ও যিকিরে লিপ্ত থাকা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু‘আর সালাতে আসবে অতঃপর ইমাম খুৎবা শেষ করা পর্যন্ত তাওফীক অনুসারে সালাত পড়বে ও চুপ থাকবে তারপর ইমামের সঙ্গে জুমু‘আর সালাত আদায় করবে তাকে (তার গুনাহ) সামনের জুমু‘আ এবং তার পরের তিন দিন পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[সহীহ মুসলিম]

৯. দ্বিপ্রহরের সঙ্গে সঙ্গে যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি জুমু‘আর সালাত কায়েম করা:
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর জুমু‘আর সালাত আদায় করতেন। তিনি আরো বলেন: আমরা জুমু‘আর সালাত আগেভাগে পড়ে নিতাম এবং জুমু‘আর পর (দুপুরের খানা খেয়ে) আরাম করতাম।[সহীহ বুখারী]
সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সূর্য ঢলার পর জুমু‘আর সালাত আদায় করতাম এবং সালাতের পর (সূর্যের অত্যাধিক তাপের কারণে) ছায়ায় ফিরে আসতাম।[সহীহ মুসলিম]

১০. জুমু‘আর সালাতের দুই রাক‘আতে সূরা আল-আ‘লা ও সূরা আল-গাশিয়া পাঠ করা অথবা সূরা আল-জুমু‘আ ও সূরা আল-মুনাফিকূন পাঠ করা:
নু‘মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা আল-আ‘লা ও সূরা আল-গাশিয়াহ পড়তেন।[সহীহ মুসলিম]
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতে সূরা আল-জুমু‘আ ও সূরা আল-মুনাফিকূন পাঠ করতেন।[সহীহ মুসলিম]

১১. জুমু‘আর পরে বাড়ীতে দুই রাকাত অথবা মসজিদে চার রাকাত সালাত আদায় করা:
আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর পরে (বাড়ীতে) না ফিরা পর্যন্ত কোনো সালাত পড়তেন না। (বাড়ী ফিরার) পরে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন।[সহীহ বুখারী]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা যখন জুমু‘আর সালাত আদায় করবে তখন জুমু‘আর পর চার রাকাত সালাত পড়বে।[সহীহ মুসলিম]

Comments


@$hr@ful !$l@m009 5 years ago

amin

 
  • Like
  • Love
  • HaHa
  • WoW
  • Sad
  • Angry