ঘৃতকুমারীর বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা


ঘৃতকুমারীর উপকারিতা

.

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী বহুগুণে গুণান্বিত একটি উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারীর ভেষজ গুণাগুণের অন্ত নেই। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে ঘৃতকুমারী নানা অসুখ-বিসুখ সারাতে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। ঘৃতকুমারীর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক।

ঘৃতকুমারীতে রয়েছে ৭৫ এর বেশি উপাদান। এতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, বি২, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, এনজাইম, চিনি, সালিসিক এসিড, লিগনিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফলিক এসিড, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, কপার, ফলিক এসিড ইত্যাদি।

ঘৃতকুমারী পাতার ভেতরে যে স্বচ্ছ রস থাকে তাকে ঘৃতকুমারীর জেল বলা হয়। ঘৃতকুমারীর পাতা চ্যাপ্টা আকৃতির। এই গাছে ফুলও হয়। এর আদিবাস উত্তর আফ্রিকা ও কেনারিদিপুঞ্জে। ঘৃতকুমারীর জুস স্বাস্থ্যের উপকার করার পাশাপাশি রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়। জেনে নিন ঘৃতকুমারী জুসের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা।

রোগ প্রতিরোধঃ

ঘৃতকুমারীতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। মেক্সিকান এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘৃতকুমারী ফুলা প্রতিরোধ করে। ত্বকের নানা সমস্যা দূর বিশেষ করে পায়ের যত্নে ঘৃতকুমারী সাহায্য করে।জার্মানের এক গবেষণা মতে, ঘৃতকুমারীতে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরী উপাদান মুখের যত্নে ব্যবহৃত হয়। কারণ এর জুস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে যে ছাপ পড়ে তা দূর করে। তাছাড়া দেহের ভেতরের জমে থাকা বিষ দূর করে দেহকে সুস্থ রাখে ঘৃতকুমারীর জুস।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ

হার্ট ও বুকে ব্যথা পায় এমন ৫০০০ রোগীর ওপর গবেষণা করে জানা যায় নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জুস খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায়, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত ১২ সপ্তাহ ঘৃতকুমারীর জুস খেলে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ কমে।এটি রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে, চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। দূষিত রক্ত দেহ থেকে অপসারণ করে এবং রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জুস খেলে দীর্ঘদিন আপনার হার্ট সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে।

ওজন কমাতে সাহায্যঃ

ঘৃতকুমারীর অনেক গুণাগুণের মধ্যে অন্যতম একটি গুণ হলো ঘৃতকুমারী ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জুস পান করতে পারেন।যেহেতু ঘৃতকুমারী শরীর দূষণমুক্ত রাখে, সেহেতু ওজনও স্বাভাবিকভাবে কমে। শরীরে ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। ঘৃতকুমারীর জুস পানে এই প্রদাহ দূর হয়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধেঃ

ঘৃতকুমারী সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এর জুস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুণ উপযোগী। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জুস খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত এর জুস পান করুন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ

ঘৃতকুমারীতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরী উপাদান। এই দুটি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত এর জুস পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ

ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। এর ভালো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তবে ঘৃতকুমারীর জুস নিয়মিত পান করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিক্যান্সার উপাদান। এর জুস পান করলে শরীরে ক্যান্সারের রোগের জীবাণু দ্রুত ছড়ায় না।ঘৃতকুমারীর জুসে রয়েছে ইমোডিন নামক উপাদান যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এটি সাহায্য করে।

হজমে সহায়তাঃ

পরিপাক যন্ত্রকে সঠিক রেখে হজমে সহায়তা করে ঘৃতকুমারীর জুস। এতে রয়েছে পাচনীয় বৈশিষ্ট্য। হজমজনিত সমস্যা থেকে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। তাই সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকতে হলে ঘৃতকুমারীর জুসের বিকল্প নেই। কারণ ঘৃতকুমারীর জুস পরিপাক ও হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ঘৃতকুমারীর জুসের বিকল্প নেই।এটি আলসার প্রতিরোধেও ভূমিকা পালন করে। ঘৃতকুমারী সকল প্রকার হজম সংক্রান্ত সমস্যা ও পেটের সমস্যা দূর করে। পারস্যের এক গবেষণা মতে, ঘৃতকুমারী পেট ব্যথা দূর করে, পেট ফাঁপা দূর করে এবং বাতের সমস্যা দূর করে। ভারতীয় এক গবেষণায় বলা হয়েছে ঘৃতকুমারী পেপটিক আলসার নিরাময়ে কাজ করে। পরিপাকযন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখতে, পেটের কৃমি দূর করতে ঘৃতকুমারী সাহায্য করে।

মুখের দূর্গন্ধ ও ঘা দূর করতেঃ

মুখের দূর্গন্ধ ও ঘা দূর করতে সাহায্য করে ঘৃতকুমারী। ঘৃতকুমারীর জুস মাউথ ওয়াশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং মুখের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখা যায়। এতে রয়েছে ভিটামিন সি যা মাড়ি ফোলা, রক্ত পড়া, ঘা হওয়া দূর করে। মুখের কোথাও ঘা হলে সেখানে ঘৃতকুমারীর জেল লাগালে ঘা শুকিয়ে যাবে।

ত্বক ও চুলের যত্নেঃ

ত্বক ও চুলের যত্নে ঘৃতকুমারীর ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। ঘৃতকুমারীর জেল ব্যবহারে ত্বকের দাগ দূর হয় এবং ব্রণ দূর হয়। চুলের যত্নেও এটি সাহায্য করে। মাথার খুশকি দূরীকরণ, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নতুন চুল গজানো ইত্যাদিতে ঘৃতকুমারী সাহায্য করে।

মাংসপেশীর ব্যথা অপসারণঃ

ঘৃতকুমারী শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে। ঘৃতকুমারীর জুস নিয়মিত পান করলে মাংসপেশীর ব্যথা ও জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়। কারণ এতে রয়েছে বি সিসটারোলসহ ১২টি উপাদান যা ব্যথা দূর করে। এছাড়া হাত পায়ের গিঁটের জড়তা দূর করতেও সহায়তা করে।

দাঁতের যত্নে ঘৃতকুমারীঃ

ঘৃতকুমারী দাঁতের যত্নে ভূমিকা রাখে। এটি দাঁত ও মাড়ির ব্যথা দূর করে এবং দাঁত সুস্থ রাখে। দাঁতের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া দমনে সাহায্য করে ঘৃতকুমারী। এছাড়া এটি ইনফেকশন দূর করতে, ক্ষয়রোধ করতে সাহায্য করে।

(সংগৃহীত)

 

 

Comments


RS saju 5 years ago

thanks

 
  • Like
  • Love
  • HaHa
  • WoW
  • Sad
  • Angry