নিয়মিত ফুলকোপি, পালং শাক,বাদাম এবং ডালের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত কেন জানা আছে?


সহজ কথায় বলতে দীর্ঘদিন যদি সুস্থভাবে বাঁচতে হয়, তাহলে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

.
সহজ কথায় বলতে দীর্ঘদিন যদি সুস্থভাবে বাঁচতে হয়, তাহলে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কারণ নানাবিধ গবেষণা অনুসারে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এই উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। বিশেষত, হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখতে ফাইবারের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তবে এখানেই শেষ নয়, নিয়ম করে যদি শরীরে ফাইবারের ঘাটতি মেটানো যায়, তাহলে আরও নানাবিধ শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...

১. গল এবং কিডনি স্টোনের মতো রোগ দূরে থাকে: বেশ কিছু গবেষণার পর একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে গল ব্লাডারে এবং কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। সেই সঙ্গে কিডনির ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।

২. হাড় শোক্তপোক্ত হয়: বুড়ো বয়সে নানা হাড়ের রোগে আক্রান্ত হয়ে যদি শয্যাশায়ী হতে না চান, তাহলে নিয়মিত এমন শাক-সবজি এবং ফল খাওয়া উচিত যাতে ফাইবার রয়েছে। ইচ্ছা হলে খেতে পারেন ফাইবার সমৃদ্ধ ডালও। কারণ দেহের অন্দরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে হাঁড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে নানাবিধ বোন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।

৩.ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে: একাধিক গবেষাণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে প্রতি ১০ গ্রাম ফাইবারের কারণে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১০ শতাংশ করে কমে যেতে শুরু করে। তাই দিনে যত বেশি মাত্রায় ফাইবারের প্রবেশ ঘটাবেন শরীরে, তত ক্যান্সার রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হবে। প্রসঙ্গত, অ্যানেলস অব অঙ্কোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে ব্রেস্ট এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারের প্রকোপ কমাতে ফাইবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. শরীর থেকে টক্সিক উপাদানেরা সব বেরিয়ে যায়: খাবার এবং আরও নানাভাবে সারা দিন ধরে আমাদের শরীরে প্রবেশ করা টক্সিক উপাদানদের যদি ঠিক সময়ে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ। কারণ সেক্ষেত্রে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই তো এইসব বিষাক্ত উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দিতে নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরায়। আসলে ফাইবার শরীরে প্রবেশ করার পর এই সব টক্সিক উপাদানদের এক মুহূর্তও শরীরের অন্দরে থাকতে দেয় না। ফলে কোনও ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

৫. হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি সাত গ্রাম ফাইবার, হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৯ শতাংশ হারে কমিয়ে দেয়। তাই যত বেশি মাত্রায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাবেন, তত হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আসলে ফাইবার রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।

৬. আয়ু বৃদ্ধি পায়: হাওয়ার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করলে হঠাৎ করে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ১৯ শতাংশ কমে যায়। তাই সুস্থভাবে যদি দীর্ঘদিন বাঁচতে চান, তাহলে ভুলেও ফাইবারকে রোজের ডায়েট থেকে বাদ দেওয়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!

৭.ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করলে যে কেবল মাত্র ওজন কমে এমন নয়, স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতেও এই জাতীয় খাবারগুলি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি নিজের বি এম আই-কে যদি বিপদ সীমার নিচে সব সময় রাখতে চান, তাহলে ফাইবার রিচ ফুড খেতে ভুলবেন না যেন!

৮. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে বেশি মাত্রায় শরীরে ফাইবার প্রবেশ করতে থাকলে দেহের অন্দরে থাকা উপকারি ব্যাকটেরিয়াদের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম ক্ষমতার যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি মেটাবলিজম রেটও বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একদল ইটালিয়ান গবেষক এই বিষয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন, তাতে দেখা গেছে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে থাকলে শর্ট-চেন ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরে কর্মক্ষমতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।

৯. টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যাদের শরীরে ২৬ গ্রামের মতো ফাইবার প্রবেশ করে, তাদের ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৮ শতাংশ কমে যায়। আসলে ফাইবার, শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে এতটা বাড়িয়ে দেয় যে রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। তাই যাদের পরিবারে এমন রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করতে পারেন। এমনটা করলে যে উপকার মিলবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
893 Ansichten

Kommentare