পটেটো ডায়েটে


চটজলদি ওজন কমাতে চাইলে টানা পাঁচ দিন খেতে হবে শুধু সেদ্ধ আলু! তাহলেই কেল্লা ফতে!

.
অতিরিক্তি ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই টানা ৫ দিন শুধু সেদ্ধ আলু খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ওজন কমবে তরতরিয়ে। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এতটাই চাঙ্গা হয়ে উঠবে যে একাধিক মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। আলুকে নিয়ে অনেকের মনেই নানা সন্দেহ রয়েছে। কেউ কেউ তো আবার মনে করেন আলু খেলে ওজন নাকি আরও বেড়ে যায়। তবে জেনে রাখা উচিত যে সেদ্ধ আলু খেলে ওজন তো বাড়েই না, উল্টে নানা উপকার পাওয়া যায়। কারণ আলুতে উপস্থিত নানাবিধ ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং আরও নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করে একদিকে যেমন শরীরের ইতিউতি জমে থাকা মেদকে ঝরিয়ে ফেলে, তেমনি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, সেদ্ধ আলু আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, তবে তার আগে সেদ্ধ আলুকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ওজন কমানো যায়, সেই বিষয়টির উপর আলোকপাত করা হবে।

ওজন কমাতে পটেটো ডায়েটে:
 
"ইউরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিল" এর রিপোর্ট অনুসারে টানা ৫ দিন সেদ্ধ আলু ছাড়া আর কিছু না খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে যেতে সময় লাগবে না। আসলে আলুতে উপস্থিত ফাইবার বহুক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাওয়া প্রবণতা কমে, সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে ক্যালরির প্রবেশ কম হওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে খুব অল্প দিনেই।


মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম:
 
পটেটো ডায়েটেকে কাজে লাগিয়ে ওজন কমাতে চাইলে টানা পাঁচ দিন যেমন শুধু সেদ্ধ আলু খেতে হবে, তেমনি আরও কিছু নিয়ম মেনে চলার প্রয়োজন রয়েছে, না হলে কিন্তু সেভাবে সুফল মিলবে না। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা একান্ত জরুরি, সেগুলি হল-

১. আলু সেদ্ধ বানানোর সময় তাতে অল্প করে সন্ধক লবন মেশাতে পারেন। তবে যদি সম্ভব হয়, তাহলে একেবারে নুন খাবেন না। কারণ এমনটা করলে ফল মিলবে দ্রুত।
 
২. আলু সেদ্ধ ছাড়া কিন্তু এই পাঁচদিন আর কিছু খাওয়া চলবে না। তবে ইচ্ছা হলে লাল চা, হার্বাল টি এবং কপি পান চলতেই পারে। কিন্তু এমন পানীয়তে ভুলেও দুধ বা চিনি মেশালে চলবে না কিন্তু!
 
৩. পটোটো ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া করার সময় হেভি ওয়ার্কআউট করলে কিন্তু বিপদ! তবে ইচ্ছা হলে অল্প বিস্তর হাঁটাহাঁটি চলতে পারে।
 
৪. এই বিশেষ ধরনের ডায়েটি মেনে চলাকালীন প্রয়োজনীয় সব ওষুধই খেতে পারেন। কিন্তু ভুলেও ডায়াটারি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া চলবে না।
 
৫. টানা পাঁচ দিন আলু ছাড়া আর কিছু যে খাওয়া চলবে না, সে তো না হয় জেনে গেলেন! কিন্তু কতটা পরিমাণে আলু খেতে হবে জানেন কি? এক্ষেত্রে যতক্ষণ না পর্যন্ত পেট ভরছে, ততক্ষণ আলু সেদ্ধ খেতে পারেন। তবে ২ টো সেদ্ধ আলু খাওয়ার পর দেখবেন পেট এমন ভরে যাবে যে আর খেতেই পারবেন না! প্রসঙ্গত, এই নিয়মগুলি মেনে আলু সেদ্ধ খাওয়া শুরু করলে ওজন তো কমবেই, সেই সঙ্গে কিন্তু আরও একাধিক শারীরিক উপকারও মিলবে।
 
যেমন ধরুন...

১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে:
 
আলুতে উপস্থিত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে চোখে পরার মতো। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে।

২. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:
 
একেবারে ঠিক শুনেছেন বন্ধু, নিয়মিত আলু সেদ্ধ খাওয়া শুরু করলে বাস্তবিকই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে চোখে পরার মতো। আসলে আলুতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর ব্রেন পাওয়ারকে নিমেষে বাড়িয়ে তুলতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করতেও সাহায্য করে। তাই তো বলি বন্ধু, বুড়ো বয়স পর্যন্ত ব্রেন একেবাপরে ঘোড়ার মতো ছুটুক, এমমনটা যদি চান, তাহলে রোজের ডায়েটে সেদ্ধ আলুকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!

৩. ফাইবারের চাহিদা মিটবে:
 
মাঝারি মাপের একটা আলুতে প্রায় ২ গ্রামের কাছকাছি ফাইবার থাকে, যা সারা দিনের মোট ফাইবারের চাহিদার প্রায় ৮ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। প্রসঙ্গত, ডায়াটারি ফাইবার একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো শরীরে যাতে কোনও সময় ফাইবারের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে আলুর কোনও বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না।

৪. ভিটামিন সি-এর যোগান ঠিক থাকবে:
 
শরীরকে সুস্থ রাখতে এই বিশেষ ভিটামিনটির কোনও বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না। আর নিয়মিত আলু খেলে শরীরে এই বিশেষ উপাদানটির ঘাটতি দূর হতে সময় লাগে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। সেই কারণেই তো আলুকে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় বেশ উপরের দিকে জায়গা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৫. পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর হবে:
 
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে আলুতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এই শরীরের আরও উপকারে লাগে। আর একথা জেনে রাখা ভাল যে কলাতে যে পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ রয়েছে অলুতে। তাই এই সবজিটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে ব্লাড প্রেসারের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই এই সবজিটি একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়, এই বলে আলুকে কোনও ভাবেই কাঠগড়ার দাঁড় করানো উচিত নয়। বরং বেশি করে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

৬. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে:
 
আলুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং জিঙ্ক শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে যে কোনও ধরনের ত্বকের রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, ত্বকের পরিচর্যায় আরেকভাবেও আলুকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো আলু নিয়ে তার পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টের সঙ্গে অল্প পরিমাণ মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। এইভাবে প্রতিদিন ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন দারুন ফল মিলতে শুরু করেছে।

৭. দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমবে:
 
এই সবজিটিতে উপস্থিত ভিটামিন সি দেহের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র প্রদাহের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে দেহের কোনও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা যায় কমে। সেই সঙ্গে আর্থ্রাইটিস এবং গাউটের মতো রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।

৮. ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে পালাবে:
 
আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ, যা শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলকে জন্ম নিতে দেয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগের প্রতোপ বৃদ্ধি পয়েছে, তাতে আরও বেশি মাত্রায় সেদ্ধ আলু খাওয়ার প্রয়োজন বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

Comments