পবিত্র কোরআন ও মাকড়সা


মাকড়সা আর্নিয়া পর্বের আর্র্কেনিডা বা লুতা শ্রেণীর প্রাণী; এরা বাতাসে নিঃশ্বাস গ্রহন করে

.

সূধী পাঠক, মহান স্রষ্টার সৃষ্টিতে ভরপুর আমাদের প্রকৃতি। এই সৃষ্টির মধ্যে এতটাই বৈচিত্রতা, যা হিসেব করা আজকের বিজ্ঞানের কাছেও প্রায় অসম্ভব কাজ। বৈচিত্রময় এই জগতে যে প্রাণীগুলো মানুষের সাথে পরিচিত বা কোন না কোন উপায়ে সম্পর্ক যুক্ত শুধুমাত্র তাদেরকেই মানুষ চিনে জানে,তাদের নিয়ে গবেষণা করে।এই ভাবুক সম্প্রদায় যেমন ছোট বড় প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেন তেমনি তারা ক্ষুদ্রতর প্রাণীদের নিয়েও ভাবেন। সেই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সময় ধরে মাকড়সা নিয়েও গবেষণা চলছে।আমরা আমাদের প্রয়োজনে ভাবুকদের গবেষণাকর্ম থেকে মাকড়সার সামন্য পরিচয় জেনে নেই।

মাকড়সা আর্নিয়া পর্বের আর্র্কেনিডা বা লুতা শ্রেণীর প্রাণী; এরা বাতাসে নিঃশ্বাস গ্রহন করে; প্রজাতি বৈচিত্রের দিক থেকে এরা সপ্তম স্থানে আছে। প্রায় ৪০ হাজার প্রজাতি রয়েছে বলে বিজ্ঞানের ধারণা এর মধ্যে ১০৯ পরিবারের তালিকা তৈরী হয়েছে। প্রায় সকল মাকড়সাই শিকারী প্রাণী এবং পোকামাকড় শিকার করে খায়।তারা বিভিন্ন উপায়ে শিকার ধরলেও অধিকাংশই তাদের তৈরী জাল দিয়ে শিকার করে। আবার অনেকে শিকারের গায়ে তাদের নিঃসৃত রস দিয়ে তৈরী সিল্কের সূতা ছুড়ে মারে সেই সূতায় শিকার জড়িয়ে পড়ে; আবার অনেকে মাটিতে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকে,চলমান পোকার উপড় সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে।আরেক প্রজাতি রয়েছে যারা বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকে সুযোগ বুঝে শিকারের উপর লাফিয়ে পড়ে।

সৃষ্টির এক ভিন্ন বৈচিত্র এই মাকড়সা, অষ্টপদী এই পোঁকাটির দেহ সৌষ্ঠব পোকার জগতে এক ভিন্নতা এনেছে। প্রকৃতির এই বৈচিত্রময় সৃষ্টি ভাবুকরা সত্যিকারেই বিপাকে পড়ে আছেন। মাকড়সার দেহটি দুই খণ্ডে বিভক্ত,সামনের অংশকে সেফালোথোরাক্স (cephalothorax) আর পেছনের অংশকে এবডোমেন (abdomen) বলে। অন্যান্য পোকাদের মত মাকড়সার এন্টেনা থাকেনা। উন্নত প্রজাতির মাকড়সার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থাকে; অন্যান্য অর্থোপোড প্রাণীর মত মাকড়সার মুখমণ্ডলে বাড়তি মাংসপেশী থাকেনা, প্রয়োজনে হাইড্রলিক চাপে তা চোট বড় হয়। সবচেয়ে ছোট আকৃতির একটি পূর্ণাঙ্গ মাকড়সার দৈর্ঘ ৪ মিমি এর কমও হতে পারে; একটি বড় মাকড়সা লম্বায় ১০ সেমি পর্যোন্ত হতে পারে। একটা বড় আকৃতির মাকড়সার ওজন ১৫০ গ্রাম পর্যোন্ত হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় এক প্রকার শিকারী মাকড়সার লেজের দৈর্ঘ্য ১০-১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সাধারনতঃ মাকড়সার দৃষ্টি শক্তি কম; অধিকাংশ মাকড়সার  দেহের সামনের দিকে চার জোড়া চক্ষু থাকে,বিভিন্ন গোত্রে এই চক্ষুগুলি বিভিন্নভাবে সাজানো থাকে। তবে লাফানো মাকড়সার চক্ষু তিন জোড়া ও দেখতে অদ্ভুৎ; মাথার সামনের দিকে গায়ে গায়ে লাগানো এক জোড়া বড় আকৃতির চক্ষু মুখ মণ্ডলের সামনের দিকে থাকে এদর দুই পার্শ্বে থাকে আরেকজোড়া মাঝারী সাইজের, মাথার পিছনে দুই দিকে থাকে আরেক জোড়া। এদের দৃষ্টি ক্ষমতা অত্যান্ত প্রখর,গঙ্গা ফড়িং এর প্রায় দশগুণ। মানুষের দৃষ্টিশক্তি এই মাকড়সার চেয়ে মাত্র পাঁচগুণ বেশী; অর্থাৎ পোকার জগতে এদের দৃষ্টি শক্তি সবচেয়ে বেশী। অধিকাংশ মাকড়সার তীক্ষ্ণ বিষদাত থাকে, দাতগুলো থাকেফাঁপা তারা এই দাতকে ইংজেকসনের সুই এর মত ব্যবহার করে। শিকার অথবা শত্রু গায়ে তার এই দাত দ্বারা বিষাক্ত তরল ডুকিয়ে দেয়।

প্রায় সকল মাকড়সাই শিকার করে খাদ্য আহরণ করে। তারা স্বজাতি সহ বিভিন্ন পোকা শিকার করে খায়। তারা সাধারণত তাদের নিজের দেহাকৃতির চেয়ে বড় কোন প্রাণীকে শিকার করতে পারেনা। তবে তাদের  চেয়ে বেশী ক্ষুদ্র প্রাণীদেরকেও শিকার করতে পারেনা। মাকড়সা ভিন্ন প্রজাতির মাকড়সাকে যেমন খেয়ে ফেলে তেমনি স্বজাতিকেও রেহাই দেয়না, এই কারণে বেশীরভাগ প্রজাতির মাকড়সাই একত্রে বসবাস করতে পারেনা। প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে,অধিকাংশ প্রজাতির মধ্যেই একটা বিষ্ময়কর বৈশিষ্ট রয়েছে-তাদের স্ত্রী মাকড়সা যৌনমিলনের পর তার পুরুষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলে। কোন কোন প্রজাতিতে এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে পুরুষ মাকড়সার সামনের পায়ে হুকের মত অংশ থাকে যা দিয়ে যৌন মিলনের সময় তার স্ত্রী সঙ্গীকে শক্ত করে ধরে রাখে যাতে তাকে খেয়ে ফেলেতে না পারে।  আবার কোন কোন প্রজাতিতে পুরুষ সঙ্গীর আকৃতি এতটাই ছোট হয় যে তাকে শিকার করে খাওয়া স্ত্রী সঙ্গীরপক্ষে সম্ভব নয়। প্রায় সকল প্রজাতিতেই স্ত্রী মাকরসা জাল বোনে; কিছু কিছু প্রজাতিতে দেখাযায় পুরুষ সঙ্গীও স্ত্রী মাকড়সার বোনা জালের কাছে ছোট করে জাল বোনে ও স্ত্রী মাকড়সার জালের সাথে সংযুক্ত করে রাখে এই প্রজাতির পুরুষেরা আকৃতিতে খুব ছোট হয়ে থাকে বলেই স্ত্রীরা তাদেরকে খেতে পারেনা।

মাকড়সার শিকার পদ্ধতি- বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হল ‘জাল বিস্তার পদ্ধতি’। মাকড়সারা শিকারের জন্যে বিভিন্ন উপায়ে জাল তৈরী করে। যেখানে তৃণলতা বা সব্জী বাগানে বিভিন্ন পোকা আহার করে, সেখানে মাকড়সা ভূমির সমান্তরালে জাল বোনে ফলে আহার শেষে পোকারা উড়ে যাওয়ার সময় জালে আটকা পরে তখন শিকারী মাকড়সা সেই আটকেপড়া পোকাদের আহার করে। উড়ন্ত পোকা দরার জন্যে মাকড়সারা ভুমির সাথে খাড়া বা উলম্ব ভাবে জাল বোনে। যে মাকড়সা জাল দিয়ে শিকার ধরে তারা চোখে খুব ভাল দেখতে পায়না কিন্তু তারা কম্পনে খুব স্পর্শকাতর, জালে শিকার আটকা পড়েলে যে কম্পন সৃষ্টি হয়  তা উপলব্দি করে শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। জাল বিস্তার ছাড়াও মাকড়সারা বিভিন্ন উপায়ে শিকার ধরে; ভল্লুক ও লাফানো মাকড়সারা শিকার পেলে জোড় করে ধরে কামড়ে দেয়, বিষ ক্রিয়ায় শিকার মরে গেলে তাকে আহার করে।

 

 

                                     

 

ভল্লুক মাকড়সাঃ

স্ত্রী ভল্লুক মাকড়সা তাদের বোনা রেশমী বিছানায় ডিম পাড়ে এবং বিছানাকে পেচিয়ে গোল বলের মত তৈরী করে যাতে করে তা তাদের সাথে করে নিয়ে যেতে পারে যখন যেখানে যায়। ডিমের এই বল গুলোকে রেশম সূতা দ্বারা তাদের লেজের অগ্রভাগে বেঁধে নিয়ে তা বহন করে। যখন বাচ্চা ফোটে তখন বাচ্চাগুলি হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের পিঠের উপর চড়ে বসে, মা বাচ্চাদের নিয়ে যেখানে খুশি যেতে পারে, এমন কি দিন- সপ্তাহ ধরে এভাবে রাখতে পারে। এই ভল্লুক মাকড়সার মায়েরা  সন্তানের প্রতি খুব যত্নশীল হয়ে থাকে। বাচ্চারা যখন কিছুটা বড় হয়ে আসে তখন তারা মাকে ত্যাগ করে নিজের মত করে জীবযাপনে অন্যত্র চলে যায়।  লাফান মাকড়সা-ভাল দৃষ্টিশক্তি থাকার কারণে এই মাকড়সারা বেশকিছু দূর পর্যোন্ত দেখতে পায়,ছিঁচকে চোরের মত তারা চুপি চুপি শিকারের খুব কাছাকাছি যেতে পারে, সুযোগ মত শিকারের উপর লাফিয়ে পড়ে, যেহেতু তারা গাছে লতাপাতায়, দেওয়ালে শিকার করে ফলে অনেক সময়্‌ নীচে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তা তেকে বাঁচার জন্যে এরা তাদের দেহ থেকে নিঃসৃত রেশমী সূতা আদি অবস্থানের সাথে আটকে নিয়ে লাফ দেয়, পড়ে গেলেও সেই সূতায় তারা ঝুলে থাকে। এই মাকড়সারা রাতে ঘুমানোর জন্যে রেশমী তাবু তৈরী করে, সেই তাবুতে স্ত্রী মাকড়সা ডিম পারে, তারা ডিম তাবুর ভেতরে রেখেই শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে। এই প্রজাতির পুরুষেরা সাথী খুঁজতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে। অনেক সময় স্ত্রী মাকড়সা বুজতে পারেনা যে আগন্তুকটি তারই প্রজাতির পুরুষ; তখন সে তাকে খেয়ে ফেলতে চায়, এই অবস্থায় আগন্তুক পুরুষটি এক ধরণের বিশেষ নাচ দেখায় তখন স্ত্রী মাকড়সাটি স্বজাতির ঐপুরুষটিকে চিনতে পারে এবং তাকে স্বাগত জানায়।

এই লাফান মাকড়সার দৃষ্টিশক্তি এতটাই প্রকট যে তাদেরকে পর্যবেক্ষণকারী মানুষকে তারা চিনতে পারে। এদের কোন কোন প্রজাতি এতটাই লাজুক যে এমন পরিস্থিতিতে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে কিছু সাহসী প্রজাতিও রয়েছে যেমন Phidippus audax, Platycryptus undatus, এরা পর্যবেক্ষণকারী মানুষ তাদের কাছাকাছি আসলে তাদেরকে চিনতে পারে, ভয়ে পালিয়ে যায়না, কখনো কখনো লাফিয়ে আঙ্গুলের উপর উঠে আবার এক আঙ্গুর থেকে আরেক আঙ্গুলে এমন কি এক হাত থেকে আরেক হাতে লাফালাফি করতে থাকে। আমরা এখানে অত্যান্ত সংক্ষেপে দু’একটা প্রজাতির সাধারণ বৈশিষ্টের কথা বৈজ্ঞানীক পর্যোবেক্ষন থেকে আলোচনা করলাম; আরও হাজার হাজার প্রজাতি রয়েছে যারা বিজ্ঞানের কাছেও অজানা অচেনা।এখন প্রশ্ন হল একটা মাকড়সা কি করে তার জীবন চক্রের এই বিষয়গুলো জানতে পেল? কেনইবা প্রজাতিতে প্রজাতিতে বৈশিষ্টের এত পার্থক্য দেখা দিল। বিবর্তন বাদীরা হয়তো বলবেন তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ইচ্ছা ও চেষ্টার ফলে তাদের মধ্যে এই সকল পরিবর্তন এসেছে, আর এই পরিবর্তন কখন কিভাবে হতে হবে তা নিয়ন্ত্রন করছে প্রকৃতি; অর্থাৎ সময়ের পরিবর্তনে প্রকৃতির সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যামে মাকড়সার দেহে এই বৈচিত্রতা এসেছে।

সূধী পাঠক, আমরা যদি গভীরভাবে ভেবে দেখি,ক্ষুদার তাড়ণায় কোন মাকরসা যদি বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হয় তবে তার মধ্যে যে পরিবর্তন আসবে তা হয়তো  শিকার করার পুরানো পদ্ধতি পরিবর্তীত হয়ে নতুন কোন পদ্ধতীর রূপ নেবে, তাতে তার দৈহিক আকৃতি, আচার আচরণ, তার জীবনযাত্রার মধ্যে এত পার্থক্য কেন আসবে? বিজ্ঞান বলছে প্রায় ৪৩ হাজার প্রজাতি রয়েছে; এদের মধ্যে রয়েছে আকৃতি প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার নানা প্রভেদ।কোন চিন্তাশীল মানুষ কি একথা স্বীকার করতে পারে যে এই বৈচিত্র আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে? মাকড়সাদেরক  কে শিখিয়ে দিল তার জীবন যাত্রা প্রণালী? মাকড়সার জাল বোনা দেখেছেন কি? কত অদ্ভুত তার এই জাল বোনা। কে শিখিয়ে দিল  এই পদ্ধতি? হয়তো বলবেন বিবর্তনের ধারায় শিখেছে!

সূধী পাঠক একবার ভেবে দেখুন, বিবর্তন কখনো নতুন কোন পদ্ধতি শিখাতে পারেনা, কারণ বিবর্তন প্রাণীর আঙ্গিক পরিবর্তন আনে, আর বিজ্ঞানের মতে এ কাজটি হয় জিন মিউটেসনের মাধ্যামে। জিন মিউটেশন কোন প্রজাতিতে পরিবর্তন আনতে পারে যৎ সামান্য, সেই কারনে দেখাযায় একই শ্রেণীতে বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে, আর এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে শ্রেণীগত সাধারন বৈশিষ্ট অপরিবর্তীত থাকে। জিন মিউটেশন কখনোই কোন প্রাণীকে বিবর্তনের ধারায় অন্য শ্রেণীতে রুপান্তর করতে পারেনা।   (সূত্র-Spider – Simple English Wikipedia, the free encyclopedia)

সূধী পাঠক, এবার আমরা দেখবো পবিত্র কোরআন এই মাকড়সা সম্পর্কে কি ইঙ্গিত দিয়েছে;

مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاء كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

 

২৯:৪১ যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত।

আরবী ভাষা সাহিত্যে মাকড়সা শব্দের মূল হল ‘আনকাব’। এই আনকাব শব্দ থেকে উদ্ভুত ‘আনকাবুত’  (মাকড়সা) শব্দটি দিয়ে এমনসব ক্ষুদ্র প্রাণীকে বুঝায় যারা তাদের শরীর থেকে নিঃসৃত রস দিয়ে চিকন রেশমী সূতার  তৈরী করে ও তা দিয়ে জাল বোনে।

এই আনকাবুত শব্দটিকে গুণিজনেরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন; তন্মধ্যে আল-ফেরা শব্দটিকে স্ত্রী-বাচক বলে আখ্যায়িত করেছেন, অনেক আরবীয় শব্দটিকে পুরুষবাচক বলেও ধরে নেয়, আল-আনকাবুত শব্দটির বহুবচন হল ‘আনকাবুতাত, আনাকেব, আনাকিব’; শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হল ‘ওনায়কেব’। ইয়েমেনী ভাষাতত্ত্বে মাকড়সা শব্দ হল ‘আনকাবাহ’। এভাবেও বলা যায় ‘আনকাবাআ’ এবং ‘আনকাবুহ’ এই ভাবে বিবর্তিত হয়ে আরবী ভাষায় একটা অতিরিক্ত তা যুক্ত হয়ে একবচনে স্ত্রী বাচক মাকড়সার রূপ নিয়েছে। ইবনে আল ইরাবী বলেন, আল আনকাব হল পুরুষ মাকড়সা, আর স্ত্রী মাকড়সা হল আল আনকাবা। তিনি আরও বলেন যে, আনকাব শব্দটি বিশাল অর্থে অর্থাৎ মাকড়সা বর্গকে বুঝায়। আলআনকাবুত শব্দটি যখন মাকরসা জাতিকে বুঝায়  তখন একে উুভয় লিঙ্গে ধরা যায়; আল মাবরাদ বলেছেন, আল আনকাবুত শব্দটি স্ত্রী বাচক,তবে একে পুরুষবাচক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এই সকল আলোচনা থেকে প্রকটভাবে ধরে নেওয়া যায় যে আলআনকাবুত শব্দটি মাকড়সার একবচনে স্ত্রী জাতিকে বুঝিয়েছে; যার বহুবচন হল ‘আনাকেব’।

(সূত্র-The Quran project on spider)

পবিত্র কোরআনে এই সূরার নামকরণের মধ্যে মাকড়সার জীবনযাত্রার একটা প্রচ্ছন্ন পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আমরা মাকড়সার বৈজ্ঞানিক আলোচনায় দেখেছি প্রধানত সকল প্রজাতিতেই স্ত্রী মাকড়সাই জাল বোনে তাদের বাসা তৈরী করে। মাকড়সারা দলবদ্ধ বা সামাজিক জীবন যাপন করেনা, প্রত্যেক মাকড়সাই আলাদাভাবে জীবনযাপন করে। অপরদিকে পবিত্র কোরআনে সূরা আল নাহল, সূরা আল-নমল এই উভয় সূরায়ই বহুবচনে ব্যবহৃত হয়েছে। আমরা বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনায় জেনেছি মৌমাছি ও পিঁপড়া উভয় প্রাণীই সামাজিক জীবন যাপন করে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলছেন, ‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত।’ এখানে কেন তিঁনি এই মাকড়সার উদাহরণ টেনেছেন? তিঁনি কি মানুষকে এক কথাই বলতে চেয়েছেন যে, মাকড়সার ঘর অতি দূর্বল? না! সূধী পাঠক, এখানে মহান আল্লাহ মানুষকে এই সাধারণ বিষয়টি জানানোর জন্যে এই

উদাহরণ দেননি; লক্ষ্য করুন আয়াতের শেষাংশে তিনি বলেছেন ‘যদি তারা জানত।’ এই অংশটুকু দিয়েই মহান স্রষ্টা ১৪ শত বছর আগেকার বুদ্ধিমান মানুষকে আহ্বান করেছেন মাকড়সার জীবন নিয়ে গবেষণা করতে। কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য কোরআন গবেষকগন এই আয়াতটিকে শুধুমাত্র উদাহরণ রূপেই ধরে নিয়েছেন। বিজ্ঞান যখন মাকড়সা সম্পর্কে জানতে পেল তথন আমাদের  উৎসাহী গবেষকগণ বলে উঠলেন এইতো  পবিত্র কোরআনের মহিমা- আনকাবুত শব্দটি দিয়ে মহান স্রষ্ট একবচনে স্ত্রী জাতীয় মাকড়সাকে বুঝিয়েছেন এই জন্যে যে একমাত্র স্ত্রী মাকড়সাই জাল বোনে আর মাকড়সারা প্রত্যেকে যার যার মত একাকী জীবন যাপন করে।

সূধী পাঠক, এই আয়াতে পবিত্র কোরআনের সূক্ষতার আরও একটি পরিচয় দেখুন।

اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاء

এই আয়াতাংশের শব্দগুলোর তরজমা করলে দেখা যায়,

اتَّخَذُوا  – ধরে নেয়,   مِن – বিপরীতে دُونِ  -পরিবর্তে اللَّهِ – আল্লাহ أَوْلِيَاء –রক্ষাকারী বা সাহায্যকারী; অংশটির তরজমা দাঁড়ায় ‘আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে সাহায্যকারী ধরে নেয়’, এখানে সাহায্যকারী (أَوْلِيَاء) শব্দটির ব্যবহার অত্যান্ত বিজ্ঞতা পূর্ণ। এই শব্দটি ولى  শব্দের বহুবচন যার অর্থ রক্ষ্যাকারী, সাহায্যকারী, অবিশ্বাসীরা যেহেতু মহান আল্লাহর পরিবর্তে অনেককে রক্ষাকারী ধরে নেই তাই আয়াতে বহুবচনটি অর্থাৎ أَوْلِيَاء   শব্দটি ব্যবহুত হয়েছে। এই সূক্ষ ব্যবহার একমাত্র মহান আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব।

965 Views

Comments