জাতির সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ সন্তানেরা


বাংলাদেশ এর সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ দের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা

.

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন

আমিন, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুলঃ

আমিন, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল (১৯৩৫-১৯৭১) ১৯৩৫ সালের জুন মাসে ফেনী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাঘচাপড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মোহাম্মদ আজহার পাটোয়ারি এবং মাতা জোলেখা খাতুন। ছোটবেলায় তাঁর পড়াশোনা শুরু হয় পাড়ার মক্তবে, পরে বাঘচাপড়া প্রাইমারি স্কুল এবং আমিষা পাড়া হাইস্কুলে। ১৯৫৩ সালে তিনি নৌবাহিনীতে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য করাচির অদূরে মানোরা দ্বীপে পিএনএস কারসাজ-এ (নৌবাহিনীর কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৫ সালে মেকানিক্যাল কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। সফলভাবে কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্রগ্রামে পিএনএস বখতিয়ার নৌঘাঁটিতে বদলি হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রুহুল আমিন মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন এবং এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে ২নং সেক্টরে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে সকল সেক্টর থেকে প্রাক্তন নৌ-সেনাদের আগরতলায় সংগঠিত করে নৌবাহিনীর প্রাথমিক কাঠামো গঠন করা হয়। পরে তাদের কলকাতায় আনা হয়। সেখানে সবার সাথে রুহুল আমিনও ছিলেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে কলকাতার গার্ডেন রীচ নৌ-ওয়ার্কশপে দুটি বাফার গান ও মাইন-পড জুড়ে গানবোটে রূপান্তর করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে।

৬ ডিসেম্বর মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ ও মিত্র বাহিনীর গানবোট ‘পানভেল’ ভারতের হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে রওনা হয়। ৮ ডিসেম্বর সুন্দরবনের আড়াই বানকিতে বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট ‘চিত্রাঙ্গদা’ তাদের বহরে যোগ দেয়। ৯ ডিসেম্বর কোনো বাধা ছাড়াই তারা হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করেন।

পরদিন ১০ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় তারা মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল ৭টায় কোনো বাধা ছাড়াই তারা মংলায় পৌঁছান। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মংলাতেই অবস্থান নেয় এবং পানভেল, পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হতে থাকে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। এসময় আকাশে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা ও পলাশ থেকে বিমানের উপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলি পদ্মা ও পলাশের ওপর গুলি ও বোমা বর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ শত্রুর একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে রুহুল আমিন নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোনক্রমে তীরে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্যক্রমে তীরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।

মুক্তিযুদ্ধে রুহুল আমিনের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

 

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল

কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা ঃ

কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা (১৯৪৭-১৯৭১) শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ভোলা জেলায় দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা মোহাম্মদ হাফিজ ছিলেন সেনাবাহিনীর হাবিলদার। মোস্তফা কামাল ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে নিয়োগ করা হয় ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, কুমিল্লায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্বে সিপাহি মোস্তফা কামাল অবৈতনিক ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান।

১৯৭১ সালের উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় মোতায়েন করে। পাকিস্তানি চক্রান্ত বুঝতে পেরে কয়েক জন বাঙালি সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে মেজর শাফায়াত জামিল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল খিজির হায়াত খানসহ সকল পাকিস্তানি অফিসার ও সেনাদের গ্রেফতার করেন।

এরপর তারা মেজর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার গানশীপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬ বিমানযোগে মুক্তিবাহিনীর ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার ছিলেন মোস্তফা কামাল।

১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের উপর। আক্রমণের খবর পেয়ে মেজর শাফায়াত অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে হাবিলদার মুনিরের নেতৃত্বে ডি কোম্পানির ১১ নম্বর প্লাটুন পাঠান। সারাদিন যুদ্ধ চলে। ১৮ এপ্রিল সকালে শত্রুবাহিনী দরুইন গ্রামের কাছে পৌঁছে যায়। দুপুর ১২ টায় অবস্থানের পশ্চিমদিক থেকে মূল আক্রমণ শুরু হয়। শত্রুর একটি দল প্রতিরক্ষার পিছন দিক দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিবাহিনী দরুইন গ্রাম থেকে আখাউড়া রেল স্টেশনের দিকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে সরে আসতে হলে তাদের প্রয়োজন ছিল নিরবচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের জানান যে, তিনি নিজে এই কাভারিং ফায়ার দান করবেন এবং সবাইকে পেছনে হটতে নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা মোস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। কিন্তু মোস্তফা ছিলেন অবিচল। মোস্তফার গুলীবর্ষণে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হয় এবং তাদের অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে মোস্তফা কামালের অবস্থানের উপর মেশিনগান এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মোস্তফা কামালের এল.এম.জি-র গুলি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্বক জখম হন। তখন পাকিস্তানি সৈনিকরা ট্রেঞ্চে এসে তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। 

দরুইন গ্রামের জনগণ মোস্তফা কামালকে তাঁর শাহাদাতের স্থানের পাশেই সমাহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির] 

 

 মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন ঃ

জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন (১৯৪৯-১৯৭১) সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের অফিসার, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন মরমী গানের প্রতি আসক্ত এক সংসার বিবাগী ব্যক্তিত্ব। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মুলাদির পাতারচর প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদজান পাইলট হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে বি.এস-সি অর্নাস ক্লাশে ভর্তি হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৭ সালে ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী অফিসার ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন্ড পদ লাভ করে তিনি ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৯-৭০ সালে রিসালপুরে মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বেসিক কোর্স ট্রেনিং এবং পরে ইনফ্যান্ট্রি স্কুল অব ট্যাক্টিক্র্ থেকে অফিসার উইপন ও ডব্লিউ কোর্স-১৩ সমাপ্ত করেন। ১৯৭০ সালের ৩০ আগষ্ট তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সোয়াতের সাইদুর শরীফে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিনি তাঁর তিনজন সহকর্মি ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার ও ক্যাপ্টেন আনাম সহ গোপনে ৩ জুলাই কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও মুনাওয়ার তায়ী নদী অতিক্রম করে শিয়ালকোটের নিকটে সীমান্ত পার হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে ৭ নং সেক্টরের মেহেদিপুর (মালদহ জেলায়) সাবসেক্টরের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। এসময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ৭ নং সেক্টরের সেক্টর-কমান্ডার ছিলেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কানসাট, আরগরার হাট ও শাহপুর সহ কয়েকটি সফল অভিযানে অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফলে ডিসেম্বর মাসে রাজশাহীর চাঁপাইনববগঞ্জ দখলের জন্য তাঁকে একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়

পাকবাহিনী ইতোমধ্যেই নবাবগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষার জন্য মহানন্দা নদীর তীরে তিন কিলোমিটার এলাকা ব্যাপি বাঙ্কার নির্মাণ করে রাখে। এ বাঙ্কারে ছিল পাঁচ ফুট গভীর গতায়াত পরিখা। লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল এবং জন পঞ্চাশেক মুক্তিযোদ্ধাসহ মহিউদ্দিন নওয়াবগঞ্জ শহরের পশ্চিমে বারঘরিয়া নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন (১০ ডিসেম্বর)। ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যূষে তিনি এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সহ রেহাইচরের মধ্য দিয়ে নৌকাযোগে মহানন্দা নদী পার হন এবং অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর বেশ কয়েকটি বাঙ্কার দখল করে নেন। পাকিস্তানী বাহিনী তখন পশ্চাদপসরণ করে নওয়াবগঞ্জ শহরে অবস্থান নেয় এবং একটি দালানের ছাদ থেকে মেশিনগানে অনবরত গুলি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শহরাভিমুখে অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখে। এই সংকটময় সময়ে মহিউদ্দিন শত্রুর মেশিনগান ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তিনি বা হাতে এসএমজি ও ডান হাতে একটি গ্রেনেড নিয়ে গোপনে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসেন। হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে তিনি দ্রুত মেশিনগানবাহী বাড়িটির দিকে ধাবিত হন। ত্বরিত গতিতে তিনি মেশিনগান বরাবর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। বিস্ফোরিত গেনেডের আঘাতে মেশিনগানের স্থলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। অকস্মাৎ রাস্তার পাশের একটি দোতলা বাড়ি থেকে শত্রুর একটি গুলি তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন (১৪ ডিসেম্বর)।

এতে হতোদ্যম না হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে শত্রুর অবস্থানের ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত এ আক্রমণ অব্যাহত ছিল। পাকসেনারা শেষপর্যন্ত রাতের অন্ধকারে নওয়াবগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ভোর রাতে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ উদ্ধার করে তাঁকে ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা এখনও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। এগুলো হলো বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজ (বর্তমান স্বরূপনগরে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেট (ঢাকা সেনানিবাস), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর হাইস্কুল (রহিমগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সরণি (রাজশাহীর একটি সড়ক), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরি (বিআইডব্লিউটিসি), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ক্লাব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান] 

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ

রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুরঃ

রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর (১৯৪৩-১৯৭১) পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ল্যান্স নায়েক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মুন্সী মেহেদী হাসান ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। মাতা মকিদুন্নেসা। আবদুর রউফ গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করেন। শৈশবেই তিনি পিতৃহারা হন। সংসারের অভাব দেখে আবদুর রউফ ১৯৬৩ সালের ৮ মে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল্সে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ পান পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আবদুর রউফ ইপিআর-এর ১১নং উইং চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সারা দেশে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। চট্টগ্রাম ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যদের পূর্ব সচেতনতা এবং সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে তারা রুখে দাঁড়ায় শত্রুর বিরুদ্ধে। রাতেই তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। যোগ দেয় ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে।

ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর-এর ১৫০ জন সৈনিককে দায়িত্ব দেওয়া হয় রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌপথে নিরাপত্তাব্যুহ তৈরির। এই দলের এক নম্বর এলএমজি চালক মুন্সী আবদুর রউফ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলাধীন বাকছড়ির একটি বাঙ্কারে।

৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২ নং কমান্ডো ব্যাটেলিয়ানের দুই কোম্পানি সৈনিক ৭টি স্পিডবোট ও ২টি লঞ্চ সহযোগে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌপথের আশেপাশে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর অবস্থান অাঁচ করে লঞ্চ থেকে তাদের অবস্থানের উপর মর্টারে গোলাবর্ষণ শুরু করে। তাদের এই অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে কিছু পাকিস্তানি সৈন্য তীরে নেমে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ঘিরে ফেলে।

ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান পেছনে হটার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নিরাপদে অবস্থান ত্যাগের জন্য প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মুন্সী আবদুর রউফের এলএমজির কাভারিং ফায়ারে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তাঁর সৈন্যদের নিয়ে পেছনে হটতে থাকেন। তাঁর অব্যর্থ গুলিতে স্পিডবোটগুলো ডুবে যায় এবং সেগুলোতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা হতাহত হয়। বাকি সৈন্যরা লঞ্চ দুটিতে করে পালাতে থাকে। পাকিস্তানি সৈন্যরা এলএমজির রেঞ্জের বাইরে গিয়ে লঞ্চ থেকে মর্টারে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। অসম সাহসী আবদুর রউফ তখনো গুলি চালানো অব্যাহত রেখেছিলেন। অকস্মাৎ শত্রুর একটি গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মুন্সী আবদুর রউফের দেহ। সহযোদ্ধারা পরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে নানিয়ারচরের চিংড়ি খাল সংলগ্ন একটি টিলার উপর সমাহিত করে।

মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও আত্মদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে সিপাহী মুন্সী আবদুর রউফকে অনরারি ল্যান্স নায়েক পদে মরনোত্তর পদোন্নতি দান করে।  [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

 

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর রহমান

রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর ঃ

রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর (১৯৪৫-১৯৭১) ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহি এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৪৫ সালে তাঁর জন্ম। ভারত বিভাগের (১৯৪৭) পর তাঁদের পরিবার পূর্ববঙ্গে এসে খুলনা জেলার খালিশপুরের ঘরোদায় স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। হামিদুর রহমান খালিশপুর প্রাইমারি স্কুলে এবং পরে স্থানীয় একটি নৈশ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন এবং রেজিমেন্টের চট্টগ্রাম সেনানিবাস কেন্দ্রে তাঁকে নিয়োগদান করা হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর আক্রমণের মুখে তিনি সেনানিবাস ত্যাগ করে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। পরে তিনি বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ধলই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন।

পাকসেনাদের ধলই সীমান্ত ঘাঁটির সামরিক গুরুত্বের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটিটি দখলের পরিকল্পনা করে। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘সি’ কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। হামিদুর রহমান ছিলেন এই কোম্পানির সদস্য। ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে অবিরাম সংঘর্ষ চলে। যুদ্ধের ফলাফল তখনও ছিল অনিশ্চিত। ২৮ অক্টোবরের পূর্ব রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি প্লাটুন অতি সন্তর্পণে পাকসেনাদের ঘাঁটি অভিমুখে অগ্রসর হয়। শত্রুর ঘাঁটির কাছাকাছি এসে মুক্তিযোদ্ধারা যখন অতর্কিত আক্রমণের উদ্যোগ নেন, তখন অকস্মাৎ একটি মাইন বিস্ফোরণের শব্দে শত্রুপক্ষ সচকিত হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দুপক্ষে সংঘর্ষ চলে। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে শত্রুপক্ষের এল.এম.জির গুলবর্ষণের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি ব্যাহত হয়।

এ সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে হামিদুর রহমান শত্রুর এল.এম.জি পোস্ট ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রেনেড হাতে রাতের অন্ধকারে সন্তর্পণে হামাগুড়ি দিয়ে শত্রুর এল.এম.জি পোস্টের দিকে অগ্রসর হন এবং রাতের শেষ প্রহরে গ্রেনেড ছুড়ে দুই এল.এম.জি চালককে হত্যা করেন। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুর এল.এম.জি স্তব্ধ হয়ে যায়; কিন্তু নিজে তিনি শত্রুপক্ষের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন (২৮ অক্টোবর ১৯৭১)।

এল.এম.জির গুলিবর্ষণ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। তীব্র আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর ঘাঁটি দখল করে নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার অভ্যন্তরভাগে নিয়ে আসে। ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। ধলই সীমান্তে তাঁর শাহাদাত স্থলে পরবর্তী সময়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ হামিদুর রহমানকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

সম্প্রতি হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ আমবাসা থেকে এনে ঢাকায় সমাহিত করা হয়েছে। [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]

 

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান

রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর ঃ

রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর (১৯৪১-১৯৭১) বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ঢাকার আগাসাদেক রোডস্থ পৈতৃক বাসভবনে ১৯৪১ সালের ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে সারগোদার পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাডেমীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৩ সালের জুন মাসে কমিশন লাভ করেন। কর্মস্থল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের রিসালপুর। পরের বছর পেশোয়ারে জেট পাইলট নিযুক্ত হবার পূর্বে করাচিতে জেট কনভার্সন কোর্স সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছুটিতে এসে মতিউর রহমান স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ভৈরবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। পরে পারিবারিক চাপে মে মাসে তিনি পাকিস্তান চলে যান। সেখানে তিনি বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন।

২০ আগস্ট সকালে করাচির মশরুর বিমানঘাঁটি থেকে পাইলট অফিসার মিনহাজ রশীদের টি-৩৩ বিমান নিয়ে উড়বার শিডিউল ছিল। মতিউর ছিলেন তার প্রশিক্ষক। টি-৩৩ বিমানের সাংকেতিক নাম ছিল ব্লু বার্ড। প্রশিক্ষণকালে মতিউর বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেন নি। বিমানটি বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় সীমান্তের কাছে থাট্টায়। মতিউরের মৃতদেহ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পাওয়া গেলেও মিনহাজের লাশের কোন হদিস মেলে নি। মতিউর রহমানকে দাফন করা হয় মশরুর বিমানঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কবরস্থানে। মতিউর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। [মোঃ সেলিম]

 

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ

শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ (১৯৩৬-১৯৭১) পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ল্যান্স নায়েক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। নূর মোহাম্মদ শেখ নড়াইল জেলার মহিষখালি গ্রামে ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পিতৃমাতৃহীন অবস্থায় আর্থিক সংকটের ফলে তিনি পৈতৃক জমিজমা বিক্রি করে ফেলেন। পরে তিনি স্থানীয় আনসার বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস্-এ যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁর পোস্টিং হয় দিনাজপুর সেক্টরে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধে আহত হন। যুদ্ধে তাঁর বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার তাঁকে ‘তমগা-এ-জং’ ও ‘সিতারা-এ-হরব’ পদকে ভূষিত করে। ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে তিনি যশোর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে বদলি হন।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে নূর মোহাম্মদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি যশোর ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধরত ছিলেন। একটি স্থায়ী টহল-দলের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনকালে ৫ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ঘাঁটির তিন দিকে অবস্থান নেয় এবং অতর্কিতে টহল-দলটিকে ঘিরে ফেলে। নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে টহল-দলটি পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করে। এই যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী কাশীপুরে সমাহিত করে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। [মোঃ সিদ্দিকুর রহমান]

Comments