কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা)


প্রশ্ন এসেছিল কুরআন বড় না রাসুল। আমরা একটু জানার চেষ্টা করেছি।

.

আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন আমি কোন আলেম নই বা আমি কোন বুজুর্গ আবেদও নই, আমি নিতান্ত সাধারন একজন মানুষ। আমার যেকোন বিষয়ে ভুল হতেই পারে। আমার ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হবো এবং ভুলটা সংশোধন করে নেব।

ঘটনার সুত্রপাত, কোন একজন মুসলিম ভাই রাসুল (সা:) এর জন্মউতসব পালনের উদ্দেশ্যে পীরের দরগায় দানের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ফেসবুকে স্টাটাস দিলেন। 

''আমি অবাক হয়নি কারণ সাধারণ মানুষ কুর‍য়ান শরীফ বোঝে না, আর তথকথিত হুযুররাতো সারাদিন পেটের ধান্ধায় ব্যাস্ত মানুষকে বোঝাবার সময় নেই আর নিজেরাও বোঝে না। পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফে (আয়াত শরীফ ৫৮) স্পষ্ট লেখা আছে, হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে পেয়ে "ফাল ইয়াফ্রাহু" অর্থাৎ খুশী প্রকাশ কর, আর সেই খুশী প্রকাশ হবে তোমাদের জীবনের সঞ্চিত সকল কিছুর চেয়ে উত্তম।''

আমার আবার একটা পুরান অভ্যেস কোন কিছু শুনে ফাল পারি না। যাচাই করার চেষ্টা করি। এজন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ''কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়।''  সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) হাদিস নম্বরঃ [5]

তো আমি সুরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নাম্বার আয়াত দেখলাম। 

৫৭. হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। 
৫৮. বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ। 

এখানে ঈদে মিলাদুন্নবী বা রাসুলুল্লাহ (সা:) এর জন্মউতসব করার ব্যপারে কিছু পেলাম না। আমি আলেম না তাই হয়তো এটা বোঝার যোগ্যতা আমার নাই। তাহলে কোন আলেম এই আয়াতের অর্থ বুঝিয়ে বলেছেন সেটা খুজতে হবে। খুজতে শুরু করলাম। 

তাফসীরে মারেফুল কোরআন

https://archive.org/stream/mareful/Maariful-Quran-04%28Almodina.com%29#page/n549/mode/2up

এখানে সুরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নাম্বার আয়াতের ব্যাখ্যাতে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে।

অন্য এক তাফসীরে বলা হয়েছে, 

এই দুই আয়াত থেকে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো :

এক.  অন্তরের সব ধরনের ব্যাধির সর্বোতকৃষ্ট প্রতিষেধক হলো আল-কুরআন।

দুই.  দুঃখ-কষ্ট, ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক যে কোনো সমস্যা সমাধানের উপায় কুরআন থেকেই শিখতে হবে, অন্য কোনো মানব রচিত মতবাদ থেকে নয়।

তিন. কুরআন হলো পার্থিব জগতের সব ধরনের ধন-সম্পদের চেয়েও মূল্যবান ও শ্রেষ্ঠ। সেই ব্যক্তি প্রকৃত দুর্ভাগা-যে পার্থিব সব সম্পদের অধিকারী হয়েও কুরআনের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। পক্ষান্তরে সে-ই প্রকৃত ধনী যিনি পার্থিব জীবনে অর্থ-সম্পদহীন হয়েও কুরআনের আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করেন।

 

সুতরাং উপরোক্ত দুটো তাফসির থেকে আমরা স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে  এই দুই আয়াতে উপদেশবানী,অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত এবং এই কুরআন আমরা পেয়েছি আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীতে এবং এ নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

কিন্তু পীর ভাইয়েরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুলে পাক (সা) কে বুঝিয়েছেন। এই বিষয়টা নিয়েই কথা বলতে গিয়েই এক ভাই প্রশ্ন করে বসলেন... 

''কুরআন বড় নাকি রাসুল (সা) বড়?''

 

অনেক বড় প্রশ্ন । যে প্রশ্ন শুনে যেকোন মুসলিমের হৃদয় কেপে ওঠে। আমার বিবেক তো আমাকে সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দিলো। কিন্তু বিবেক তো নির্ভর করে ব্যক্তির জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার উপরে। তাই বিবেকের উত্তর ভুলও হতে পারে। তাই ভাবলাম ফেসবুকে একটা স্টাটাস দিয়ে দেই। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে অনেক আলেম আছে। তাতে আমিও জানলাম অন্যরাও জানতে পারলো। 

কিন্তু ফেসবুকে প্রশ্নটা করার পর আমার ৮ বছরের ফেসবুক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ইম্পাক্ট পড়লো।
আমার খুব কাছের কয়েকজন আমাকে ব্লক করে দিলো। কোন আলেম বা ইসলামী বিষয়ে লেখালেখি করেন এমন কেউ উত্তর দিলো না, ফোন করে রিকোয়েস্ট করলাম এই বিষয়টা একটু পরিষ্কার করেন তবুও তারা সারা দিলোনা। 
সাধারন মানুষেরা উত্তর দিলো দলীল নয় আবেগ দিয়ে। কেউ বললো, এটা অবান্তর প্রশ্ন, কেউ বললো ধৃষ্টতা, কেউ বললো এটা বিপথগামীতার লক্ষণ, কেউ বললো এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা, কেউ বললো এটা কোন প্রশ্নই হতে পারেনা, কেউ বললো এ ধরনের প্রশ্ন ঈমান নষ্ট করবে আবার কেউ বললো এ ধরনের প্রশ্ন করে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আরো নানা কিছু।

সারাদিনে প্রায় ৫০ জনের উপর বিভন্ন মানুষকে এই প্রশ্ন করেছি। ধার্মিক মানুষ, সাধারন মানুষ প্রায় সবার প্রতিক্রিয়া ফেসবুকের মতোই ছিল। তাদের ভাবসাবে মনে হচ্ছিল আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেছি, নাস্তিক টাইপের হয়ে গেছি। প্রায় সবাই উত্তর দিয়েছিল নবীজি (সা) বড়। মাগরীবের নামাজটা জামেউল উলুম মাদ্রাসা মাসজিদে পড়ে সুমনকে সাথে নিয়ে চলে গেলাম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হুজুরের কাছে। প্রিন্সিপাল বশির আহমাদ হুজুর আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। তিনি এই প্রশ্নের দলিল ভিত্তিক সুন্দর উত্তর দিলেন। 

এই উত্তর শোনার আগে আমাদের প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা) শান ও মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের ধারনা থাকা উচিত যেন কোন ভাবেই আমাদের কথা, চিন্তা বা আলোচনার দ্বারা কোন বেয়াদবী না হয়ে যায়। 

উম্মতের কান্ডারী হুজুরে কারিম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের মর্যাদা এতই উন্ণত , মহান ও অসিম যে , কোন মানুষের যথাযথ উপলদ্ধির আওতায় তা আসতে পারে না । এ জন্য উভয় জাহানের সরদার মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মর্যাদা যথাযথ ভাবে বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয় ।

সুরা ইমরানের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,''

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেই আল্লাহর শপথ, যার কুদরতি হাতে আমার জীবন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমার প্রতি তার ভালোবাসা, তার মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততির ভালোবাসার চেয়ে বেশি হবে। — বোখারী

সুরা তওবার ২৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন..

বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। 

একজন মুসলিম যদি আল্লাহ এবং তার রাসুলকে নিজের জীবন, সন্তান সন্ততি, সম্পদ, ব্যবসা সবকিছুর চেয়ে বেশি ভাল না বাসে তাহলে সে কখনোই প্রকৃত মুমিন হতে পারবেনা। 

এতটুকুতেই আমরা অনুধাবন করতে পারছি মহান আল্লাহ রাসুল (সা) কে কতটুকু মর্যাদা দিয়েছেন। তাই রাসুল (স) এর সাথে কুরআনের তুলনা করা কোনভাবেই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু যারা এরকম প্রশ্ন তোলে তাদের জন্যই আমাদের এতো আলোচনা। এবার চলুন প্রিন্সপাল হুজুর কি উত্তর দিলেন।

তিনি বললেন,''কুরআন হলো আল্লাহর বানী, তাই কুরআন আল্লাহর জাত ও সীফাতের অংশ। আর রাসুল (সা) হলেন আল্লাহর সৃষ্টি। তাই সৃষ্টা আর সৃষ্টি সমান হতে পারেনা।

কুরআনের মতো মহামুল্যবান গ্রন্থ তার উপর নাজিল হয়েছে বলেই তিনি এত সম্মানিত।

সুরা ইমরানের ১৪৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন,

''আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।''

এই কুরআন আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কাছে গুরুত্বপূর্ন বলেই রাসুল (সা) সারাটা জীবন কষ্ট করেছেন। এতগুলো যুদ্ধ করেছেন শুধুমাত্র এই কুরআনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। 

তাই সুরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নাম্বার আয়াত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা এই কুরআনকেই বুঝিয়েছেন এবং ৬১ নাম্বার আয়াতে কুরআনের কথাটা সরাসরি উল্লেখও করেছেন।

তাই যারা এই দুটো আয়াতকে ভিন্ন ব্যাখ্যা করে নবীজির (সা) এর জন্মোতসব পালন করতে চায়। সেই উপলক্ষে পীরের দরগায় দান করতে টাকা পয়সা দিতে বলে আমরা তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিক এবং তাদের সঠিক জ্ঞান দান করুক। আমিন।

 

16052 Görüntüler

Yorumlar


Shykh Mohammed 4 yıllar önce

Jsg

 
  • Beğen
  • Aşk
  • HaHa
  • Vay
  • Üzgün
  • kızgın
 
Sajib Hasan 4 yıllar önce

আলহামদুলিল্লা, ভালো লাগল,এরকুম আরো পোস্ট চাই,

 
  • Beğen
  • Aşk
  • HaHa
  • Vay
  • Üzgün
  • kızgın
 
social bangla 5 yıllar önce

http://fhulerkusum.com

 
  • Beğen
  • Aşk
  • HaHa
  • Vay
  • Üzgün
  • kızgın
 
Md Fahad 6 yıllar önce

আলহামদুলিল্লাহ্, অনেক কিছু জানলাম।

 
  • Beğen
  • Aşk
  • HaHa
  • Vay
  • Üzgün
  • kızgın